১০:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৭৮) রাশিয়া, চীন ও ইরানের মাঝের অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাবর্তন দেশবাসীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানালেন তারেক রহমান নরওয়ের বড়দিনে বিতর্কিত খাবার লুটেফিস্কের প্রত্যাবর্তন, ঐতিহ্যেই ফিরছে স্বাদ প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৪৫) নিউজিল্যান্ডে গ্যাং প্রতীক নিষিদ্ধ: রাস্তায় শান্তি, কিন্তু অপরাধ কি সত্যিই কমল সৌদিতে বিরল তুষারপাতের পর প্রশ্ন: সংযুক্ত আরব আমিরাতেও কি আবার তুষারপাত সম্ভব? যে রিকশায় গুলিবিদ্ধ হন হাদি, সেই চালকের আদালতে জবানবন্দি তারেক রহমানের নেতৃত্বে নির্বাচনে আমরা জয়ী হবো: মির্জা ফখরুল পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে কে-৪ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা ভারতের

প্রতিদিন একটি রুমাল (পর্ব-৬)

হৈরব ও ভৈরব

মাঠ ঘাটে রোদ খাঁ খাঁ করে, রোদময় চিলের চিৎকার। এক একবার বিস্তীর্ণ দুপুর ঝনঝন ক’রে বেজে ওঠে। ঝলসানো গাছপালা মুখ নিচু ক’রে আচ্ছন্নপ্রায় দাঁড়িয়ে থাকে। এরই মাঝে এক একটি গন্ধ নেশার মতো জড়িয়ে ধরে হৈরবকে, সে বুঝতে পারে বৌনার ডালে ডালে এখন মঞ্জরি, কি আনন্দ, কী আনন্দ, ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছি নামে। এক একটা গন্ধ এমন এক একটা স্মৃতি, যাতে নখের কোনো আঁচড় নেই, দাঁতের কোনো দাগ নেই, ছিমছাম, নির্ভার, অবিরল। কাঁঠালের মুচির গন্ধে হৈরবের বুক গুমরে ওঠে।

টুনটুনি পাখি চিরকালই তার চোখে একটা আশ্চর্য প্রাণী, যেমন কাচকি মাছ; এইতো একফোঁটা অথচ এরাও কি স্বচ্ছন্দে বেঁচে থাকে, তাল মিলিয়ে বংশ বৃদ্ধি ক’রে চলে। একটা টুনটুনি, যার ঠোঁটে তুলো, চোখে রাজ্যের বিস্ময়, আকন্দগাছের শাখায় দোল খেয়ে ফরফর ক’রে একদিকে উড়ে যায়; হৈরবের মনে শিশিরের ছোঁয়ায় পদ্মকোরক শিরশির ক’রে ওঠে, ঐ যে তিনি, তিনি নিরভিমান, তিনি নম্র, তিনি ব্যাকুল, তিনি বলেন আমি একফোঁটা, আমি তুচ্ছ, অতিতুচ্ছ।

ভিটির খুব কাছে টেকের কোল ঘেঁষে একফালি জমি। গম বুনেছিল ভৈরব, ফলন ভালো নয়; আপন মনে সে এখন সেই ছন্নছাড়া চেহারার রুখু রুখু গোছাগুলো ঘরে তোলায় ব্যস্ত। ডাঁটাশাকও বুনেছিলো একপাশে, তার চেহারাও পোকায় খাওয়া, নির্বোধ অনিচ্ছায় কেমন যেন লাবণ্যহীন দেখায় পাতাগুলো, সবকিছু অচেনা মনে হয় হৈরবের, এখন আর কোনো কিছুতেই সে ছিরিছাঁদ দেখে না।

দূরে ইছামতি, রুপোর সুতোয় বোনা দুপুর রোদের পাড়, পাড়ের গায়ে নৌকোর ফোঁটা ফোঁটা নকশা; মন হু হু করে, কত মানুষের কথা মনে পড়ে, কি সুন্দর সুন্দর সব মানুষ, বড় বড় বাবুরা, গমগমে মণ্ডপ, হ্যাজাকের আলো, রঙিন চাঁদোয়া, আহারে, এতো তাড়াতাড়ি সব কী ক’রে যে গল্প হয়ে যায়। মনে পড়ে ভরতের কথা, ভানুর কথা। চোখ করকর করে হৈরবের; ভানু তো গেল, কিন্তু সেই থেকে সবকিছু আঁধার। কেউ হাসে না, কেউ মন খুলে কথা বলে না, সকলের অমতে মুসলমানের ঘরে গিয়ে উঠলো ভানু, জাতের মুখ কালি।

