১১:১৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

রণক্ষেত্রে (পর্ব-৬০)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫
  • 73

আর্কাদি গাইদার

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

‘এমনি কত বছর তো ফৌজে কাম করে কাটালাম, জার্মান যুদ্ধের আদ্ধেক সময়টাই তো ফৌজে কাটিয়েচি, কিন্তু আমার জীবনে কখনও বেদে সিপাই দেখিনি,’ বলেছিল ভাস্কা স্মাকভ। ‘তাতার দেখেচি, মোর্দভীয়দের দেখেচি, এমন কি চুভাশও দেখেচি, কিন্তু বেদে একটাও না। যদি আমারে শুধোও তো কই, ওরা নোক সুবিধের হয় না বাপু। কারা আবার ওই বেদেরা? ধর না কেন, ওরা না-ফলায় ফসল, না-করে কোনো কাজকম্মো কিংবা ব্যবসা, ওদের একমাত্তর কাজ হল ঘোড়া চুরি, আর ওদের মেয়ে-লোকরা ভালো মানিষদের ঠকিয়ে বেড়ায়। ও ছোঁড়া যে কী কত্তি এখেনে এয়েচে তা ভগাই জানে।

স্বাধীনতার কথাই যদি কও তো বলি, ওদের চেয়ে দুনিয়ায় স্বাধীন আর কে’ আচে? জমিজায়গা ওদের রক্ষে কত্তে হয় না। জমি লিয়ে করবে কী ওরা? মজুরদের সঙ্গেই বা সম্পক্ক কী ওদের? তাইলে? এ-ঝামেলায় মাথা গলিয়ে লাভ কী ছোঁড়ার? সেই জন্যিই আমার মনে লিচ্চে, এর মধ্যি লিচ্চয় অন্য কথা আচে। কী মতলবে ও এয়েচে তা কে জানে।’

‘ও-ও যে বিপ্লবের পক্ষে নয় তা তুমি জানলে কী করে?’

‘জীবন থাকতি লয়। বেদে যে বিপ্লবের পক্ষে থাকতি পারে এ আমার জীবন থাকতি পেত্যয় যাবে না। আগের দিনে ঘোড়া চুরির জন্যি মার খেত ওরা, আর বিপ্লবের পরেও ওই জন্যি ওরা মার খেয়ে যাবে।’

‘কিন্তু বিপ্লবের পর তো ওরা কিছু চুরি নাও করতে পারে?’

‘কে জানে,’ বাঁকা হাসি হেসে বলেছিল ভাস্স্কা। ‘আমাদের গাঁয়ে নোকে বেদেদের মুগুর-পেটা করেচে কত, লাঠি দিয়েও কত পিটিয়েচে। তো তাতে হয়েচে কাঁ? স্বভাব কিছু শুধরেচে তাতে? আবার তারা ফাঁক পেলেই চুরি-বাটপাড়ি করেচে। তা, বিপ্লব হলেই ওদের ঘোড়া-রোগ সেরে যাবে ভাবলে কেমনে?’

এতক্ষণ চুবুক চুপ করে ছিলেন। এখন মুখ খুললেন। বললেন, ‘তুই তো আচ্ছা বোকা রে ভাস্কা। তোর ওই কু’ড়ে আর ঘোড়ার বাইরে একটা জিনিসও যদি চোখে পড়ে তো কী বলেচি। তোর মতে, এত বড় একটা বিপ্লবের মানে হল, তোর জমিদারের সম্পত্তির একটা টুকরো পাওয়া আর জমিদারের খাস বন থেকে কয়েক খান কাঠ হাতানো। এই তো? আর সোভিয়েতের সভাপতি কেবল গেরাম-পের ধানের জায়গায় বসবে আর জীবনটা আগে যেমন চলছিল তেমনই চলবে। তাই না?’

রণক্ষেত্রে (পর্ব-৬০)

০৮:০০:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫

আর্কাদি গাইদার

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

‘এমনি কত বছর তো ফৌজে কাম করে কাটালাম, জার্মান যুদ্ধের আদ্ধেক সময়টাই তো ফৌজে কাটিয়েচি, কিন্তু আমার জীবনে কখনও বেদে সিপাই দেখিনি,’ বলেছিল ভাস্কা স্মাকভ। ‘তাতার দেখেচি, মোর্দভীয়দের দেখেচি, এমন কি চুভাশও দেখেচি, কিন্তু বেদে একটাও না। যদি আমারে শুধোও তো কই, ওরা নোক সুবিধের হয় না বাপু। কারা আবার ওই বেদেরা? ধর না কেন, ওরা না-ফলায় ফসল, না-করে কোনো কাজকম্মো কিংবা ব্যবসা, ওদের একমাত্তর কাজ হল ঘোড়া চুরি, আর ওদের মেয়ে-লোকরা ভালো মানিষদের ঠকিয়ে বেড়ায়। ও ছোঁড়া যে কী কত্তি এখেনে এয়েচে তা ভগাই জানে।

স্বাধীনতার কথাই যদি কও তো বলি, ওদের চেয়ে দুনিয়ায় স্বাধীন আর কে’ আচে? জমিজায়গা ওদের রক্ষে কত্তে হয় না। জমি লিয়ে করবে কী ওরা? মজুরদের সঙ্গেই বা সম্পক্ক কী ওদের? তাইলে? এ-ঝামেলায় মাথা গলিয়ে লাভ কী ছোঁড়ার? সেই জন্যিই আমার মনে লিচ্চে, এর মধ্যি লিচ্চয় অন্য কথা আচে। কী মতলবে ও এয়েচে তা কে জানে।’

‘ও-ও যে বিপ্লবের পক্ষে নয় তা তুমি জানলে কী করে?’

‘জীবন থাকতি লয়। বেদে যে বিপ্লবের পক্ষে থাকতি পারে এ আমার জীবন থাকতি পেত্যয় যাবে না। আগের দিনে ঘোড়া চুরির জন্যি মার খেত ওরা, আর বিপ্লবের পরেও ওই জন্যি ওরা মার খেয়ে যাবে।’

‘কিন্তু বিপ্লবের পর তো ওরা কিছু চুরি নাও করতে পারে?’

‘কে জানে,’ বাঁকা হাসি হেসে বলেছিল ভাস্স্কা। ‘আমাদের গাঁয়ে নোকে বেদেদের মুগুর-পেটা করেচে কত, লাঠি দিয়েও কত পিটিয়েচে। তো তাতে হয়েচে কাঁ? স্বভাব কিছু শুধরেচে তাতে? আবার তারা ফাঁক পেলেই চুরি-বাটপাড়ি করেচে। তা, বিপ্লব হলেই ওদের ঘোড়া-রোগ সেরে যাবে ভাবলে কেমনে?’

এতক্ষণ চুবুক চুপ করে ছিলেন। এখন মুখ খুললেন। বললেন, ‘তুই তো আচ্ছা বোকা রে ভাস্কা। তোর ওই কু’ড়ে আর ঘোড়ার বাইরে একটা জিনিসও যদি চোখে পড়ে তো কী বলেচি। তোর মতে, এত বড় একটা বিপ্লবের মানে হল, তোর জমিদারের সম্পত্তির একটা টুকরো পাওয়া আর জমিদারের খাস বন থেকে কয়েক খান কাঠ হাতানো। এই তো? আর সোভিয়েতের সভাপতি কেবল গেরাম-পের ধানের জায়গায় বসবে আর জীবনটা আগে যেমন চলছিল তেমনই চলবে। তাই না?’