০১:১১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

প্রতিদিন একটি রুমাল (পর্ব-১৩)

হৈরব ও ভৈরব

বছর বছর ইন্ডিয়ায় বেড়ানোর শখ পুরোদস্তুর মিটে গেছে, এখন তার হাতটান, অকালবৃষ্টিতে ভুষ্টিনাশ হয়ে গেছে আলুর। অল্প-বিস্তর যাওবা কিছু তুলতে পেরেছিল ঘরে, তারও দফারফা ক’রে দিয়েছে ইঁদুর। পাট বুনেছে ঠিকই, কিন্তু অবস্থাগতিক সুবিধের নয় বিশেষ; আকাশের অবস্থা দেখে মনে হয় না দু’চার দিনের মধ্যে এক আধ পশলা বৃষ্টি নামবে। রাশি রাশি সমস্যার কথা চারপাশ থেকে এনে স্তূপাকার করে গনি মিয়া এইভাবে। দয়া বলে, ‘অহনে বুইঝা দ্যাহেন দাদার অবস্থাখান তাহৈলে কেমুন-‘

অনেক আগেই ভাঁজ ভেঙে গিয়েছিলো গনিমিয়ার। দয়া সামনে এসে দাঁড়ালে কোনোদিনই সে হৈরবকে এঁটে উঠতে পারে না, কোথায় একটু বাধে, কথার ধার ভোঁতা মেরে যায়; দয়া যদি তাকে একটু সুনজরে দেখে আরো অনেক কিছুই সে নতুনভাবে বিবেচনা ক’রে দেখতে রাজি, আরো দু’কাঠি ভালোমানুষি দেখানো তখন তার পক্ষে নিছক হাততালি দেবার মতো একটা সহজ ব্যাপার হয়ে যায়।

মুশকিল তার পক্ষে এই যে, দয়াকে কখনোই সে ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারে না। অবশ্য মেয়েমানুষের ব্যাপারে হাঁইফাই ক’রে সবকিছু বুঝতে চাওয়ার মতো তুমুল আগ্রহও তার নেই, সে জানে বুঝতে গেলেই শেষ পর্যন্ত সে আর সেই আগের মেয়েমানুষটি থাকবে না, হয়ে দাঁড়াবে কাঁধের বোঝা।

ফাঁকতালে মোটামুটি ভাবগতিক সম্পর্কে একটা ধারণা ক’রে নেওয়া চাই, এ না হলে পা বাড়ানোর অনেক ল্যাঠা, কেবল এইটুকুই। সে তো সবকিছুই বুঝে ফেলেছিল দেবকীর, একেবারে আগাপাশতলা; ফলে জলবোড়ার মতো হাতপায়ে জড়িয়ে গিয়েছিলো দেবকী, বেরজাকে সে লাথি মেরে ফেলে দিত বিছানা থেকে। তবু অনেক সহজ ছিলো দেবকীর ব্যাপারটা। সহজ ছিলো ব’লেই নিছক কাটাকুটি খেলার দাগ মুছে দেবার মতো ক’রে সামাল দিতে পেরেছিলো সবকিছুর; দয়া গড়া ভিন্ন ধাতুতে, এটুকু বুঝবার মতো বুদ্ধি তার ঘটে আছে। এই মেয়েমানুষটিকে ট্যাপ খাওয়ানো হাতে হুঁকো ধরার মতো কোনো ব্যাপার নয়, হয়তো এতদিন পর সত্যি সত্যিই সে জাত খেলুড়ের পাল্লায় পড়েছে। গনিমিয়ার মনমেজাজ খাট্টা হয়ে যায়।

 

 

প্রতিদিন একটি রুমাল (পর্ব-১৩)

১২:০০:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫

হৈরব ও ভৈরব

বছর বছর ইন্ডিয়ায় বেড়ানোর শখ পুরোদস্তুর মিটে গেছে, এখন তার হাতটান, অকালবৃষ্টিতে ভুষ্টিনাশ হয়ে গেছে আলুর। অল্প-বিস্তর যাওবা কিছু তুলতে পেরেছিল ঘরে, তারও দফারফা ক’রে দিয়েছে ইঁদুর। পাট বুনেছে ঠিকই, কিন্তু অবস্থাগতিক সুবিধের নয় বিশেষ; আকাশের অবস্থা দেখে মনে হয় না দু’চার দিনের মধ্যে এক আধ পশলা বৃষ্টি নামবে। রাশি রাশি সমস্যার কথা চারপাশ থেকে এনে স্তূপাকার করে গনি মিয়া এইভাবে। দয়া বলে, ‘অহনে বুইঝা দ্যাহেন দাদার অবস্থাখান তাহৈলে কেমুন-‘

অনেক আগেই ভাঁজ ভেঙে গিয়েছিলো গনিমিয়ার। দয়া সামনে এসে দাঁড়ালে কোনোদিনই সে হৈরবকে এঁটে উঠতে পারে না, কোথায় একটু বাধে, কথার ধার ভোঁতা মেরে যায়; দয়া যদি তাকে একটু সুনজরে দেখে আরো অনেক কিছুই সে নতুনভাবে বিবেচনা ক’রে দেখতে রাজি, আরো দু’কাঠি ভালোমানুষি দেখানো তখন তার পক্ষে নিছক হাততালি দেবার মতো একটা সহজ ব্যাপার হয়ে যায়।

মুশকিল তার পক্ষে এই যে, দয়াকে কখনোই সে ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারে না। অবশ্য মেয়েমানুষের ব্যাপারে হাঁইফাই ক’রে সবকিছু বুঝতে চাওয়ার মতো তুমুল আগ্রহও তার নেই, সে জানে বুঝতে গেলেই শেষ পর্যন্ত সে আর সেই আগের মেয়েমানুষটি থাকবে না, হয়ে দাঁড়াবে কাঁধের বোঝা।

ফাঁকতালে মোটামুটি ভাবগতিক সম্পর্কে একটা ধারণা ক’রে নেওয়া চাই, এ না হলে পা বাড়ানোর অনেক ল্যাঠা, কেবল এইটুকুই। সে তো সবকিছুই বুঝে ফেলেছিল দেবকীর, একেবারে আগাপাশতলা; ফলে জলবোড়ার মতো হাতপায়ে জড়িয়ে গিয়েছিলো দেবকী, বেরজাকে সে লাথি মেরে ফেলে দিত বিছানা থেকে। তবু অনেক সহজ ছিলো দেবকীর ব্যাপারটা। সহজ ছিলো ব’লেই নিছক কাটাকুটি খেলার দাগ মুছে দেবার মতো ক’রে সামাল দিতে পেরেছিলো সবকিছুর; দয়া গড়া ভিন্ন ধাতুতে, এটুকু বুঝবার মতো বুদ্ধি তার ঘটে আছে। এই মেয়েমানুষটিকে ট্যাপ খাওয়ানো হাতে হুঁকো ধরার মতো কোনো ব্যাপার নয়, হয়তো এতদিন পর সত্যি সত্যিই সে জাত খেলুড়ের পাল্লায় পড়েছে। গনিমিয়ার মনমেজাজ খাট্টা হয়ে যায়।