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৭৮)

প্রতিদিন একটি রুমাল (পর্ব-৬)

১২:০০:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ জুন ২০২৫

হৈরব ও ভৈরব

মাঠ ঘাটে রোদ খাঁ খাঁ করে, রোদময় চিলের চিৎকার। এক একবার বিস্তীর্ণ দুপুর ঝনঝন ক’রে বেজে ওঠে। ঝলসানো গাছপালা মুখ নিচু ক’রে আচ্ছন্নপ্রায় দাঁড়িয়ে থাকে। এরই মাঝে এক একটি গন্ধ নেশার মতো জড়িয়ে ধরে হৈরবকে, সে বুঝতে পারে বৌনার ডালে ডালে এখন মঞ্জরি, কি আনন্দ, কী আনন্দ, ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছি নামে। এক একটা গন্ধ এমন এক একটা স্মৃতি, যাতে নখের কোনো আঁচড় নেই, দাঁতের কোনো দাগ নেই, ছিমছাম, নির্ভার, অবিরল। কাঁঠালের মুচির গন্ধে হৈরবের বুক গুমরে ওঠে।

টুনটুনি পাখি চিরকালই তার চোখে একটা আশ্চর্য প্রাণী, যেমন কাচকি মাছ; এইতো একফোঁটা অথচ এরাও কি স্বচ্ছন্দে বেঁচে থাকে, তাল মিলিয়ে বংশ বৃদ্ধি ক’রে চলে। একটা টুনটুনি, যার ঠোঁটে তুলো, চোখে রাজ্যের বিস্ময়, আকন্দগাছের শাখায় দোল খেয়ে ফরফর ক’রে একদিকে উড়ে যায়; হৈরবের মনে শিশিরের ছোঁয়ায় পদ্মকোরক শিরশির ক’রে ওঠে, ঐ যে তিনি, তিনি নিরভিমান, তিনি নম্র, তিনি ব্যাকুল, তিনি বলেন আমি একফোঁটা, আমি তুচ্ছ, অতিতুচ্ছ।

ভিটির খুব কাছে টেকের কোল ঘেঁষে একফালি জমি। গম বুনেছিল ভৈরব, ফলন ভালো নয়; আপন মনে সে এখন সেই ছন্নছাড়া চেহারার রুখু রুখু গোছাগুলো ঘরে তোলায় ব্যস্ত। ডাঁটাশাকও বুনেছিলো একপাশে, তার চেহারাও পোকায় খাওয়া, নির্বোধ অনিচ্ছায় কেমন যেন লাবণ্যহীন দেখায় পাতাগুলো, সবকিছু অচেনা মনে হয় হৈরবের, এখন আর কোনো কিছুতেই সে ছিরিছাঁদ দেখে না।

দূরে ইছামতি, রুপোর সুতোয় বোনা দুপুর রোদের পাড়, পাড়ের গায়ে নৌকোর ফোঁটা ফোঁটা নকশা; মন হু হু করে, কত মানুষের কথা মনে পড়ে, কি সুন্দর সুন্দর সব মানুষ, বড় বড় বাবুরা, গমগমে মণ্ডপ, হ্যাজাকের আলো, রঙিন চাঁদোয়া, আহারে, এতো তাড়াতাড়ি সব কী ক’রে যে গল্প হয়ে যায়। মনে পড়ে ভরতের কথা, ভানুর কথা। চোখ করকর করে হৈরবের; ভানু তো গেল, কিন্তু সেই থেকে সবকিছু আঁধার। কেউ হাসে না, কেউ মন খুলে কথা বলে না, সকলের অমতে মুসলমানের ঘরে গিয়ে উঠলো ভানু, জাতের মুখ কালি।