জামায়াতের ইসলামী প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদকে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় আবেগ নয়, প্রয়োজন আইনি প্রক্রিয়া ও সাংবিধানিক শৃঙ্খলা।
আইনের শাসনের ওপর জোর
বৃহস্পতিবার এক সেমিনারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, “কেউ কেউ বলছেন, প্রধান উপদেষ্টা এখন জনগণের আন্দোলনের দাবির ভিত্তিতে আইন প্রণয়ন বা কোনো আদেশ জারি করতে পারেন। কিন্তু এটি বিপ্লবী ও আবেগ-নির্ভর বক্তব্য—রাষ্ট্র এমনভাবে চলে না। রাষ্ট্র চলে আইন, বিধি ও সংবিধানের ভিত্তিতে।”
তিনি আরও জানান, বুধবার তিনি শুনেছেন যে প্রধান উপদেষ্টা ‘জাতীয় সনদ’কে এক ধরনের অসাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে পারেন। কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী সরকারের প্রধান হিসেবে প্রধান উপদেষ্টার এমন কোনো ক্ষমতা নেই।
আইন প্রণয়নের সাংবিধানিক সীমা
বিএনপি স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, কোনো আইন কেবল মন্ত্রিসভার অনুমোদন সাপেক্ষে প্রণয়ন করা যায়। সংসদ না থাকলে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশও জারি করতে পারেন। সরকারের প্রশাসনিক ক্ষমতার মধ্যে শুধু প্রজ্ঞাপন বা গেজেট নোটিশ জারি করার এখতিয়ার রয়েছে।
তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান জানান, যেন তারা এমন কোনো প্রস্তাব না দেয় যা জনগণকে সন্তুষ্টও করলেও আইনি ভিত্তিহীন থেকে যায়।
বিতর্ক এড়াতে সংযমের আহ্বান
সালাহউদ্দিন বলেন, “জুলাই সনদ নিয়ে যদি অসাংবিধানিক আদেশ জারি করা হয়, তবে তা নিয়ে ভবিষ্যতে বিতর্ক সৃষ্টি হবে; আমাদের রাজনৈতিক আবেগ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, যাতে এমন পরিস্থিতি আর না ঘটে।”
তিনি সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “আইনি কাঠামোর ক্রমানুসার শুরু হয় সংবিধান থেকে, এরপর সংসদ প্রণীত জাতীয় আইন, রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ, তারপরে আদেশ, বিধি ও প্রবিধান।”
জামায়াতের প্রস্তাব ও সালাহউদ্দিনের প্রতিক্রিয়া
সেমিনারটি আয়োজন করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (ইউট্যাব) জাতীয় প্রেসক্লাবে। এর আগে বুধবার জামায়াতে ইসলামী নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, তারা জামুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে বৈঠকে জুলাই জাতীয় সনদকে নির্বাহী আদেশে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন।
তাহেরের দাবি, এটি একটি ‘অসাংবিধানিক ব্যবস্থা’ হলেও বিশেষ পরিস্থিতিতে তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে। তিনি আরও বলেন, আইনগতভাবে সম্ভব হলে রাষ্ট্রপতি নয়, প্রধান উপদেষ্টাই সংস্কারসংক্রান্ত আদেশ জারি করবেন—এমন প্রস্তাবও তারা দিয়েছেন।
বিএনপির অবস্থান ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
সালাহউদ্দিন বলেন, একটি রাজনৈতিক দল যা জুলাই সনদ স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিল, এখন সেটিতে সই দেওয়ার সুযোগ খুঁজছে।
তিনি বলেন, “একটি দল বলেছে, বিএনপি অবশেষে জনচাপের মুখে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটে সম্মত হয়েছে—কিন্তু আসলে এই গণভোট প্রস্তাবটি প্রথমে বিএনপিই দিয়েছিল।”
তার মতে, দুটি দল ছাড়া বাকি সব দল বিএনপির গণভোট প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছে। “একটি দল স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল, আরেকটি এখন সনদে সই দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। তাদেরও কিছু দাবি রয়েছে,” যোগ করেন তিনি।
সনদের বর্তমান অবস্থা
জুলাই জাতীয় সনদটি স্বাক্ষরিত হয় ১৭ অক্টোবর, তবে ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল না। সালাহউদ্দিন জানান, সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা চলছে এবং তিনি আশা করছেন, পারস্পরিক দাবিগুলোর বিষয়ে একটি যৌক্তিক সমাধান পাওয়া যাবে।
মানসিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “জাতির এখন মানসিক সংস্কার প্রয়োজন। আমরা কনসেনসাস কমিশনে আইনি ও সাংবিধানিক সংস্কার নিয়ে আলোচনা করেছি। কিন্তু জাতীয়ভাবে মানসিক সংস্কার না হলে যত আইনই করি না কেন, তা বাস্তবে কার্যকর হবে না।”
তিনি আইনি সংস্কারের পাশাপাশি জাতীয় মানসিকতার রূপান্তরকেও জুলাই সনদের সফল বাস্তবায়নের পূর্বশর্ত হিসেবে দেখেন।
# জুলাই_সনদ, সালাহউদ্দিন_আহমেদ, জামায়াতে_ইসলামী, বিএনপি, মুহাম্মদ_ইউনুস, নির্বাহী_আদেশ, সংবিধান, রাজনীতি, সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 





















