০৪:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

প্রতিদিন একটি রুমাল (পর্ব-৪)

হৈরব ও ভৈরব

‘ঠিকোই, ঠিকোই, সাধ হইতো সবতেরে রানী কইরা রাখি, তর বউঠাইনে চাইলে তবে না স্যান, হ্যা যদি জাগা না দ্যায়! জাগা দিব হ্যা?’

ভৈরব অস্বস্তিতে আরো রুক্ষ হয়ে ওঠে। শরীরে ক্ষতচিহ্ন থাকলে তার জন্যে তার তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই, এতোসব ঘোরপ্যাঁচ সে বোঝে না, খোলা চোখে দেখেই সে রুষ্ট হয়, তৃপ্ত হয়; বাবা ও পিসির ঠাট্টাবটকেরা তার কাছে অর্থহীন কলরব মনে হয়।

‘বুঝছস দয়া-‘ ভৈরবের দিকে আঙুল তুলে হৈরব বলে, ‘হ্যার যে হইবো না স্যা আমি আগেই বুঝছিলাম। হ্যার বাপে আছিলো বারোআনির বাজনদার, হ্যা চারআনিরও হইবার পারে নাই। পারবো ক্যামনে, যেমুন-তেমুন কইরানি সব কাম চলে? কি দিয়া নাও-এর গোছা বানাইতাছে দ্যাখ। অহনে কই, কামিনী গাছটারে কিয়ের লাইগা রাইখা দিছস, কাইটা ফালাইলেই পারস।

একবার ধরছ গয়া, একবার একবার ধরছ জাম্বুরা, হ্যা দিয়ানি চোক হয়রে বোদাই? কামিনী ডালার চোক না হইলে তর বাপেনি ঢোলে বারি দিছে? জিগায়া দেহিছ মাইনসেরে, দেহিছ কি কয়! জিগায়া দেহিছ দত্তগো, ক্যামনে কাছা খুইলা লইছিলাম বরইশালে নট্টগো, থম ধইরা দেখছিলো

আমাগো কয়কীর্তনের বাহাদুর ঋষিদাসেরা। কয় বলে ঢাক লয়া বাহাদুরি কইরো। ঢোলকের তোমরা কি বুঝো। কি বুঝি? বুঝায়া দিছিলাম হ্যাগো, শ্যাষম্যাষ লুটায়া কুল পায় না, পায়ের ধুলা দাও, ওস্তাদ মানি, ওস্তাদ অনুমতি করে তো আমু, নৈলে এই দ্যাশে আর না। ঢাক। ঢাক বইলা কথা, ঢাকী বইলা কথা; যে নিকি নিজেরে বাজাইয়া থুইছে হ্যার কাছে যা দিবা হ্যা তাই বাজায়া দ্যাখাইবো। দ্যাখ্যাইতারব না? জিগায়া দেহিছ নাগারচিগো, হ্যারা কি কয়। কয় হৈরব, তুমি কারে পাইছিলা, কে তোমারে দিছে, যা ধরো তাই বাজাও এ্যামুন, হাতের মদে কি আছে তোমার। আরে পাগল, তরা বুঝছ না, হাত কি বাজাইব, বাজায় গিয়া মন; পেরথম নিজেরে বাজান শিখ, শ্যাষম্যাষ যা ধরছ হেই বাইজা উঠব, জয়গুরু!’

দয়া হাসে। হৈরবের অনর্গল কথার ভেতরে যেখানে ছিটেফোঁটা মাত্র শৃঙ্খলা, ঠিক সেখানেই চিমটি কেটে মজা পায় সে। বলে, ‘তা, আর কারে কারে তুমি বাজায়া দেখছিলা, কওনা দাদা।’

 

 

প্রতিদিন একটি রুমাল (পর্ব-৪)

১২:০০:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ জুন ২০২৫

হৈরব ও ভৈরব

‘ঠিকোই, ঠিকোই, সাধ হইতো সবতেরে রানী কইরা রাখি, তর বউঠাইনে চাইলে তবে না স্যান, হ্যা যদি জাগা না দ্যায়! জাগা দিব হ্যা?’

ভৈরব অস্বস্তিতে আরো রুক্ষ হয়ে ওঠে। শরীরে ক্ষতচিহ্ন থাকলে তার জন্যে তার তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই, এতোসব ঘোরপ্যাঁচ সে বোঝে না, খোলা চোখে দেখেই সে রুষ্ট হয়, তৃপ্ত হয়; বাবা ও পিসির ঠাট্টাবটকেরা তার কাছে অর্থহীন কলরব মনে হয়।

‘বুঝছস দয়া-‘ ভৈরবের দিকে আঙুল তুলে হৈরব বলে, ‘হ্যার যে হইবো না স্যা আমি আগেই বুঝছিলাম। হ্যার বাপে আছিলো বারোআনির বাজনদার, হ্যা চারআনিরও হইবার পারে নাই। পারবো ক্যামনে, যেমুন-তেমুন কইরানি সব কাম চলে? কি দিয়া নাও-এর গোছা বানাইতাছে দ্যাখ। অহনে কই, কামিনী গাছটারে কিয়ের লাইগা রাইখা দিছস, কাইটা ফালাইলেই পারস।

একবার ধরছ গয়া, একবার একবার ধরছ জাম্বুরা, হ্যা দিয়ানি চোক হয়রে বোদাই? কামিনী ডালার চোক না হইলে তর বাপেনি ঢোলে বারি দিছে? জিগায়া দেহিছ মাইনসেরে, দেহিছ কি কয়! জিগায়া দেহিছ দত্তগো, ক্যামনে কাছা খুইলা লইছিলাম বরইশালে নট্টগো, থম ধইরা দেখছিলো

আমাগো কয়কীর্তনের বাহাদুর ঋষিদাসেরা। কয় বলে ঢাক লয়া বাহাদুরি কইরো। ঢোলকের তোমরা কি বুঝো। কি বুঝি? বুঝায়া দিছিলাম হ্যাগো, শ্যাষম্যাষ লুটায়া কুল পায় না, পায়ের ধুলা দাও, ওস্তাদ মানি, ওস্তাদ অনুমতি করে তো আমু, নৈলে এই দ্যাশে আর না। ঢাক। ঢাক বইলা কথা, ঢাকী বইলা কথা; যে নিকি নিজেরে বাজাইয়া থুইছে হ্যার কাছে যা দিবা হ্যা তাই বাজায়া দ্যাখাইবো। দ্যাখ্যাইতারব না? জিগায়া দেহিছ নাগারচিগো, হ্যারা কি কয়। কয় হৈরব, তুমি কারে পাইছিলা, কে তোমারে দিছে, যা ধরো তাই বাজাও এ্যামুন, হাতের মদে কি আছে তোমার। আরে পাগল, তরা বুঝছ না, হাত কি বাজাইব, বাজায় গিয়া মন; পেরথম নিজেরে বাজান শিখ, শ্যাষম্যাষ যা ধরছ হেই বাইজা উঠব, জয়গুরু!’

দয়া হাসে। হৈরবের অনর্গল কথার ভেতরে যেখানে ছিটেফোঁটা মাত্র শৃঙ্খলা, ঠিক সেখানেই চিমটি কেটে মজা পায় সে। বলে, ‘তা, আর কারে কারে তুমি বাজায়া দেখছিলা, কওনা দাদা।’