হৈরব ও ভৈরব
‘করছ কি করছ কি, তর মাতা বিগরাইছেনি ভৈরব, চিল্লাস ক্যান?’
ভৈরবের চোখ থেকে আগুন ঠিকরে বের হয়, ‘ফিরান দিয়া বহেন, ফিরান দিয়া বহেন, দশখুশি বাজাই দ্যাহেন ক্যামনে, মাইনশের চামড়ার ছানিতে দ্যাহেন কেমুন বাজে…’
সরোষে সে বাঁশের কাচা চালায়।
প্রাণভয়ে ভীত হতচকিত গনিমিয়া খেতের ওপর গড়ান খেয়ে খেয়ে ততোক্ষণে বেশ খানিকটা দূরে সরে গিয়েছে, তার কানের ভেতরে তখন তুবড়িবাঁশির চিৎকার; দানবীয় উল্লাসে মূর্তিমান ভৈরব তখনো কাচার মাথায় আগুনের ফুলকি ছোটাচ্ছে।
গনিমিয়ার পিঠ নয়, পরিশ্রান্ত ভৈরব একসময় অবাক বিস্ময়ে দেখে এতোক্ষণ সে তার নিজের ঢাকের গায়েই সর্বশক্তি দিয়ে আঘাতের পর আঘাত হেনেছে; চামড়ার দেয়াল আর ছানি ফেঁসে গেছে, চুরচুর হয়ে ছিটকে পড়েছে টনটনে আমকাঠ, বেঘোরে নিজের ঢাকটাকেই চুরমার করেছে এতোক্ষণ।
‘ল, তর কাচা ল,’ কলুবাড়ির বাঁশঝাড়ের দিকে সজোরে সেটাকে ছুড়ে দিয়ে ভৈরব বলে, ‘ধর, তর ছিট তরে ফিরায়া দিলাম,’ তারপর সে শুরু করে দৌড়; মাথার ভেতরের বিদ্যুৎচমকে এক একবার ঝলসে ওঠে কয়কীর্তন
গ্রাম, ঝলসে ওঠে ঋষিদাসদের জাফরিকাটা মুখ আর বর্শার ফলা, মশালের আলো।
ইছামতির পাড়ের মানুষগুলো এক একটা মাংসপিণ্ডমাত্র, আর কয়কীর্তনের মানুষজন পেয়েছে পদ্মার দুরন্ত স্বভাব; সে রীতিমতো রোমাঞ্চিত হয়।
১৯৭৮