০১:০৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

প্রতিদিন একটি রুমাল (পর্ব-১৬)

হৈরব ও ভৈরব

মাঠঘাট চড়বড় ক’রে বাজতে থাকে। হাওয়ার গায়ে এতোক্ষণ যে ভ্যাপসা গরমের ঝাঁঝ লেগে ছিলো ধীরে ধীরে তা উবে যায়; ইছামতির বুকে যেনবা এইমাত্র তার আঁচল ভিজিয়ে নিয়েছে, কি মনোরম, দেহমন জুড়িয়ে যায় গনিমিয়ার।

ভৈরব আড়চোখে এক একবার দেখে নেয় গনিমিয়াকে, সবকিছু তার কাছে একটা দুঃস্বপ্নই মনে হয়। নাকে দড়ি দিয়ে এই লোকটি তাকে ইচ্ছেমতো নাচাচ্ছে, কেনা গোলাম সে, চারপাশে আগুনের বেড়; লোকটি কেবল নিজের আনন্দ চেনে। গা হাত পা টনটন করে ভৈরবের। শেষে অদ্ভুত এক আচ্ছন্নতা তার কাঁধে ভর করে; ঢাকের ছানির গায়ে ছিট আর কাচার তুমুল ছটফটানি অবিকল বুড়ো হৈরবের গলার স্বর নকল ক’রে তাকে বলে: মনিষ্যি আছিল না, বাজনা আছিল, পর্বত বাইজা উঠছে, জল বাইজা উঠছে, মাটি বাইজা উঠছে, ধরিত্রী বাইজা উঠছে, বাইজা উঠছে আকাশ, বাইজা উঠছে মনুষ্যজন্ম, বাইজা উঠছে মনুষ্যধর্ম, বাইজা উঠছে মানবজীবন, বাইজা উঠছে, বাইজা উঠছে-

ভৈরব চিৎকার ক’রে বলে, ‘বাবু হুনতাছেন?”

‘তয়

‘কি হুনতাছেন?’

‘সধবার কেউ নয়, বিধবার বন্ধু।’

‘দশখুশি, বাবু দশখুশি। ঢাকে ক্যামনে কথা কইতাছে হুইনা দ্যাহেন।

দশখুশি, চৌদ্দমাত্রা, মানবজীবন কথা কইতাছে বাবু। দশখুশি বাবু, চৌদ্দমাত্রা, মনুষ্যধর্ম বোল তুলতাছে, আখিজলে আখিজলে, টলমল টলমল, ধরাতল ধরাতল, রসাতল, হা-‘

ধুপধাপ ক’রে নেচে ওঠে ভৈরব। পায়ের চাপে চাপড়া চাপড়া মাটি ব’সে যায়। ঢাকের গরগরে শব্দে চিড় খাওয়া জ্যোৎস্না জোনাকির মতো মাঠময় ঝুরঝুর ঝ’রে পড়ে। একটু একটু ক’রে ঘোমটামোড়া লোকালয় পিছু হটে, দূরে স’রে যায়; সমগ্র বিশ্ব চরাচর এখন উপুড় হয়ে পেতে দিয়েছে তার পিঠ, ভৈরবের পায়ের তলায়, সমগ্র শোভা দিয়েছে তার তলপেট, ভৈরবের পায়ের তলায়; বাবরি চুল ঝাঁকিয়ে, পেশি ফুলিয়ে, দুরমুশের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে সে সেইসব কাদাছানা করে রুদ্ধশ্বাসে।

প্রতিদিন একটি রুমাল (পর্ব-১৬)

১২:০০:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫

হৈরব ও ভৈরব

মাঠঘাট চড়বড় ক’রে বাজতে থাকে। হাওয়ার গায়ে এতোক্ষণ যে ভ্যাপসা গরমের ঝাঁঝ লেগে ছিলো ধীরে ধীরে তা উবে যায়; ইছামতির বুকে যেনবা এইমাত্র তার আঁচল ভিজিয়ে নিয়েছে, কি মনোরম, দেহমন জুড়িয়ে যায় গনিমিয়ার।

ভৈরব আড়চোখে এক একবার দেখে নেয় গনিমিয়াকে, সবকিছু তার কাছে একটা দুঃস্বপ্নই মনে হয়। নাকে দড়ি দিয়ে এই লোকটি তাকে ইচ্ছেমতো নাচাচ্ছে, কেনা গোলাম সে, চারপাশে আগুনের বেড়; লোকটি কেবল নিজের আনন্দ চেনে। গা হাত পা টনটন করে ভৈরবের। শেষে অদ্ভুত এক আচ্ছন্নতা তার কাঁধে ভর করে; ঢাকের ছানির গায়ে ছিট আর কাচার তুমুল ছটফটানি অবিকল বুড়ো হৈরবের গলার স্বর নকল ক’রে তাকে বলে: মনিষ্যি আছিল না, বাজনা আছিল, পর্বত বাইজা উঠছে, জল বাইজা উঠছে, মাটি বাইজা উঠছে, ধরিত্রী বাইজা উঠছে, বাইজা উঠছে আকাশ, বাইজা উঠছে মনুষ্যজন্ম, বাইজা উঠছে মনুষ্যধর্ম, বাইজা উঠছে মানবজীবন, বাইজা উঠছে, বাইজা উঠছে-

ভৈরব চিৎকার ক’রে বলে, ‘বাবু হুনতাছেন?”

‘তয়

‘কি হুনতাছেন?’

‘সধবার কেউ নয়, বিধবার বন্ধু।’

‘দশখুশি, বাবু দশখুশি। ঢাকে ক্যামনে কথা কইতাছে হুইনা দ্যাহেন।

দশখুশি, চৌদ্দমাত্রা, মানবজীবন কথা কইতাছে বাবু। দশখুশি বাবু, চৌদ্দমাত্রা, মনুষ্যধর্ম বোল তুলতাছে, আখিজলে আখিজলে, টলমল টলমল, ধরাতল ধরাতল, রসাতল, হা-‘

ধুপধাপ ক’রে নেচে ওঠে ভৈরব। পায়ের চাপে চাপড়া চাপড়া মাটি ব’সে যায়। ঢাকের গরগরে শব্দে চিড় খাওয়া জ্যোৎস্না জোনাকির মতো মাঠময় ঝুরঝুর ঝ’রে পড়ে। একটু একটু ক’রে ঘোমটামোড়া লোকালয় পিছু হটে, দূরে স’রে যায়; সমগ্র বিশ্ব চরাচর এখন উপুড় হয়ে পেতে দিয়েছে তার পিঠ, ভৈরবের পায়ের তলায়, সমগ্র শোভা দিয়েছে তার তলপেট, ভৈরবের পায়ের তলায়; বাবরি চুল ঝাঁকিয়ে, পেশি ফুলিয়ে, দুরমুশের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে সে সেইসব কাদাছানা করে রুদ্ধশ্বাসে।