হৈরব ও ভৈরব
‘কইকি, বিষয়-সম্পত্তি বেইচ্চালাও-‘
হৈরব বলে, ‘রইছে তো যেমুন এই ভিটিবাড়িটুকুন আর দেড়কানি জমি-‘
‘লাগলে ট্যাকা লও’
‘ঘরবাড়ি বেইচ্যা দাঁরামু কই বাবু, আমাগো কি আর যাওনের কুনো জাগা আছে।’
‘যাইতে লাগবো ক্যান, যতদিন ইচ্ছা থাকবা-‘
হৈরব মাথা নাড়ে। বলে, ‘না বাবু, বাপদাদার মাটি, মনে লইলেও পাপ’
গনিমিয়া তেড়ে উঠে বলে, ‘হইলো! অহনে আমার ট্যাকার কি করবা কয়ালাও!’
‘সুজানগরের নামকীর্তনটা হয়া লউক’ হৈরব চোরের মতো তার দিকে পিটপিট ক’রে তাকিয়ে বলে, ‘যতোটা পারি মিটায়া দিমু।’
এই সময় ভৈরব এসে দাঁড়ায় উঠোনে, দাঁড়িয়ে মড়মড়ে বাঁশপাতার মতো একটা গামছা দিয়ে ডলে ডলে গায়ের ঘাম মোছে।
এতোক্ষণে অবেলার নেশা গনিমিয়ার ভেতরে গেঁজে ওঠে। তিরিক্ষি মেজাজে সে বলে, ‘এই খাসিটারে খেদায়া দাও, ঘরে এমুন জোয়ান পোলা থাইকাও ফায়দাটা হইতাছে কি আঁধার ঘনিয়ে এসেছিলো অনেক আগেই, পষ্ট মুখ দেখা যায় না ভৈরবের; খুঁটিগাড়া হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে কেবল।
গনিমিয়ার মেজাজ এখন ঘনঘন ফের বদলায়। ভৈরবের উদ্দেশে বলে, ঢাকে বারি দিবার পারবিনিরে?’
ভৈরব বলে, ‘বুঝি না-
‘বুঝন লাগেনিরে বোদাই一’ প্রবল উৎসাহে দোল খেয়ে হৈরব বলে, ‘বাবু বাজনা শুনবো, বাজায়া শুনা!’
গনিমিয়া উঠে দাঁড়াতেই হৈরব ব্যাকুল হয়ে বললে, ‘উঠতাছেন যেমুন?’
‘গরমখান কি, শইল জ্বলতাছে, দেহি মাঠের মদে গিয়া বহা যায় কি না-
শক্তমুখে গড়গড় ক’রে মাঠের দিকে নেমে যায় গনিমিয়া এইটুকু ব’লেই; কিছু না বুঝে হৈরব ফ্যালফ্যাল ক’রে তাকিয়ে থাকে।