০১:১৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

প্রতিদিন একটি রুমাল (পর্ব-৭)

হৈরব ও ভৈরব

তার মা বলে ছিঃ, তার ভাই বলে ছিঃ, তার পিসি বলে ছিঃ বলো ছিঃ করো, আর হৈরব নিজে অনেক হিসেব কষে, অনেক যোগবিয়োগ ক’রে ভেবে দ্যাখে মেয়েটা নেই, তাই এতো আঁধার, আর কেউ তো বলে না ‘বাবা তুমি যেমুন কি, পঞ্চম সোয়ারী ধইরাও কানদো চোখে ধ’রে গেল রমজানকে; ভুল হলো, ভানু ওর বাবার চোখ পেয়েছিলো, হৈরব নিজেকে শুধরে নেয়, রমজানকে ওর মনে ধ’রে গেল, মন্দ কি, নাগারচিদের ঘরে রমজানের মতো অমন হাত পেয়েছে ক’জন, সোনার টুকরো, হ্যাঁ বাজনদার একখান! পালটিঘরের সম্বন্ধ এসেছিল একটাই, সেই ভরাকর থেকে; হৈরবের মেয়ে ভানু, হৈরব বাজনদার, ভানু যাবে ভরাকরের চোরচোট্টা পরিবারে ঘর করতে, আবদারখানা কি-

সেই ভানুকে এরা ফেলে দিল। ভৈরব বলে, ‘নাম নিবার পারবা না, খুনখারাবি হয়া যাইবো, হ্যারে আমরা চিতায় থুয়া আইছি, ব্যাস্-‘

ভরতও যেন কেমন হয়ে গেছে, বদল ব’লে বদল, হৈরব বোঝে না মানুষ আগাগোড়া সবটা কিভাবে বদলে যায়। নিজের ছেলে, বাবাকে দেখে সেও বিব্রত হয়। পূজার সময় গলাধাক্কা পাসপোর্টে বর্ডার পার হয়ে সে অন্যান্যবারের মতো কলকাতায় গিয়েছিলো, গিয়ে শোনে ভরত কাজ নিয়েছে প্লাস্টিকের ফুলের কারখানায়, থাকে বাঁশদ্রোণী। খুঁজে খুঁজে অস্থির। শেষে দেখা যখন মিললো তখন ভরতের বিপদের আর শেষ নেই, বলে, ‘আইচ্ছা কন, আক্কলখান কি আপনের, ঢাকসুদ্ধ আয়া পরছেন, আপনের বৌমায় গাইলাইয়া আস্তা থুইবো আমারে, মাইনসের কাছেনি মুখ দেহান্ যাইবো! ঢাক আপনে অন্যখানে থুয়া লন, সমাজ নিয়া কথা-‘

প্লাসটিকের ফুলের মালী ভরত, হ্যাঁ তার একটা সমাজ আছে বৈকি; সমাজ আছে, সম্মান আছে, ‘বৌমারে আমি আশীর্বাদ দিয়া গেলাম, বুঝ কইরা চলবিরে, একবার গিয়া মায়েরে দেইখা আইছ, তগো প্যাটে ধরছে, কষ্ট পায়-‘ এই ব’লে হৈরব চ’লে এসেছিল। আর কবে? আর কখন? না, আর কখনো নয়; এমনভাবে অভিমান আর কখনো বুকে বাজেনি। তার কোনো ধারণাই ছিল না ভরত এভাবে ঢাকের অমর্যাদা করবে।

কি দিনকাল। কোথায় গেল সব বাবুরা, বাবুরা তোমরা স্বর্গে থাকো, ঈশ্বর বাবুদের তুমি ভালো রেখো, বাবুদের কোনো কষ্ট না হয়, হৈরব মনে মনে কাঁদে। চৌরঙ্গির মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে মাজাকোমর ধ’রে যায়, পাল কি পাল ঢাকী, ঝাঁকে ঝাঁকে ঢুলী, বুড়োমানুষ, তার দিকে কে ফিরে তাকায়।

কারো একটু মর্জি হলো তো দাঁড়িয়ে গিয়ে বললে, ‘ও বুড়ো, এট্টু চ্যাটাং চ্যাটাং করো দিকিনি, শুনি, ঝামাহাড়ে কি কুলুতে পারবে?’

