হৈরব ও ভৈরব
‘আমারেনি হে কামলা ঠাউরাইছে-‘ ভৈরব আহত গলায় বলে, ‘আমাগোর কুনো ইজ্জত নাই!’
‘ই-রে, কিনা ইজ্জতখান! আইছে একখান ইজ্জতের ব্যাপারী। কথা না বারায়া ঢাক লয়া ছুট’ দয়া হাসতে হাসতে বলে, ‘ডাকতররে খুশি করন চাই, নাহৈলে কইলাম দাদায় নতুন কইরা আবার খাঁথার ভেতরে গিয়া হানদাইবো!’
হাসতে হাসতে পেটে খিল লাগে দয়ার।
গনিমিয়া বলে, ‘গলাখান ভিজায়া লইবি নিকিরে ভৈরব?’
ভৈরব মাথা নাড়ে।
‘ভালো জিনিস-‘
‘অভ্যাস নাই!’
‘ঐসব লাগেনিরে বোদাই, চালাইলেই চলে। তগো দিয়া কিচ্ছু হইবো না, দুনিয়াই চিনলিনা অহনতরি!’
‘আপনেরাই চিনেন-
‘চিনতে তো হইবোই, না চিনলে চলবো?’
একটু একটু ক’রে জ্যোৎস্না ফুটছে। সার্ট খুলে গায়ে ফুরফুরে হাওয়া লাগায় গনি মিয়া। কলুবাড়ির পুকুরের একটা পাড়ে রীতিমতো জঙ্গল, সেখানে বয়ড়াবাঁশের ঝাড়ে ঝিরঝির করে হাওয়া। তা বেশ, এইভাবেই যেন বাকি জীবনটা কেটে যায়; চোখ বন্ধ ক’রে মনে মনে নিজের ইচ্ছেমতো কিছু দৃশ্য দেখে নেয় গনি মিয়া। মেরেকেটে এইভাবেই নিজের ভালোটুকুর, আনন্দটুকুর, জোগানদারি ক’রে যেতে হবে জীবনভর, তা না হলে কে কাকে দেয়, কে কাকে সাধে, কার এতো মাথাব্যথা। ভাগ্যিশ, থলের ভেতর পুরে অর্ধেক বোতলখানা সে এনেছিল, তরতরে হাওয়ায় সারা দেহ এখন একটা নৌকোর মতো যেদিকে ইচ্ছে ভেসে যেতে চায়। তা বেশ, আরো একটু ঝুল কাটাকাটি খেলুক দয়া।
বড় মজার এ খেলা, সামনে কোনো একটা লোভ না থাকলে তার নিজেরই আজকাল রোজগারে মন বসে না; মনে হয় কি হবে এতোসব ক’রে, সব পণ্ডশ্রম, বেকার। জগতে এমন কিছু মেয়েমানুষ আছে বলেই ফুটফুটে জ্যোৎস্না সাবানের ফেনার মতো সারা গায়ে মেখে মাঠঘাটে ধপধপে হয়ে ব’সে থাকতে ইচ্ছে করে।
ভৈরব বলে, ‘আরো বাজামু?’
‘বাজা, তর ইচ্ছামতো চালায়া যা, আমারে কি জিগাছ, দেহছ না খুন হয়া রইছি।’
মাহমুদুল হক 



















