এক সময় ওভাল অফিসে নিমন্ত্রণ ছিল বিশ্বনেতাদের জন্য সম্মানের শীর্ষস্থল। কিন্তু ৭৮‑বছর বয়সী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে সেটিই রূপ নিয়েছে উত্তপ্ত রাজনৈতিক ফাঁদে। সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অধীনে যেখানে স্বল্পমেয়াদি ফটো সেশন হতো, সেখানে ট্রাম্প ঘণ্টাব্যাপী টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচারে অতিথিদের স্নায়ুযুদ্ধে ফেলছেন।
‘জেলেনস্কি‑মুহূর্ত’ এড়ানোর দৌড়
এই প্রবণতা শুরু হয় ২৮ ফেব্রুয়ারি, যখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়া–সংক্রান্ত বিতর্কে হঠাৎ টার্গেটে পরিণত হন। ট্রাম্পের রাশিয়া‑ঘেঁষা অবস্থান প্রকাশ পেয়ে লালমুখে তিনি জেলেনস্কিকে অকৃতজ্ঞ বলেছিলেন। উপ‑রাষ্ট্রপতি জেডি ভ্যান্স উত্তেজনা বাড়ান—যা অনেকেই দেখেন পূর্বপরিকল্পিত ‘অ্যামবুশ’ হিসেবে। সেই থেকে বিশ্বের রাজনয়ীকরা ‘জেলেনস্কি‑কাণ্ড’ এড়াতে মরিয়া।
রামাফোসার সাজানো সাক্ষাৎ
বুধবার দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা গলফার এরনি এলস ও রেটিফ গুসেনকে সঙ্গে নিয়ে ট্রাম্পের সামনে হাজির হন, লক্ষ্য ছিল ট্রাম্পের তথাকথিত ‘শ্বেত কৃষক গণহত্যা’ দাবি নরম করা। কিন্তু ট্রাম্প হঠাৎ আলো নিভিয়ে পাশের পর্দায় ‘কৃষক মারো’ স্লোগানধারী ভিডিও চালিয়ে দেন। বিস্মিত হলেও রামাফোসা তুলনামূলক শান্ত থেকে যুক্তি তুলে ধরেন; অন্তত জেলেনস্কির মতো তাঁকে ওভাল অফিস থেকে বেরিয়ে যেতে হয়নি।
যাঁরা সামলে নিলেন
অনেকে ঘাম ছুটিয়েও বিপদ কাটিয়েছেন। কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি ট্রাম্পের ‘কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১‑তম রাজ্য’ করার প্রস্তাব দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার রাজা চার্লস তৃতীয়ের চিঠি দেখিয়ে ট্রাম্পকে আপ্লুত করেন, আর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ তাঁর ‘ব্রোম্যান্স’ অব্যাহত রাখেন।
ঘনিষ্ঠরাও ধরাশায়ী
ট্রাম্পপন্থী নেতারা সাধারণত বাড়তি সুবিধা পান। উদাহরণস্বরূপ, এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নাইব বুকেলে মেগা‑কারাগারে অভিবাসী নেয়ার চুক্তি করে ওভাল অফিসে উষ্ণ অভ্যর্থনা পান। কিন্তু ঘনিষ্ঠরাও সব সময় নিরাপদ নন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দ্বিতীয় সফরে এসে হতবাক হন, যখন ট্রাম্প হঠাৎ ইরানের সঙ্গে সরাসরি কথোপকথন শুরুর ঘোষণা দেন।
রিয়েলিটি শো রাষ্ট্রপতি
ট্রাম্প নিজের শাসনামলকে ক্রমেই রিয়েলিটি শো‑এর মতো মনে করছেন। জেলেনস্কি বৈঠকের পরই তিনি বলেছিলেন, ‘টেলিভিশনে দারুণ চলবে।’ রামাফোসা সাক্ষাতের পর উপদেষ্টা জেসন মিলার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স‑এ একাধিক পর্দায় দৃশ্য দেখিয়ে লেখেন, ‘এটা এখন সারা বিশ্ব দেখছে—রেটিংস সোনা!’
ওভাল অফিসের সোনালি সাজে অতিথি বসার সোফা যেমন ঝলমলে, পরিবেশটি ততটাই উত্তপ্ত ও অনিশ্চিত। আর আমন্ত্রণপত্র হাতে পেলেও এখন বিশ্বনেতারা জানেন—হোয়াইট হাউসের সেই কক্ষটি স্নায়ুর ওপর কঠিন পরীক্ষা।