সমজদার হলে বলে, ‘খাঁটিমাল, তবে শ্মানঘাটের মড়া, হাঁপিয়ে যায়’

হাঁপানোর তো কথাই, দেখছো তো বুড়ো, বয়স জানো কতো? হৈরব মনে আনার চেষ্টা করে, পারে না, এ হিসেবও রাখতে হবে।

 

 

প্রতিদিন একটি রুমাল (পর্ব-৭)

১২:০০:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ জুন ২০২৫

হৈরব ও ভৈরব

তার মা বলে ছিঃ, তার ভাই বলে ছিঃ, তার পিসি বলে ছিঃ বলো ছিঃ করো, আর হৈরব নিজে অনেক হিসেব কষে, অনেক যোগবিয়োগ ক’রে ভেবে দ্যাখে মেয়েটা নেই, তাই এতো আঁধার, আর কেউ তো বলে না ‘বাবা তুমি যেমুন কি, পঞ্চম সোয়ারী ধইরাও কানদো চোখে ধ’রে গেল রমজানকে; ভুল হলো, ভানু ওর বাবার চোখ পেয়েছিলো, হৈরব নিজেকে শুধরে নেয়, রমজানকে ওর মনে ধ’রে গেল, মন্দ কি, নাগারচিদের ঘরে রমজানের মতো অমন হাত পেয়েছে ক’জন, সোনার টুকরো, হ্যাঁ বাজনদার একখান! পালটিঘরের সম্বন্ধ এসেছিল একটাই, সেই ভরাকর থেকে; হৈরবের মেয়ে ভানু, হৈরব বাজনদার, ভানু যাবে ভরাকরের চোরচোট্টা পরিবারে ঘর করতে, আবদারখানা কি-

সেই ভানুকে এরা ফেলে দিল। ভৈরব বলে, ‘নাম নিবার পারবা না, খুনখারাবি হয়া যাইবো, হ্যারে আমরা চিতায় থুয়া আইছি, ব্যাস্-‘

ভরতও যেন কেমন হয়ে গেছে, বদল ব’লে বদল, হৈরব বোঝে না মানুষ আগাগোড়া সবটা কিভাবে বদলে যায়। নিজের ছেলে, বাবাকে দেখে সেও বিব্রত হয়। পূজার সময় গলাধাক্কা পাসপোর্টে বর্ডার পার হয়ে সে অন্যান্যবারের মতো কলকাতায় গিয়েছিলো, গিয়ে শোনে ভরত কাজ নিয়েছে প্লাস্টিকের ফুলের কারখানায়, থাকে বাঁশদ্রোণী। খুঁজে খুঁজে অস্থির। শেষে দেখা যখন মিললো তখন ভরতের বিপদের আর শেষ নেই, বলে, ‘আইচ্ছা কন, আক্কলখান কি আপনের, ঢাকসুদ্ধ আয়া পরছেন, আপনের বৌমায় গাইলাইয়া আস্তা থুইবো আমারে, মাইনসের কাছেনি মুখ দেহান্ যাইবো! ঢাক আপনে অন্যখানে থুয়া লন, সমাজ নিয়া কথা-‘

প্লাসটিকের ফুলের মালী ভরত, হ্যাঁ তার একটা সমাজ আছে বৈকি; সমাজ আছে, সম্মান আছে, ‘বৌমারে আমি আশীর্বাদ দিয়া গেলাম, বুঝ কইরা চলবিরে, একবার গিয়া মায়েরে দেইখা আইছ, তগো প্যাটে ধরছে, কষ্ট পায়-‘ এই ব’লে হৈরব চ’লে এসেছিল। আর কবে? আর কখন? না, আর কখনো নয়; এমনভাবে অভিমান আর কখনো বুকে বাজেনি। তার কোনো ধারণাই ছিল না ভরত এভাবে ঢাকের অমর্যাদা করবে।

কি দিনকাল। কোথায় গেল সব বাবুরা, বাবুরা তোমরা স্বর্গে থাকো, ঈশ্বর বাবুদের তুমি ভালো রেখো, বাবুদের কোনো কষ্ট না হয়, হৈরব মনে মনে কাঁদে। চৌরঙ্গির মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে মাজাকোমর ধ’রে যায়, পাল কি পাল ঢাকী, ঝাঁকে ঝাঁকে ঢুলী, বুড়োমানুষ, তার দিকে কে ফিরে তাকায়।

কারো একটু মর্জি হলো তো দাঁড়িয়ে গিয়ে বললে, ‘ও বুড়ো, এট্টু চ্যাটাং চ্যাটাং করো দিকিনি, শুনি, ঝামাহাড়ে কি কুলুতে পারবে?’

সমজদার হলে বলে, ‘খাঁটিমাল, তবে শ্মানঘাটের মড়া, হাঁপিয়ে যায়’

হাঁপানোর তো কথাই, দেখছো তো বুড়ো, বয়স জানো কতো? হৈরব মনে আনার চেষ্টা করে, পারে না, এ হিসেবও রাখতে হবে।