০২:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
ইনকিলাব মঞ্চের ডাকে সারাদেশে দোয়া ও প্রতিবাদ কর্মসূচি গাজীপুরে ট্রেনের ধাক্কায় দুই নারী ও এক কিশোরীর মৃত্যু মেঘনা নদীতে ঘন কুয়াশায় দুই লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত চার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৭৮) রাশিয়া, চীন ও ইরানের মাঝের অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাবর্তন দেশবাসীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানালেন তারেক রহমান নরওয়ের বড়দিনে বিতর্কিত খাবার লুটেফিস্কের প্রত্যাবর্তন, ঐতিহ্যেই ফিরছে স্বাদ প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৪৫) নিউজিল্যান্ডে গ্যাং প্রতীক নিষিদ্ধ: রাস্তায় শান্তি, কিন্তু অপরাধ কি সত্যিই কমল সৌদিতে বিরল তুষারপাতের পর প্রশ্ন: সংযুক্ত আরব আমিরাতেও কি আবার তুষারপাত সম্ভব?

রণক্ষেত্রে (পর্ব-৪৭)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫
  • 206

আর্কাদি গাইদার

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

ঘোড়ার খুরের শব্দ, ঘোড়সওয়ারের নালের টুংটাং কিংবা ঘোড়ার চিহিডাক একদম না-করতে দিয়ে চুপিচুপি এগোনোর পক্ষপাতী ছিল ফেদিয়া। ঘোড়ার ডাক বন্ধ করতে তার মুখে একটা থাবড়া কষিয়ে দিতে কিংবা ঘোড়সওয়ারদ্রের ফিসফিসানি বন্ধ করতে তাদের পিঠে চাবুক চালাতে একটুও ইতস্তত করত না ও। এইভাবে ফেদিয়ার দলের ঘোড়ারা হঠাৎ-হঠাৎ না-ডেকে উঠতে শিক্ষা পেয়েছিল, আর ওর ঘোড়সওয়াররা শিখেছিল একটু টু’শব্দ না করে জিনে চেপে বসে থাকতে। ওর স্কাউট-দলের সামনে-সামনে দুকি-চালে-চলা ঘোড়ার ঘন ঝাঁপালো কেশরের ওপর অল্প-একটু কু’জো-হয়ে-বসে-থাকা ফেদিয়াকে দেখলে মনে হত যেন একটা শিকারী পি’পড়েভুক ঘাসে আটকে-পড়া নধর মাছির দিকে তাক করে হিলবিল করে এগিয়ে চলেছে।

কিন্তু যদি কখনও শত্রুর পাহারাদাররা ওদের আঁচ পেয়ে যেত আর ভয় পেয়ে হাঁকডাক শুরু করত, তাহলে ফেদিয়ার আঁটোসাঁটো ছোট্ট বাহিনীটি হপহপ আওয়াজ আর বিকট চিৎকার করতে-করতে রাইফেল থেকে এলোপাতাড়ি গুলি আর এদিক-ওদিক বোমা ছুড়তে-ছুড়তে হঠাৎ আক্রমণ করে বসত শ্বেতরক্ষীদের।

ওদিকে তখনও হয়তো শ্বেতরক্ষীরা ভ্যাবাচাকা-খাওয়া অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারে নি, অনেকেই তখনও টানাটানি করে ট্রাউজার্স’ পরতে ব্যস্ত, কিংবা ওদের মেশিনগান-চালিয়ে ঘুমচোখে উঠে তখনও হয়তো গুলির ফিতে লাগিয়ে উঠতে পারে নি। একমাত্র ওই সময়ই ফেদিয়া প্রচণ্ড হৈ-হল্লা করতে ভালোবাসত। প্রচন্ড বেগে ছুটন্ত ঘোড়ার পিঠ থেকে ছোড়া-বুলেট যদি লক্ষ্যবস্তুতে না লাগত, কিংবা ঘাসের ওপর এলোপাতাড়ি ছোড়া বোমার আওয়াজে ভয় পেয়ে যদি মুরগি আর পুরুষ্টু হাঁসগুলো প্রাণের দায়ে উড়ে বাড়ির চিমনির ওপর গিয়ে পড়ত, তাতে ফেদিয়ার কিছু আসত-যেত না, যথেষ্ট হট্টগোল তুলে সবাইকে ভয় পাওয়াতে পারলেই ও ছিল খুশি।

এ-সব ক্ষেত্রে ওর উদ্দেশ্য ছিল হতভম্ব শত্রুর মনে এই ধারণা ঢুকিয়ে দেয়া যে লাল ফৌজের অসংখ্য সেপাই গ্রামে ঢুকে পড়েছে। ওর মতলব ছিল, রাইফেলের বলটুতে কার্তুজ পুরতে গিয়ে শত্রুপক্ষের ঘাবড়ে-যাওয়া সেপাইদের আঙুলগুলো কেমন এদিক-ওদিক হাতড়ে বেড়াবে আর কাঁপতে থাকবে, তাড়াহুড়ো করে গুছিয়ে-নেয়া মেশিনগানটা গুলির ফিতে কুচকে থাকার জন্যে চলতে-চলতে কেমন বন্ধ হয়ে যাবে, আধঘুমন্ত-অবস্থায় হতবুদ্ধি সৈন্যরা ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে রাইফেল ফেলে, ভয়ে বেড়ার দিকে ছুটতে ছুটতে কেমন পাগলের মতো চে’চাবে: ‘লালজুজু এসে গ্যাচে! ঘিরে ফেলেচে আমাদের!’ তা-ই দেখে দারুণ মজা পাওয়া যাবে।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

