হৈরব ও ভৈরব
প্রথমে অকারণে নাক ঝাড়ে, তারপর গরুর মতো বড় বড় চোখে তাকায় হৈরব; রোগে রোগে আর বয়েসের ভারে দেহের কাঠ বেরিয়ে পড়েছে মানুষটার, গনিমিয়ার গুঁতুনে চোখেও এই নির্জলা সত্যটুকু বিশ্রীভাবে দাঁত বের ক’রে থাকে।
হাত জোড় ক’রে হৈরব বলে, ‘আমারে সময় দ্যান বাবু-‘
‘ঘরে জোয়ান পোলা, খ্যাদায়া দাও হ্যারে, আকামের হাড্ডি’
‘হ্যায় কি করতারে, কামকাজ আছেনি বাবু দ্যাশে, পূজা-পার্বণ সব উইঠা যাইতাছে, দেখতাছেন তো ব্যাকই, ঢাকীগ জীবন ক্যামনে বাঁচে-‘
দয়া এসে দাঁড়ায়, ঝিরঝির ক’রে অদ্ভুতভাবে হাসে আর আঙুল মটকায়।
জুলজুলে চোখে তাকায় গনিমিয়া; দয়ার তেল জবজবে ভোমা খোপা মাথার গুঁতোয় ভেঙে দিতে ইচ্ছে করে।
‘বইনের জীবনটাও মাটি কইরা দিলা’
‘ঈশ্বরের ইচ্ছা, আমারে তো দেখতাছেনঅই।’
একগাল তোষামুদে হাসি ছড়িয়ে গনিমিয়া বলে, ‘যাওনাগো, অট্টু তামুক সাইজাও খাওয়াইবা না!’
দয়া চ’লে গেলে চাপা স্বরে সে বলে, ‘ বেরজার লগে হ্যারে তুমি বিয়া দাও, আমাগো হাতের পোলা-‘
হৈরব বলে, ‘হ্যানি বিয়ায় বইবো?’
‘তোমরা দিবা, কও তো আমি করায়া দেই’
‘বেরজারনি বউ রইছিলো, ভাইগা গেছিলগা বয়ড়াগাদির সীতানাথ পসারীর লগে? যেমুন হুনতাছি ফিরা আইছে-‘
‘স্বভাব-চরিত্রি ঠিক আছিলো না হ্যার, বুঝলানা? বেরজা হ্যারে ঘরে উটবার দেয় নাই, অহনে মোজামি খলিফারে রাইন্দা খাওয়াইতাছে!’
পরে গনিমিয়া অন্তরঙ্গ সুরে বললে, ‘বেরজার মতো পোলা হয় না, হ্যায় কি তালিবালি করবো, আমরা রইছি না!’
‘বিয়ায় হ্যা বইবো না বাবু’ হৈরবের গলার ভেতর ঘড়ঘড় করে, ‘বাকি রাখি নাই বুঝান, হে চলে হ্যার নিজের বুঝ লয়া-‘
একফাঁকে গনিমিয়ার হাতে হুঁকা ধরিয়ে দেয় দয়া, তারপর গোঁজ হয়ে দাঁড়িয়ে তাদের সব কথা শোনে। গ্যাঁট হয়ে ব’সে ঝাড়া একঘন্টার চেয়েও বেশি মুখে কথার তুবড়ি ছোটায় গনিমিয়া: