সারাক্ষণ রিপোর্ট
ঢাকার বনানী, গুলশান, বারিধারা ও ধানমন্ডির মতো অভিজাত এলাকাগুলোর রেস্তোরাঁগুলো একসময় শহরের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এসব এলাকায় রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা ক্রেতা সংকটে ভুগছেন। এই সংকটের পেছনে রয়েছে অর্থনৈতিক মন্দা, নিরাপত্তা উদ্বেগ এবং প্রশাসনিক কড়াকড়ির সম্মিলিত প্রভাব।
অর্থনৈতিক চাপ ও ব্যয় সংকোচন
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ব্যয় সংকোচনের প্রবণতা বেড়েছে। এর ফলে রেস্তোরাঁগুলোতে ক্রেতার সংখ্যা ৩০–৩৫% পর্যন্ত কমে গেছে। বিশেষ করে ধানমন্ডি এলাকায়, যেখানে অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত হয়েছে, সেখানে ছাত্রছাত্রীদের অভাবে রেস্তোরাঁগুলো আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
নিরাপত্তা উদ্বেগ ও রাতের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি
২০২৪ সালের মার্চে বেইলি রোডের একটি রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪৬ জনের মৃত্যু হয়, যা নগরবাসীর মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করে। এই ঘটনার পর থেকে অনেকেই রাতে বাইরে খেতে যেতে ভয় পাচ্ছেন। রাতের বেলায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও অপরাধের আশঙ্কাও মানুষের বাইরে যাওয়ার ইচ্ছাকে নিরুৎসাহিত করছে।
প্রশাসনিক কড়াকড়ি ও রেস্তোরাঁ বন্ধ
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় অভিযান চালাচ্ছে। অনুমোদনহীন ছাদ রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, যা ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে। গুলশান-বারিধারা এলাকায় ৫৫০টিরও বেশি অবৈধ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা হয়েছে, যার ফলে অনেক রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গেছে।
রেস্তোরাঁ মালিকদের অভিমত
বনানীর একটি রেস্তোরাঁর মালিক বলেন, “নিয়মিত ক্রেতা না থাকায় আমাদের আয় কমে গেছে। নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক কড়াকড়ির কারণে ব্যবসা চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।”
ধানমন্ডির আরেকজন রেস্তোরাঁ মালিক জানান, “বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলে যাওয়ায় ছাত্রছাত্রীদের ভিড় কমে গেছে। এখন খরচ চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।”
সমাধানের পথ
রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা চান, প্রশাসন যেন স্পষ্ট নির্দেশনা ও সহায়তা প্রদান করে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম সরবরাহ করা হোক, এবং ব্যবসা পরিচালনায় সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা হোক।