সারাক্ষণ রিপোর্ট
অভ্যন্তরীণ প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে বড়সড় ঋণ পরিকল্পনা
ভিয়েতনাম সরকার অবকাঠামো ও প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে ৫০০ ট্রিলিয়ন ডং (প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার) মূল্যের একটি বিশাল ঋণ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এই পরিকল্পনায় দেশের ২১টি ব্যাংক অংশ নিচ্ছে। এমন ধরনের সরকার-সমর্থিত ঋণ কর্মসূচি ভিয়েতনামের ইতিহাসে বিরল।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা
২০২৫ সালে ভিয়েতনাম ৮% জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, যা ২০২৪ সালের ৭.১%-এর তুলনায় বেশি। এই প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য এমন এক সময় নির্ধারণ করা হয়েছে যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য উত্তেজনা দেশের প্রধান রপ্তানি বাজারে ঝুঁকি তৈরি করেছে।
বড় চার ব্যাংকের নেতৃত্বে ঋণ বিতরণ
ভিয়েতনামের চারটি প্রধান রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক – Vietcombank, VietinBank, BIDV এবং Agribank – প্রত্যেকে ৬০ ট্রিলিয়ন ডং ঋণ প্রদানের অঙ্গীকার করেছে। এ ছাড়া ১২টি ব্যাংক ২০ ট্রিলিয়ন ডং করে এবং আরও পাঁচটি ব্যাংক ৪ ট্রিলিয়ন ডং করে ঋণ দেবে।
কম সুদের হারে দুই বছর পর্যন্ত ঋণ সুবিধা
ভিয়েতনামের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপ-গভর্নর দাও মিন তু জানিয়েছেন, এই ঋণগুলোর সুদের হার বাজারদরের চেয়ে অন্তত ১% কম হবে (যা এপ্রিলে প্রায় ৬% ছিল)। এই স্বল্প সুদের সুবিধা কমপক্ষে দুই বছর পর্যন্ত থাকবে।
ব্যবহারিক চ্যালেঞ্জ: প্রকল্পের মানদণ্ড ও ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি
যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই ঋণ প্যাকেজ বাস্তবায়নে তৎপর, তবুও এটি কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে উপযুক্ত প্রকল্প নির্ধারণে মানদণ্ড তৈরি কঠিন। অন্যদিকে অবকাঠামো প্রকল্পে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রয়োজন হয়, যেখানে ব্যাংকগুলোর মূলধন তুলনামূলকভাবে স্বল্পমেয়াদি, ফলে তারল্য ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
রপ্তানি ও উৎপাদননির্ভর প্রবৃদ্ধির ধরন
ভিয়েতনামের অর্থনীতি মূলত রপ্তানি ও উৎপাদন খাতে নির্ভরশীল। বিশেষত চীনের বাইরে নতুন উৎপাদন হাব হিসেবে দেশটি বৈদেশিক বিনিয়োগ টানছে। তবে এপ্রিলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভিয়েতনামি পণ্যের ওপর ৪৬% শুল্ক আরোপ করেছেন, যা বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে অন্যতম সর্বোচ্চ।
মার্কিন বাণিজ্য আলোচনার পাশাপাশি ঘরোয়া বিনিয়োগে জোর
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনার পাশাপাশি, ভিয়েতনাম সরকার দেশীয় অর্থনীতির চালিকাশক্তি, বিশেষ করে অবকাঠামো ও প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে উদ্যোগ নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ফাম মিন চিন সোমবার বলেন, সরকার এ বছর আরও বেশি সরকারি বিনিয়োগ ছাড় করবে। তিনি জানান, আইনি জটিলতায় আটকে থাকা প্রায় ২৩৫ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প যদি কার্যকর হয়, তবে তা প্রবৃদ্ধিতে বড় অবদান রাখবে।
অবকাঠামোয় নতুন প্রকল্প অনুমোদন ও বেসরকারি খাতের আগ্রহ
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সেতু, রেলপথ, বিমানবন্দর, মহাসড়ক ও বন্দর নির্মাণসহ একাধিক অবকাঠামো প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। এটি প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ টানার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। দেশটির অন্যতম বৃহৎ কোম্পানি Vingroup উচ্চগতির রেলপথ ও বন্দর নির্মাণকে তাদের পরবর্তী কোর ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করেছে।
প্রযুক্তি ও গবেষণায় কৌশলগত অগ্রাধিকার
ভিয়েতনাম সরকার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তিকে ভবিষ্যতের প্রবৃদ্ধির প্রধান খাত হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে বাজেটের কমপক্ষে ৩% ব্যয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
Leave a Reply