সারাক্ষণ রিপোর্ট
ভারত দাবি করলো পাকিস্তানি হামলা প্রতিহত করার
ভারত দাবি করেছে, পাকিস্তানের ছোঁড়া ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা তারা সফলভাবে প্রতিহত করেছে। হামলাগুলো লক্ষ্য করেছিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর, পাঞ্জাব ও রাজস্থানের সামরিক স্থাপনাগুলোকে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ভাষ্য অনুযায়ী, আটটি পাকিস্তানি ক্ষেপণাস্ত্র তারা মাঝপথেই ধ্বংস করে দিয়েছে।
কাশ্মীরের জম্মু শহরের বাসিন্দারা জানান, তারা বিস্ফোরণের শব্দ ও আকাশে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের চলাচল দেখতে পান। এ সময় শহরজুড়ে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থা বিরাজ করছিল।
সীমান্তজুড়ে বিস্ফোরণ, গোলাবর্ষণ, আতঙ্ক
ভারতীয় বাহিনী জানায়, পাকিস্তান পাঞ্জাব রাজ্যের পঠানকোট বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করে, যা সীমান্ত থেকে মাত্র ২০ মাইল দূরে অবস্থিত। রাজস্থানের জয়সলমের ও বিকানের এলাকাতেও গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। তবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাবি, সব হামলা প্রতিহত করা হয়েছে এবং কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
বুধবারের ভারতীয় হামলার পাল্টা প্রতিক্রিয়া
বুধবার ভোরে ভারত পাকিস্তানে বিমান হামলা চালায়, যাতে ৩১ জন নিহত হয়। এটি গত কয়েক দশকের মধ্যে পাকিস্তানে সবচেয়ে বড় আকাশ হামলা বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ। তিনি একে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ বলেও উল্লেখ করেন।
পাকিস্তানের অভিযোগ, ভারতের প্রায় ২৫টি ড্রোন বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত পাকিস্তানের ভেতরে প্রবেশ করে, যাতে দুইজন বেসামরিক নাগরিক নিহত ও চারজন সৈন্য আহত হন। দেশটির সরকার এটিকে ‘উসকানিমূলক হামলা’ বলে বর্ণনা করে প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দেয়।
আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের আহ্বান
বিশ্ব নেতারা দুই দেশের মাঝে উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ভারত ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানান। ইরান ও সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাও বৃহস্পতিবার দিল্লিতে পৌঁছান।
পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা
ভারতের দাবি, পাকিস্তান ১৫টি সামরিক স্থাপনায় হামলার চেষ্টা করেছিল, যার মধ্যে ছিল অমৃতসর, শ্রীনগর ও চণ্ডীগড়। ভারত জানায়, তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সব আক্রমণ প্রতিহত করেছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আরও জানায়, পাকিস্তানের লাহোর শহরের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘নিষ্ক্রিয়’ করা হয়েছে।
পাকিস্তান এসব অভিযোগকে ‘মিথ্যা ও কল্পিত’ বলে নাকচ করেছে। এক উচ্চপদস্থ পাকিস্তানি নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, “প্রতিশোধমূলক হামলা খুব শিগগিরই আসবে।”
সীমান্তে সতর্কতা ও সাধারণ জীবনযাত্রার বিপর্যয়
ভারতের রাজস্থান ও পাঞ্জাবে পুলিশ সদস্যদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে এবং সন্দেহভাজনদের গুলি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গুরদাসপুরে রাতভর ব্ল্যাকআউট করা হয় এবং সীমান্তবর্তী স্কুলগুলো বন্ধ করে মহড়া ও নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
উভয় দেশে ফ্লাইট বাতিল ও বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাকিস্তানে করাচি, লাহোর ও সিয়ালকোটের সব ফ্লাইট স্থগিত করা হয়। ভারতের উত্তরের ২০টির বেশি বিমানবন্দর শনিবার পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে, সব হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং চিকিৎসক ও কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
সীমান্তবাসীর দুঃখগাথা: “সব কিছু হারিয়ে ফেলেছি”
কাশ্মীর সীমান্তবর্তী অঞ্চলে হাজার হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালে সালামাবাদ গ্রামে ফিরে এসে তালিব হোসেন দেখেন, তার বাড়ি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, “সব হারিয়ে ফেলেছি। এখন শুধু ভরসা আল্লাহর রহমত।”
Leave a Reply