হৈরব ও ভৈরব
‘ধর যেমুন আতকা মইরা গ্যালাম, গনিডাকতোরের ট্যাকাটা যেমনেই হউক মিটায়া দিছ, বহুত পাইবো হ্যায়, তরগিয়া চাইরশোর কিছু কম…’
ওষুধের দোকান থাকায় গনিমিয়াকে গ্রামাঞ্চলের সবাই ঐ নামেই ডাকে, চারহাতপায়ে তাকে ডাক্তারিও করতে হয়।
‘কাউলকা ট্যাকার কথা তুলছিলো, বাজারের মদে খারায়া অক্করে ধুইছে আমারে,’ ভৈরব বিরস মুখে বলে, ‘কইলো, তর বাবারে গিয়া কবি, হ্যাঁ যান টালটিবালটি ছারান দিয়া ট্যাকা শোধ দেয়-‘
‘কিছু কইছস?’
‘কইলাম বাবার হাতে ট্যাকা নাই, শুইন্যা কুঁইদা আইতে চায়। কয় আছিলো কবে, যা রইছে হেই বেইচা খাইতারছ না। সুজানগরের দত্তবাড়ি থিকা ট্যাকা হাওলাত নিছে কয়া আমারে বুজ দিয়া গেছে। কইছে না দত্তরা,
কিয়ের হাওলাত, নামকীর্তনের বায়নার ট্যাকা আগাম লইছে হ্যায়-‘
‘ঠিকোই-
‘আইজ আইতারে তাগাদায়, কি করবেন কি?’
হৈরব ক্ষেপে ওঠে একথায়, ‘হাড়-হাবাইতা আমারে জিগাছ, দত্তরা কি
দিছে না দিছে জানছ না?’
মন খাঁখাঁ করে হৈরবের, দশগাঁয়ের ভেতর ঐ একটা বাড়ি ছিলো, যেখানে বছরে একবার জৌলুস ক’রে নামকীর্তন হয়, নানা জেলার আটদশটা দল এসে জমে, সেরা দলের কপালে সোনার মেডেল জোটে; তা তারও পাট চুকতে বসেছে। প্রবীণ কেশব দত্ত পষ্ট বলেই দিয়েছে তাকে, ‘এই এই হইলো শেষবার, নামকীর্তনের পালা আমরা তুইলা দিতাছি। অহনে সব ভাগ হয়া গেছে, খরচপাতি চালায় কেঠায়-‘
‘আরে খরচ, ট্যাকায় সব খাইলো’ ভৈরবের পায়ের পচা নখ টসটস ক’রে টাটায়। কয়কীর্তনের ঢাকীদের কি দাপটটাই না ছিল একসময়, পালপার্বণের আগে সারাদেশ থেকে বায়না করতে আসতো মানুষজন। বনেদি বাবুদের বাড়ি না হলে তারা বায়না ফিরিয়ে দিয়েছে কতোবার, সেই তারাই এখন ঋষিদাসদের সঙ্গে বাঁশ আর বেতের ঝুড়ি বুনে কোনমতে নিজেদের পেট চালায়, চুরি ডাকাতি ক’রে বেড়ায়। সময়ে কি না হয়; মাটিতে পড়া ডুমুর, তার আবার গোমর কিসের।