অস্থায়ী সরকারের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস এবার জাপানে অনুষ্ঠিতব্য নিক্কেই এশিয়া ফোরাম ২০২৫-এ অংশ নিতে যাচ্ছেন। এই সফরকে ঘিরে যেমন কিছু আন্তর্জাতিক সম্ভাবনার আশা তৈরি হয়েছে, তেমনি উঠেছে স্বচ্ছতা, উদ্দেশ্য ও কূটনৈতিক গুরুত্ব নিয়ে প্রশ্নও।
একটি বেসরকারি ফোরামে সরকারি প্রতিনিধিত্ব?
নিক্কেই ফোরাম একটি প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক সম্মেলন হলেও এটি জাপানের একটি বেসরকারি মিডিয়া গ্রুপ (Nikkei Inc.) ও থিঙ্কট্যাঙ্ক কর্তৃক পরিচালিত হয়। এখানে সরকারি স্তরের আলোচনার চেয়ে ব্যবসায়িক ভবিষ্যৎ ও আঞ্চলিক সহযোগিতা নিয়ে কথাবার্তা হয়। ফলে, অনেকের মতে, এটি সরকারিভাবে স্বীকৃত কোনও দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের প্ল্যাটফর্ম নয়।
তথ্য মতে, ইউনুস এবার জাপান সরকারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকেরও চেষ্টা করছেন, যদিও সে বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক নিশ্চয়তা মেলেনি।
পুরনো মিত্র জাপান, নতুন পরিস্থিতি
জাপান বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার। মেট্রোরেল, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প, গভীর সমুদ্রবন্দরসহ একাধিক মেগা প্রকল্পে জাপানের বিনিয়োগ রয়েছে। তবে বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও অস্থায়ী সরকারের সাংবিধানিক অবস্থানকে ঘিরে জাপান সরকার এখনও কোনও সরাসরি স্বীকৃতি দেয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইউনুসের সফর অনেকাংশেই কৌশলগত ইমেজ বিল্ডিং ও সম্ভাব্য আস্থার বার্তা দিতে পারে, কিন্তু তা কতটা কার্যকর হবে তা নির্ভর করছে জাপানের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে কী বার্তা আসে তার ওপর।
সম্ভাব্য অর্জন: বাস্তবতা বনাম কৌশল
ইউনুস এই সফরে যা পেতে পারেন:
- আন্তর্জাতিক পরিচিতি ও আলোচনার সুযোগ
- বিনিয়োগ উৎসাহিত করার চেষ্টা, বিশেষ করে প্রযুক্তি ও সামাজিক ব্যবসার ক্ষেত্রে
- উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে মতবিনিময়, যেমন জাইকা বা ADB
কিন্তু যা অর্জিত হবে না:
- এটি কোনো দ্বিপক্ষীয় চুক্তির প্ল্যাটফর্ম নয়
- জাপান সরকার এই সফরকে সরকারি স্বীকৃতি দিতে পারে না, কারণ ইউনুস একটি অস্থায়ী সরকারের প্রধান
দেশে ও বিদেশে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
এই সফর নিয়ে দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যেও বিভক্তি রয়েছে। কেউ কেউ একে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি রক্ষার চেষ্টা হিসেবে দেখছেন, আবার অনেকের মতে, সাংবিধানিক ম্যান্ডেটহীন সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক ফোরামে অংশগ্রহণ রাজনীতির স্বাভাবিকীকরণের ভ্রান্ত বার্তা দিতে পারে।
একজন বিশ্লেষক বলেন, “এটি ঠিক যেন নিজের অবস্থান আন্তর্জাতিকভাবে বৈধ করার একটা প্রচেষ্টা, কিন্তু সেটা কতটা সফল হবে তা জাপানের প্রতিক্রিয়ার উপর নির্ভর করছে।”
ড. ইউনুসের নিক্কেই এশিয়া ফোরামে যোগদান একদিকে যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক ও আঞ্চলিক সংযোগের বার্তা বহন করে, অন্যদিকে এটি একটি প্রশ্নবিদ্ধ সময়ে কূটনৈতিক স্বীকৃতি অর্জনের রাজনৈতিক চেষ্টা বলেও অনেকেই দেখছেন। জাপানের পক্ষ থেকে কী বার্তা আসে, এবং ইউনুস কাকে কাকে কতটা প্রভাবিত করতে পারেন, তার উপর নির্ভর করবে এই সফরের প্রকৃত সাফল্য।