০১:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

প্রতিদিন একটি রুমাল (পর্ব-৮)

হৈরব ও ভৈরব

সবেমাত্র বায়নার টাকা পেয়েছে অমনি ভোজবাজির মতো গনিমিয়া এসে হাজির, ‘ট্যাকা পাইছ?’

‘পাইছি, বহুৎ কম-‘

‘তালিবালি কইরো না, ট্যাকা না পাইলে অক্করে মাঠে মারা যামু, খালি হাতে আয়া পড়ছি, ট্যাকা ছারো, ট্যাকা ছারো-‘

টানাটানির সময় হাতেপায়ে ধ’রে কেঁদে পড়লে গনিমিয়া তাকে টাকা-পয়সা ধার দেয়। তবে তা একটা শর্তে, শতকরা সত্তর টাকা হারে তাকে ইন্ডিয়ায় গিয়ে টাকা দিতে হবে। গনিমিয়া পুজোর মৌসুমে কলকাতায় বাজারঘাট করতে আসে, তার কিছু সুবিধে হয়। গনিমিয়া চলতি রেটের চেয়ে পাঁচদশ টাকা বেশি পেলেই খুশি মনে তাকে অব্যাহতি দিতো, হৈরবও হালকা হয়ে যেত। পরপর দু’বছর পাওনার টাকা পুরো না মেটাতে পারায় ঠেলতে ঠেলতে সে এখন সত্তরে উঠিয়ে ছেড়েছে।

গনিমিয়া বলে, ‘আগের সনের হিসাবের ল্যানজা ঝুলাইয়া রাখছো দুইশো ট্যাকা, এই সনের তোমার গিয়া তিন আর দুয়ে পাঁচশো, সাতশ দিবা, বহুত কেনাকাটি রইছে-‘

কেনাকাটি-ফেনাকাটি ওসব কিছু না, সব বাজে কথা, হৈরব জানে বছরে একবার গনিমিয়ার কলকাতায় দৌড়ানোর একমাত্র কারণ সিনেমা দেখা আর গায়ে হাওয়া লাগিয়ে গড়িয়াহাটায় ঘুরে বেড়ানো। তবু সে জোড়হাতে বলে, ‘বাবু, আপনেরা দয়া না করলে বাঁচুম ক্যামনে, পুরা সিজিন বাজায়াও হ্যার আটআনিও উঠবো না!’

‘তোমাগোর খাইসলৎ যাইবো না, অহনে মাল ছাইরা কথা কও, আহনের আগে না কইলা কালীপূজাতক থাকলে ট্যাকা উইঠা আইবো

‘নমুনা তো দেহি না’

ঝেড়েঝুড়ে সব দিয়েও গনিমিয়ার দেনা শোধ হয় না। তারপরও শতেক ঝামেলা। নবমীর রাতে পূজা কমিটির ছেলেছোকরারা বলে, ‘খানকী নাচাতে পারবে?’

হৈরব বলে, ‘কি কন!’

‘কি কই বোঝো না? ঝন্টে বুঝিয়ে দেতো বানচোৎকে!’

ঝন্টে এক ঝটকায় তাকে উলঙ্গ ক’রে বুঝিয়ে দেয়। এই হচ্ছে দিনকাল, এই হচ্ছে কর্তাবাবুরা; সবকিছু দেখেশুনে ঘেন্না ধ’রে গেছে তার।

হঠাৎ কি মনে ক’রে হৈরব চঞ্চল হয়ে ওঠে। ডাকে, ‘ভৈরবরে-‘

‘কি কও?’ গমের শুকনো গোছা মাথা থেকে নামিয়ে ভৈরব কাছে দাঁড়ায়।

 

 

প্রতিদিন একটি রুমাল (পর্ব-৮)

১২:০০:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫

হৈরব ও ভৈরব

সবেমাত্র বায়নার টাকা পেয়েছে অমনি ভোজবাজির মতো গনিমিয়া এসে হাজির, ‘ট্যাকা পাইছ?’

‘পাইছি, বহুৎ কম-‘

‘তালিবালি কইরো না, ট্যাকা না পাইলে অক্করে মাঠে মারা যামু, খালি হাতে আয়া পড়ছি, ট্যাকা ছারো, ট্যাকা ছারো-‘

টানাটানির সময় হাতেপায়ে ধ’রে কেঁদে পড়লে গনিমিয়া তাকে টাকা-পয়সা ধার দেয়। তবে তা একটা শর্তে, শতকরা সত্তর টাকা হারে তাকে ইন্ডিয়ায় গিয়ে টাকা দিতে হবে। গনিমিয়া পুজোর মৌসুমে কলকাতায় বাজারঘাট করতে আসে, তার কিছু সুবিধে হয়। গনিমিয়া চলতি রেটের চেয়ে পাঁচদশ টাকা বেশি পেলেই খুশি মনে তাকে অব্যাহতি দিতো, হৈরবও হালকা হয়ে যেত। পরপর দু’বছর পাওনার টাকা পুরো না মেটাতে পারায় ঠেলতে ঠেলতে সে এখন সত্তরে উঠিয়ে ছেড়েছে।

গনিমিয়া বলে, ‘আগের সনের হিসাবের ল্যানজা ঝুলাইয়া রাখছো দুইশো ট্যাকা, এই সনের তোমার গিয়া তিন আর দুয়ে পাঁচশো, সাতশ দিবা, বহুত কেনাকাটি রইছে-‘

কেনাকাটি-ফেনাকাটি ওসব কিছু না, সব বাজে কথা, হৈরব জানে বছরে একবার গনিমিয়ার কলকাতায় দৌড়ানোর একমাত্র কারণ সিনেমা দেখা আর গায়ে হাওয়া লাগিয়ে গড়িয়াহাটায় ঘুরে বেড়ানো। তবু সে জোড়হাতে বলে, ‘বাবু, আপনেরা দয়া না করলে বাঁচুম ক্যামনে, পুরা সিজিন বাজায়াও হ্যার আটআনিও উঠবো না!’

‘তোমাগোর খাইসলৎ যাইবো না, অহনে মাল ছাইরা কথা কও, আহনের আগে না কইলা কালীপূজাতক থাকলে ট্যাকা উইঠা আইবো

‘নমুনা তো দেহি না’

ঝেড়েঝুড়ে সব দিয়েও গনিমিয়ার দেনা শোধ হয় না। তারপরও শতেক ঝামেলা। নবমীর রাতে পূজা কমিটির ছেলেছোকরারা বলে, ‘খানকী নাচাতে পারবে?’

হৈরব বলে, ‘কি কন!’

‘কি কই বোঝো না? ঝন্টে বুঝিয়ে দেতো বানচোৎকে!’

ঝন্টে এক ঝটকায় তাকে উলঙ্গ ক’রে বুঝিয়ে দেয়। এই হচ্ছে দিনকাল, এই হচ্ছে কর্তাবাবুরা; সবকিছু দেখেশুনে ঘেন্না ধ’রে গেছে তার।

হঠাৎ কি মনে ক’রে হৈরব চঞ্চল হয়ে ওঠে। ডাকে, ‘ভৈরবরে-‘

‘কি কও?’ গমের শুকনো গোছা মাথা থেকে নামিয়ে ভৈরব কাছে দাঁড়ায়।