১০:৫০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা আজ সন্ধ্যায় কিংবা আগামীকাল ওয়ার্নার ব্রস অধিগ্রহণে প্যারামাউন্টের শত্রুভাবাপন্ন উদ্যোগ, কাঁপছে এশিয়ার স্ট্রিমিং বাজারও টেলেঙ্গানায় ৩ বিলিয়ন ডলার ঢালছে ভিয়েতনামের ভিংগ্রুপ, গড়বে স্মার্ট সবুজ নগর বেন অ্যান্ড জেরিস বোর্ডে অস্থিরতা: ইউনিলিভারের চাপের মধ্যেও সরে যাওয়ার ইচ্ছা নেই অনুরাধা মিত্তলের নাইজেরিয়ায় ধান–মকাই–গমের দামে ধস: কোটি কোটি নাইরা ক্ষতিতে কৃষকেরা শুষ্ক মৌসুমের চাষে অনাগ্রহ মিশরের ইডেক্স অস্ত্র প্রদর্শনীতে ড্রোন দখলে বিশ্ব কোম্পানিগুলোর দৌড় চীনে এইচ২০০ চিপ বিক্রিতে ছাড়ের পথ, নভিডিয়াকে নতুন শর্ত দিল ওয়াশিংটন ঢাকার লালবাগে যুবককে ছুরিকাঘাতে হত্যা ঢাবি ভর্তি পরীক্ষা: চারুকলা অনুষদে মাত্র ১১ শতাংশ শিক্ষার্থীর উত্তীর্ণ ভারত থেকে ৫০ হাজার টন চাল কিনছে সরকার, সরবরাহে থাকছে নিউট্রিঅ্যাগ্রো ওভারসিজ ওপি–সি প্রাইভেট লিমিটেড

আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের নেতৃত্ব নিয়ে নতুন প্রতিদ্বন্দ্বিতার সময়

নেতৃত্ব পরিবর্তনের মোড়কে দ্বন্দ্ব

আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (AfDB)-এর পরবর্তী সভাপতির নির্বাচন হতে যাচ্ছে ২৯ মে, এক রকম গোপনীয়তা ও আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মিশ্রণে। ৬০ বছরের পুরনো এই উন্নয়ন ব্যাংকটি এখন আফ্রিকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে—বিশেষ করে যখন দাতা সহায়তা কমে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সহায়তা হ্রাসে চাপযুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহার

আফ্রিকায় বিদেশি অনুদানের পরিমাণ অন্তত ৩০ শতাংশ কমে যেতে পারে, যা সরকারের ব্যয় পরিচালনায় বড় ধরনের ধাক্কা দেবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতোমধ্যে AfDB-তে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে, বেসরকারি বিনিয়োগ এখনো অবকাঠামো ঘাটতি পূরণে কার্যকর হয়নি।

আফ্রিকান ইউনিয়নের ব্যর্থতা ও ব্যাংকের প্রয়োজনীয়তা

আফ্রিকান ইউনিয়নের প্রভাবহীনতার প্রেক্ষাপটে এখন একটি শক্তিশালী, বৈধ ও সম্পদসমৃদ্ধ আফ্রিকান প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন—যা মহাদেশের ঐক্য আনতে পারে। আফ্রিকান কন্টিনেন্টাল ফ্রি ট্রেড এরিয়া বা অন্যান্য ধীরগতির উদ্যোগগুলোকে এগিয়ে নিতে এমন নেতৃত্ব অপরিহার্য। AfDB-এর হাতে প্রচুর অর্থ থাকায় এই নির্বাচন অনেক কিছু নির্ধারণ করবে।

সভাপতির দায়িত্ব ও বিদায়ী নেতৃত্ব

ব্যাংকের সভাপতির দায়িত্ব হলো মহাদেশের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রয়োজন চিহ্নিত করা এবং প্রকল্প তদারকি করা। পাশাপাশি অংশীদারদের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে মূলধন আহরণ করা। বিদায়ী সভাপতি akinwumi adesina ব্যাংকের পরিচিতি বাড়াতে পারলেও, বর্তমান সংকট সামাল দিতে যথেষ্ট অর্থ সংগ্রহ করতে পারেননি।

