০২:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫
শীতের আরাম নিশ্চিত করুন: বাংলাদেশে কোন গিজারগুলো সেরা ঢাকা-খুলনাসহ ১৫ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ ব্যাংকঅ্যাশিওরেন্স: শোকাহত পরিবারের পাশে দ্রুত সহায়তা মুজিব ‘স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি’, হাসিনা ‘বাকশাল আদর্শের অনুসারী’: সালাহউদ্দিন ব্র্যাক ব্যাংক ও আইডিকলের যৌথ অর্থায়নে পাবনায় ৬৪.৫৫ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প ইসলামী ব্যাংকের সহযোগিতায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হচ্ছে অনলাইন ফি পরিশোধের যুগ হবিগঞ্জে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে কলেজছাত্রী আটক চট্টগ্রামে ছুরিকাঘাতে এক ব্যক্তির মৃত্যু পাকিস্তানের জয়গান: আবরারের ঘূর্ণিতে বিধ্বস্ত দক্ষিণ আফ্রিকা, ২–১ ব্যবধানে সিরিজ জয় রমনা গির্জায় ককটেল হামলায় উদ্বেগ: খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান

প্রতিদিন একটি রুমাল (পর্ব-১১)

হৈরব ও ভৈরব

হৈরবের ঘরের উঠোনে দাঁড়িয়ে ঝেড়ে একবার গলা খাঁকারি দেয় গনিমিয়া, ‘কইগো বুইরা, বাইরাও ট্যাকা না লয়া আমি কিন্তু আইজ আর নরতাছি না, কয়া রাখলাম, ঔষধ উঠাইতে হইবো, বাইরাও-‘

দয়া একটা পিঁড়ি এনে বসতে দেয় তাকে উঠানের একপাশে। বলে, ‘বুরা মানুষ, তারে এ্যামুন কষ্ট দিয়েন না। আপনের আইতে দেইখা দাদায় খাঁথামুরি দিয়া হুয়া পড়ছে-‘

চোটপাট চালানোর উদ্দেশ্যে আজ অসময় একটু নেশা ক’রে এসেছিল গনিমিয়া; এখন সবকিছু ভেস্তে যায় আর কি। গনিমিয়ার মাথার ভেতরে ঝিমঝিম ক’রে, আরো অনেকবার দয়া সামনে আসায় তার বজ্রআঁটুনির গেরো খামোকা ফসকে গেছে। খাটো গলায় সে বললে, ‘গাঙ্গের ঘোলাপানি আর মাইয়া মাইনসের কালারঙ, শালার আইজ আমারে খাইছে, আমি নাই-‘

দয়া হেসে বললে, ‘আপনে নাই?’

আছিলাম, অহনে নাই।’

‘বহেন তাইলে, ভৈরবরে বুলায়া দেই, হ্যাঁ আপনেরে খুঁইজা বাইর করবোনে, দেইখেন-

আসার পথে শেষবেলার রূপের ছটায় গনিমিয়ার চোখ ঝলসে গিয়েছিল, ইছামতির গা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল সে চষাখেতের দিকে। এখন নতুন ক’রে আবার ধাঁধা লাগে। দয়ার কোমরের একটা ঢেউয়ের ওপর তার চোখ ভূ-ঝাপটানি দিয়ে ঝুপঝাপ ছোঁ মারে; কি মসৃণ, কি পেছল, রূপের ঢল সারা গতরে গড়ান দিয়ে শেষে কোমরে এসে ভাঁজ খেয়ে চিকচিক করছে। মাথার ভেতরে সেই কবেকার দেখা এক হঠাৎ জাগা পদ্মার চর ভেসে ওঠে, সেখানে নিরুদ্বিগ্ন অপার জ্যোৎস্নায় নরোম ভিজেমাটির গায়ে ছিলবিল ছিলবিল ক’রে তড়পায় রাশি রাশি চকচকে সরপুটি, নরোম ব’লে নরোম, পায়ের পাতার নিচে দেবে যায় মাটি।

দয়া স’রে যেতেই উঠোনটা দপ ক’রে নিভে যায়। গোধূলিলগ্নের আচ্ছন্নতায় চতুর্দিকের দৃশ্যপট এমনিতেই নিষ্প্রভ হয়ে ছিল এতক্ষণ, ক্রমশ ঝাপসা হয়ে আসে এখন। ‘ধাইদার বাঙ্গিখান যেমুন, ঈশ, ফাইটা পরতাছে অক্করে গনিমিয়ার মাথার ভেতরে তুলকালাম কাণ্ড শুরু হয়, ‘আয়া লউক মালাউনের বাচ্চা, হৈরবের পোলা ভৈরব, হ, হ্যারে আইজ আমি আস্তা থুইছি!’