ইনকিলাব মঞ্চের ডাকে সারাদেশে দোয়া ও প্রতিবাদ কর্মসূচি

রণক্ষেত্রে (পর্ব-৪৭)

০৮:০০:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

আর্কাদি গাইদার

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

ঘোড়ার খুরের শব্দ, ঘোড়সওয়ারের নালের টুংটাং কিংবা ঘোড়ার চিহিডাক একদম না-করতে দিয়ে চুপিচুপি এগোনোর পক্ষপাতী ছিল ফেদিয়া। ঘোড়ার ডাক বন্ধ করতে তার মুখে একটা থাবড়া কষিয়ে দিতে কিংবা ঘোড়সওয়ারদ্রের ফিসফিসানি বন্ধ করতে তাদের পিঠে চাবুক চালাতে একটুও ইতস্তত করত না ও। এইভাবে ফেদিয়ার দলের ঘোড়ারা হঠাৎ-হঠাৎ না-ডেকে উঠতে শিক্ষা পেয়েছিল, আর ওর ঘোড়সওয়াররা শিখেছিল একটু টু’শব্দ না করে জিনে চেপে বসে থাকতে। ওর স্কাউট-দলের সামনে-সামনে দুকি-চালে-চলা ঘোড়ার ঘন ঝাঁপালো কেশরের ওপর অল্প-একটু কু’জো-হয়ে-বসে-থাকা ফেদিয়াকে দেখলে মনে হত যেন একটা শিকারী পি’পড়েভুক ঘাসে আটকে-পড়া নধর মাছির দিকে তাক করে হিলবিল করে এগিয়ে চলেছে।

কিন্তু যদি কখনও শত্রুর পাহারাদাররা ওদের আঁচ পেয়ে যেত আর ভয় পেয়ে হাঁকডাক শুরু করত, তাহলে ফেদিয়ার আঁটোসাঁটো ছোট্ট বাহিনীটি হপহপ আওয়াজ আর বিকট চিৎকার করতে-করতে রাইফেল থেকে এলোপাতাড়ি গুলি আর এদিক-ওদিক বোমা ছুড়তে-ছুড়তে হঠাৎ আক্রমণ করে বসত শ্বেতরক্ষীদের।

ওদিকে তখনও হয়তো শ্বেতরক্ষীরা ভ্যাবাচাকা-খাওয়া অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারে নি, অনেকেই তখনও টানাটানি করে ট্রাউজার্স’ পরতে ব্যস্ত, কিংবা ওদের মেশিনগান-চালিয়ে ঘুমচোখে উঠে তখনও হয়তো গুলির ফিতে লাগিয়ে উঠতে পারে নি। একমাত্র ওই সময়ই ফেদিয়া প্রচণ্ড হৈ-হল্লা করতে ভালোবাসত। প্রচন্ড বেগে ছুটন্ত ঘোড়ার পিঠ থেকে ছোড়া-বুলেট যদি লক্ষ্যবস্তুতে না লাগত, কিংবা ঘাসের ওপর এলোপাতাড়ি ছোড়া বোমার আওয়াজে ভয় পেয়ে যদি মুরগি আর পুরুষ্টু হাঁসগুলো প্রাণের দায়ে উড়ে বাড়ির চিমনির ওপর গিয়ে পড়ত, তাতে ফেদিয়ার কিছু আসত-যেত না, যথেষ্ট হট্টগোল তুলে সবাইকে ভয় পাওয়াতে পারলেই ও ছিল খুশি।

এ-সব ক্ষেত্রে ওর উদ্দেশ্য ছিল হতভম্ব শত্রুর মনে এই ধারণা ঢুকিয়ে দেয়া যে লাল ফৌজের অসংখ্য সেপাই গ্রামে ঢুকে পড়েছে। ওর মতলব ছিল, রাইফেলের বলটুতে কার্তুজ পুরতে গিয়ে শত্রুপক্ষের ঘাবড়ে-যাওয়া সেপাইদের আঙুলগুলো কেমন এদিক-ওদিক হাতড়ে বেড়াবে আর কাঁপতে থাকবে, তাড়াহুড়ো করে গুছিয়ে-নেয়া মেশিনগানটা গুলির ফিতে কুচকে থাকার জন্যে চলতে-চলতে কেমন বন্ধ হয়ে যাবে, আধঘুমন্ত-অবস্থায় হতবুদ্ধি সৈন্যরা ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে রাইফেল ফেলে, ভয়ে বেড়ার দিকে ছুটতে ছুটতে কেমন পাগলের মতো চে’চাবে: ‘লালজুজু এসে গ্যাচে! ঘিরে ফেলেচে আমাদের!’ তা-ই দেখে দারুণ মজা পাওয়া যাবে।