২০২৩ সালে AfDB মাত্র ৬.১ বিলিয়ন ডলার বিতরণ করেছে, যা জনসংখ্যার তুলনায় অনেক ছোট লাতিন আমেরিকান অঞ্চলের উন্নয়ন ব্যাংকের চেয়ে অনেক কম। আফ্রিকা এখনো একমাত্র অঞ্চল, যেখানে বিশ্বব্যাংক নিজস্ব আঞ্চলিক ব্যাংকের চেয়ে বড় প্রকল্প বিনিয়োগকারী।

প্রার্থীদের প্রোফাইল ও অবস্থান

প্রধান প্রার্থীরা প্রায় একই ধরনের অগ্রাধিকারের কথা বলছেন—চাকরি সৃষ্টি, আন্তঃআফ্রিকা অবকাঠামো সংযোগ এবং অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য। তবু তাদের মধ্য থেকে কিছু আলাদা হয়ে উঠছে:

  • স্যামুয়েল মাইম্বো (জাম্বিয়া): বিশ্বব্যাংকের অভিজ্ঞ এই প্রার্থী ট্রেড বাধা দূর করতে আগ্রহী এবং যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে আনতে চাচ্ছেন।
  • সিদি ওউল্ড তাহ (মরিতানিয়া): আরব ব্যাংক থেকে আসা, মধ্যপ্রাচ্যের নতুন অংশীদারদের টানার সম্ভাবনা রয়েছে।
  • সোয়াজি ছাবালালা (দক্ষিণ আফ্রিকা): একমাত্র নারী প্রার্থী, ব্যাংকের ভাইস-প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
  • আমাদু হট (সেনেগাল): প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী, নাইজেরিয়ার সমর্থন রয়েছে।
  • চাদের সাবেক অর্থমন্ত্রীও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ভোটের হিসাব ও ভূরাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ

ব্যাংকের ৪১ শতাংশ ভোট অংশীদার বিদেশি অনুদানদাতাদের হাতে, যা রাজনীতিকে আরও জটিল করে তুলছে। AAA রেটিং ধরে রাখতে ধনী দেশের ভূমিকাই মুখ্য। আফ্রিকার মধ্যে ভোট বিতরণ মূলধন অবদানের ভিত্তিতে। জয় পেতে হলে মোট ভোটের অর্ধেক এবং আফ্রিকান সদস্যদের অর্ধেক ভোট পেতে হবে।

নীতির চেয়ে রাজনীতির লড়াই

সবশেষে এই নির্বাচন নীতির চেয়ে বেশি রাজনীতিনির্ভর। মিশর ও নাইজেরিয়ার মতো বড় দেশগুলো সেই প্রার্থীকে চাইছে, যিনি বেশি অর্থ আনতে পারবেন এবং কম শর্ত জুড়বেন। সভাপতির চেয়ার কে জিতবে সেটা ২৯ মে-তে জানা যাবে। তবে অর্থ সংগ্রহের লড়াই চলবে আরও দীর্ঘ সময় ধরে।

জনপ্রিয় সংবাদ

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা আজ সন্ধ্যায় কিংবা আগামীকাল

আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের নেতৃত্ব নিয়ে নতুন প্রতিদ্বন্দ্বিতার সময়

০৭:০০:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫

নেতৃত্ব পরিবর্তনের মোড়কে দ্বন্দ্ব

আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (AfDB)-এর পরবর্তী সভাপতির নির্বাচন হতে যাচ্ছে ২৯ মে, এক রকম গোপনীয়তা ও আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মিশ্রণে। ৬০ বছরের পুরনো এই উন্নয়ন ব্যাংকটি এখন আফ্রিকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে—বিশেষ করে যখন দাতা সহায়তা কমে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সহায়তা হ্রাসে চাপযুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহার

আফ্রিকায় বিদেশি অনুদানের পরিমাণ অন্তত ৩০ শতাংশ কমে যেতে পারে, যা সরকারের ব্যয় পরিচালনায় বড় ধরনের ধাক্কা দেবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতোমধ্যে AfDB-তে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে, বেসরকারি বিনিয়োগ এখনো অবকাঠামো ঘাটতি পূরণে কার্যকর হয়নি।