ভৈরব আসে না, ভেতর থেকে শোনা যায় হৈরবের গলা, ‘প্যাটের ফাঁপ আমারে খাইলো বাবু’

শেষে পা টেনে টেনে সামনে এসে দাঁড়ায়।

‘অক্করে কুইয়া গন্দ।’

‘হ বাবু, পায়ের নখ পইচা উঠতাছে-‘

‘অহনে কত কিছু হইবো, ট্যাকার কি করলা?’

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

শীতের আরাম নিশ্চিত করুন: বাংলাদেশে কোন গিজারগুলো সেরা

প্রতিদিন একটি রুমাল (পর্ব-১১)

১২:০০:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫

হৈরব ও ভৈরব

হৈরবের ঘরের উঠোনে দাঁড়িয়ে ঝেড়ে একবার গলা খাঁকারি দেয় গনিমিয়া, ‘কইগো বুইরা, বাইরাও ট্যাকা না লয়া আমি কিন্তু আইজ আর নরতাছি না, কয়া রাখলাম, ঔষধ উঠাইতে হইবো, বাইরাও-‘

দয়া একটা পিঁড়ি এনে বসতে দেয় তাকে উঠানের একপাশে। বলে, ‘বুরা মানুষ, তারে এ্যামুন কষ্ট দিয়েন না। আপনের আইতে দেইখা দাদায় খাঁথামুরি দিয়া হুয়া পড়ছে-‘

চোটপাট চালানোর উদ্দেশ্যে আজ অসময় একটু নেশা ক’রে এসেছিল গনিমিয়া; এখন সবকিছু ভেস্তে যায় আর কি। গনিমিয়ার মাথার ভেতরে ঝিমঝিম ক’রে, আরো অনেকবার দয়া সামনে আসায় তার বজ্রআঁটুনির গেরো খামোকা ফসকে গেছে। খাটো গলায় সে বললে, ‘গাঙ্গের ঘোলাপানি আর মাইয়া মাইনসের কালারঙ, শালার আইজ আমারে খাইছে, আমি নাই-‘

দয়া হেসে বললে, ‘আপনে নাই?’

আছিলাম, অহনে নাই।’

‘বহেন তাইলে, ভৈরবরে বুলায়া দেই, হ্যাঁ আপনেরে খুঁইজা বাইর করবোনে, দেইখেন-

আসার পথে শেষবেলার রূপের ছটায় গনিমিয়ার চোখ ঝলসে গিয়েছিল, ইছামতির গা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল সে চষাখেতের দিকে। এখন নতুন ক’রে আবার ধাঁধা লাগে। দয়ার কোমরের একটা ঢেউয়ের ওপর তার চোখ ভূ-ঝাপটানি দিয়ে ঝুপঝাপ ছোঁ মারে; কি মসৃণ, কি পেছল, রূপের ঢল সারা গতরে গড়ান দিয়ে শেষে কোমরে এসে ভাঁজ খেয়ে চিকচিক করছে। মাথার ভেতরে সেই কবেকার দেখা এক হঠাৎ জাগা পদ্মার চর ভেসে ওঠে, সেখানে নিরুদ্বিগ্ন অপার জ্যোৎস্নায় নরোম ভিজেমাটির গায়ে ছিলবিল ছিলবিল ক’রে তড়পায় রাশি রাশি চকচকে সরপুটি, নরোম ব’লে নরোম, পায়ের পাতার নিচে দেবে যায় মাটি।

দয়া স’রে যেতেই উঠোনটা দপ ক’রে নিভে যায়। গোধূলিলগ্নের আচ্ছন্নতায় চতুর্দিকের দৃশ্যপট এমনিতেই নিষ্প্রভ হয়ে ছিল এতক্ষণ, ক্রমশ ঝাপসা হয়ে আসে এখন। ‘ধাইদার বাঙ্গিখান যেমুন, ঈশ, ফাইটা পরতাছে অক্করে গনিমিয়ার মাথার ভেতরে তুলকালাম কাণ্ড শুরু হয়, ‘আয়া লউক মালাউনের বাচ্চা, হৈরবের পোলা ভৈরব, হ, হ্যারে আইজ আমি আস্তা থুইছি!’

ভৈরব আসে না, ভেতর থেকে শোনা যায় হৈরবের গলা, ‘প্যাটের ফাঁপ আমারে খাইলো বাবু’

শেষে পা টেনে টেনে সামনে এসে দাঁড়ায়।

‘অক্করে কুইয়া গন্দ।’

‘হ বাবু, পায়ের নখ পইচা উঠতাছে-‘

‘অহনে কত কিছু হইবো, ট্যাকার কি করলা?’