ইয়ুননানের তিছিং টিবেটান স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ইয়াংলা শহর। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তিন হাজার মিটারেরও বেশি উঁচুতে এ অঞ্চল। সেখানে বাস প্রায় পাঁচ হাজার ৪০০ জন বাসিন্দার। কিছুটা দুর্গম এ অঞ্চলে গত ৪ বছর ধরে একনাগাড়ে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন ৩২ বছর বয়সী ডা. নাশেং।
টিবেটান চিকিৎসায় ছিংহাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে নাশেং ফিরে আসেন নিজের এলাকায়। এরপর থেকে ইয়াংলা টাউন ছেড়ে আর যাননি।
ছোটবেলায় দেখেছেন গ্রামের মানুষের চিকিৎসা পেতে কত বাধার মুখে পড়তে হতো।
নাশেং বলেন, ‘আমি দেখেছি আমার পরিবারের জন্য এ গহীন অঞ্চলে চিকিৎসা সেবা পাওয়া কতটা কঠিন ছিল—দীর্ঘ ভ্রমণ, ভাষার বাধা এবং সাংস্কৃতিক পার্থক্য এটিকে আরও কঠিন করে তুলেছিল। গ্রামের অনেক বয়স্ক গ্রামবাসী কেবল তিব্বতি ভাষায় কথা বলেন।’ এসব দেখেই চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছা জন্মায় তার।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ইয়াংলার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগ দেন নাশেং। সেখানে পৌঁছাতে তাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পাহাড়-নদী পেরিয়ে যেতে হয়। ছোট একটি রুমেই করা হয় থাকার ব্যবস্থা।
টাউনে একটি বারবিকিউ রেস্তোরাঁ ছাড়া বিনোদনের আর তেমন কিছুই ছিল না। তারপরও কাজ ছেড়ে যাওয়ার কথা কখনও ভাবেননি নাশেং। রোগীদের চিকিৎসা আর তাদের সঙ্গে থেকে নানা অভিজ্ঞতা অর্জন করে গেছেন হাসিমুখে।
নাশেংয়ের প্রথম রোগী ছিলেন এক বয়স্ক লোক, যার জয়েন্ট বিকৃত ছিল। আরেক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পাশে থেকে ওই রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে সারিয়ে তুলেছিলেন নাশেং।
সে দিনগুলোর কথা এখনও মনে আছে নাশেংয়ের। তিনি বলেন, ‘তখন মনে হয়েছিল এখানকার মানুষজনকে সেবা দিতে হলে আমাকে আরও অনেক কিছু শিখতে হবে।’
ইয়াংলা টাউনের গ্রামবাসীরা ছোট ছোট গ্রামে প্রায় এক হাজার বর্গ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে ছড়িয়ে আছে। তাদের সবার কাছে স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করতে প্রতি মাসেই বিভিন্ন গ্রামের উদ্দেশে মোবাইল ফ্রি ক্লিনিক চালান নাশেং। একবার কাদা ধসে পড়ার পর চিকিৎসা সামগ্রী কাঁধে নিয়ে পাহাড় ডিঙিয়েও যেতে হয়েছিল তাকে।
২০২২ সালে নাশেংয়ের প্রস্তাবে চালু হয় একটি নতুন হেলথ স্টেশন। ২০২৩ সালে গরম পানিতে ভেষজ উপকরণের একটি স্নানঘরও তৈরি করেন তিনি ও তার দল।
২০২৪ সালে রক্তমোক্ষণ ও তিব্বতীয় স্টিক থেরাপির প্রশিক্ষণ নেন, যা গাউট, জয়েন্ট পেইন ও জমাট কাঁধের চিকিৎসায় কার্যকর।
ইয়াংলার বাসিন্দাদের কাছে নাশেংও এখন জনপ্রিয় মুখ। একবার এক বৃদ্ধা তাকে লুকাট ফল উপহার দেন—যা ছিল বেশ দুর্লভ। এক বসন্ত উৎসবে, চিকিৎসক দলকে আমন্ত্রণ জানিয়ে গ্রামবাসীরা একত্রে নেচে-গেয়ে উৎসবও পালন করেন।
নাশেং বলেন, ‘আমরা চুলার চারপাশে জড়ো হয়েছিলাম, সংগীতের তালে নাচছিলাম। ওটা ছিল আমার দেখা সবচেয়ে খাঁটি টিবেটান ভোজ।’
নাশেং বলেন, ‘আমি আরও শিখতে চাই। তবে যেখানেই থাকি, এই জায়গায় আমি বারবার ফিরে আসব—এটাই আমার ঘর।’
সিএমজি বাংলা