আফ্রিকান ইউনিয়নের ব্যর্থতা ও ব্যাংকের প্রয়োজনীয়তা

আফ্রিকান ইউনিয়নের প্রভাবহীনতার প্রেক্ষাপটে এখন একটি শক্তিশালী, বৈধ ও সম্পদসমৃদ্ধ আফ্রিকান প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন—যা মহাদেশের ঐক্য আনতে পারে। আফ্রিকান কন্টিনেন্টাল ফ্রি ট্রেড এরিয়া বা অন্যান্য ধীরগতির উদ্যোগগুলোকে এগিয়ে নিতে এমন নেতৃত্ব অপরিহার্য। AfDB-এর হাতে প্রচুর অর্থ থাকায় এই নির্বাচন অনেক কিছু নির্ধারণ করবে।

সভাপতির দায়িত্ব ও বিদায়ী নেতৃত্ব

ব্যাংকের সভাপতির দায়িত্ব হলো মহাদেশের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রয়োজন চিহ্নিত করা এবং প্রকল্প তদারকি করা। পাশাপাশি অংশীদারদের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে মূলধন আহরণ করা। বিদায়ী সভাপতি akinwumi adesina ব্যাংকের পরিচিতি বাড়াতে পারলেও, বর্তমান সংকট সামাল দিতে যথেষ্ট অর্থ সংগ্রহ করতে পারেননি।

২০২৩ সালে AfDB মাত্র ৬.১ বিলিয়ন ডলার বিতরণ করেছে, যা জনসংখ্যার তুলনায় অনেক ছোট লাতিন আমেরিকান অঞ্চলের উন্নয়ন ব্যাংকের চেয়ে অনেক কম। আফ্রিকা এখনো একমাত্র অঞ্চল, যেখানে বিশ্বব্যাংক নিজস্ব আঞ্চলিক ব্যাংকের চেয়ে বড় প্রকল্প বিনিয়োগকারী।

প্রার্থীদের প্রোফাইল ও অবস্থান

প্রধান প্রার্থীরা প্রায় একই ধরনের অগ্রাধিকারের কথা বলছেন—চাকরি সৃষ্টি, আন্তঃআফ্রিকা অবকাঠামো সংযোগ এবং অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য। তবু তাদের মধ্য থেকে কিছু আলাদা হয়ে উঠছে:

  • স্যামুয়েল মাইম্বো (জাম্বিয়া): বিশ্বব্যাংকের অভিজ্ঞ এই প্রার্থী ট্রেড বাধা দূর করতে আগ্রহী এবং যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে আনতে চাচ্ছেন।
  • সিদি ওউল্ড তাহ (মরিতানিয়া): আরব ব্যাংক থেকে আসা, মধ্যপ্রাচ্যের নতুন অংশীদারদের টানার সম্ভাবনা রয়েছে।
  • সোয়াজি ছাবালালা (দক্ষিণ আফ্রিকা): একমাত্র নারী প্রার্থী, ব্যাংকের ভাইস-প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
  • আমাদু হট (সেনেগাল): প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী, নাইজেরিয়ার সমর্থন রয়েছে।
  • চাদের সাবেক অর্থমন্ত্রীও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ভোটের হিসাব ও ভূরাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ

ব্যাংকের ৪১ শতাংশ ভোট অংশীদার বিদেশি অনুদানদাতাদের হাতে, যা রাজনীতিকে আরও জটিল করে তুলছে। AAA রেটিং ধরে রাখতে ধনী দেশের ভূমিকাই মুখ্য। আফ্রিকার মধ্যে ভোট বিতরণ মূলধন অবদানের ভিত্তিতে। জয় পেতে হলে মোট ভোটের অর্ধেক এবং আফ্রিকান সদস্যদের অর্ধেক ভোট পেতে হবে।

নীতির চেয়ে রাজনীতির লড়াই

সবশেষে এই নির্বাচন নীতির চেয়ে বেশি রাজনীতিনির্ভর। মিশর ও নাইজেরিয়ার মতো বড় দেশগুলো সেই প্রার্থীকে চাইছে, যিনি বেশি অর্থ আনতে পারবেন এবং কম শর্ত জুড়বেন। সভাপতির চেয়ার কে জিতবে সেটা ২৯ মে-তে জানা যাবে। তবে অর্থ সংগ্রহের লড়াই চলবে আরও দীর্ঘ সময় ধরে।