০৪:৪৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

প্রতিদিন একটি রুমাল (পর্ব-৫)

হৈরব ও ভৈরব

‘এ-রে, কিনা বাজান! চ্যাট বাজাইছি! হৈরব হইলো ইয়া, লোম! যহন মনিষ্যি আছিলো না, তহন বাজনা আছিল; পর্বত বাইজা উঠছে, জল বাইজা উঠছে, মাটি বাইজা উঠছে, ধরিত্রী বাইজা উঠছে, বাইজা উঠছে আকাশ। তারপর স্যান বাইজা উঠলো মনুষ্যজন্ম, বাইজা উঠলো মনুষ্যধর্ম, তর গিয়া মানবজীবন, জয়-গুরু।’

‘হরি-বোল!’ হৈরবের গলা জড়িয়ে হেসে কুটপাট হয় দয়া, ‘হরিবোল, হরিব্বোল!’

ভৈরব ধমক মেরে বলে, ‘পিসি, পাইলেন কি আপনেরা, খামোকা মায়েরে চেতাইতাছেন ক্যান! হ্যার গাওন শুরু হইলে থামাতেই পারবেন নি?’

‘ই-রে, কিনা একখান গাইলাইন্যা! যেমুন তর মায়ের রইছে মুখ, আমাগোর নাই’, দয়া রুখে উঠে বলে, ‘হ্যার ডরেনি তর পিসির চক্ষে ঘুম নাই, হ্যা ক্যাঠায়? হ্যারে দয়া কইরা আমরা আনছিলাম, বাপমায়ে দাসী কইরা আনছিলো; হ্যা যহন আছিলো না এ বাইতে, আমরা আছিলাম-‘

মুখের কথা কেড়ে নিয়ে হৈরব বলে, ‘উঠানে গান্দাফুল আছিলো, দোপাটি আছিলো, রক্তজবা আছিলো, কৃষ্ণকলি আছিলো, স্থলপদ্ম আছিলো, গন্ধরাজ আছিলো, কিনা আছিলো, বাবুরা আছিলো, পালপার্বণ আছিলো, ঢাকীগ ভাত আছিলো, গায়ে শাল আছিলো; অহনে পিন্দনের তেনাও নাই-‘

ঘরের ভেতর থেকে এক ঝটকায় বেরিয়ে আসে যোগমায়া, তার চোখে ধকধক ক’রে আগুন জ্বলে। চিৎকার করে যোগমায়া বলে, ‘অই বাঞ্ছামাগী, অই ভাতারখাকি, ভায়েরে লয়া থাকবার পারছ নাই, ভায়ের লগে বিয়ায় বইতে পারছ নাই, সাইধ্যানি আইছিলাম তগো ফুডা কপালে, না তর যক্ষারুণী বাপে আনছিলো, পচতাছে অহনে নরকে’ ‘পচতাছে না উঠে দাঁড়িয়ে তার নিজস্ব ভঙ্গিতে মুখ ঝামটা দিয়ে দয়া বলে, ‘হ্যাঁ তোমারে আনছিলো বইলাই স্বর্গবাসী হইছে। দেইখা শুইন্যা কানীবৌ আনছিলো, মনে থাকবো ক্যান! কিনা আছিলো ছিরিখান হাতের কাজ ফেলে উঠে যায় ভৈরব কোথায় একটু বাধে, তা না হলে একটা কুরুক্ষেত্র কাণ্ড বাধিয়ে দিতে পারতো সে।

যোগমায়া পা লম্বা ক’রে কাঁদতে বসে, মাঝে মাঝে মাটিতে মাথা খোঁড়ে।

 

প্রতিদিন একটি রুমাল (পর্ব-৫)

১২:০০:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ জুন ২০২৫

হৈরব ও ভৈরব

‘এ-রে, কিনা বাজান! চ্যাট বাজাইছি! হৈরব হইলো ইয়া, লোম! যহন মনিষ্যি আছিলো না, তহন বাজনা আছিল; পর্বত বাইজা উঠছে, জল বাইজা উঠছে, মাটি বাইজা উঠছে, ধরিত্রী বাইজা উঠছে, বাইজা উঠছে আকাশ। তারপর স্যান বাইজা উঠলো মনুষ্যজন্ম, বাইজা উঠলো মনুষ্যধর্ম, তর গিয়া মানবজীবন, জয়-গুরু।’

‘হরি-বোল!’ হৈরবের গলা জড়িয়ে হেসে কুটপাট হয় দয়া, ‘হরিবোল, হরিব্বোল!’

ভৈরব ধমক মেরে বলে, ‘পিসি, পাইলেন কি আপনেরা, খামোকা মায়েরে চেতাইতাছেন ক্যান! হ্যার গাওন শুরু হইলে থামাতেই পারবেন নি?’

‘ই-রে, কিনা একখান গাইলাইন্যা! যেমুন তর মায়ের রইছে মুখ, আমাগোর নাই’, দয়া রুখে উঠে বলে, ‘হ্যার ডরেনি তর পিসির চক্ষে ঘুম নাই, হ্যা ক্যাঠায়? হ্যারে দয়া কইরা আমরা আনছিলাম, বাপমায়ে দাসী কইরা আনছিলো; হ্যা যহন আছিলো না এ বাইতে, আমরা আছিলাম-‘

মুখের কথা কেড়ে নিয়ে হৈরব বলে, ‘উঠানে গান্দাফুল আছিলো, দোপাটি আছিলো, রক্তজবা আছিলো, কৃষ্ণকলি আছিলো, স্থলপদ্ম আছিলো, গন্ধরাজ আছিলো, কিনা আছিলো, বাবুরা আছিলো, পালপার্বণ আছিলো, ঢাকীগ ভাত আছিলো, গায়ে শাল আছিলো; অহনে পিন্দনের তেনাও নাই-‘

ঘরের ভেতর থেকে এক ঝটকায় বেরিয়ে আসে যোগমায়া, তার চোখে ধকধক ক’রে আগুন জ্বলে। চিৎকার করে যোগমায়া বলে, ‘অই বাঞ্ছামাগী, অই ভাতারখাকি, ভায়েরে লয়া থাকবার পারছ নাই, ভায়ের লগে বিয়ায় বইতে পারছ নাই, সাইধ্যানি আইছিলাম তগো ফুডা কপালে, না তর যক্ষারুণী বাপে আনছিলো, পচতাছে অহনে নরকে’ ‘পচতাছে না উঠে দাঁড়িয়ে তার নিজস্ব ভঙ্গিতে মুখ ঝামটা দিয়ে দয়া বলে, ‘হ্যাঁ তোমারে আনছিলো বইলাই স্বর্গবাসী হইছে। দেইখা শুইন্যা কানীবৌ আনছিলো, মনে থাকবো ক্যান! কিনা আছিলো ছিরিখান হাতের কাজ ফেলে উঠে যায় ভৈরব কোথায় একটু বাধে, তা না হলে একটা কুরুক্ষেত্র কাণ্ড বাধিয়ে দিতে পারতো সে।

যোগমায়া পা লম্বা ক’রে কাঁদতে বসে, মাঝে মাঝে মাটিতে মাথা খোঁড়ে।