সপ্তম পরিচ্ছেদ
আহত লোকদের বয়ে আমরা চালাঘরটায় নিয়ে গেলুম।
‘ওদের খিদে পেয়েচে কী?’ মৌমাছি-পালক জানতে চাইলেন। ‘তাইলে, ওদের মাথার নিচে রুটি আর শোরের চর্বি রাখা আচে, খেতে পারে। গোরু দোয়া হলি গিন্নি খানিকটে দুধ দিয়ে যাবে’খন।’
নদী-চরের ওধারে আমাদের বাহিনীর নাগাল পেতে হলে আমাদের তখনই যাত্রা করার দরকার ছিল। আহত কমরেডদের জন্যে যতদূর যা করবার ছিল যদিও আমরা যথাসাধ্য তা করেছিলুম, তবু ওই শত্রু-এলাকায় একা তাদের ফেলে রেখে চলে যেতে হচ্ছে বলে কেমন-যেন অস্বস্তি বোধ করছিলুম।
মনে হল, তিমোর্কিন আমাদের অবস্থাটা বুঝতে পেরেছেন।
রক্তশূন্য, শুকনো ঠোঁট নেড়ে তিনি বললেন, ‘আচ্ছা, ভাই, বিদায়। চুবুক, তোমারে ধন্যবাদ, তোমারে ধন্যবাদ, বাচ্চা। আশা করি, এই জেবনেই ফের মিলতে পারব তোমাদের সঙ্গে।’
আহতদের মধ্যে সামারিন অন্য দু-জনের চেয়ে বেশি দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। তিনি শুধু চোখ খুলে তাকিয়ে বন্ধুর মতো মাথা নাড়লেন। বাচ্চা বেদে চুপ করে রইল। দুই হাতের ওপর ভর দিয়ে গম্ভীরভাবে তাকিয়ে রইল আমাদের দিকে।
তারপর একটুখানি নিস্তেজ হাসি হাসল।
‘ভাইরা, বন্ধুরা, বিদায়,’ চুবুক বললেন। ‘শিগগিরি ভালো হয়ে ওঠ সব। এ-বাড়ির কত্তা আমাদের বিশ্বস্ত নোক, তোমাদের বিপদের মধ্যি ফেলে রেখে পালাবে না। আচ্ছা, চলি, ভালো থাক।’
দরজার দিকে ফিরে যেতে-যেতে সজোরে কাশলেন চুবুক। তারপর রাইফেলের কাঁদোর ওপর তামাকের পাইপটা ঠুকতে লাগলেন।
পেছন থেকে জোর রিট্রিনে গলায় বাচ্চা বেদে ডেকে বলল, ‘শুভেচ্ছা জানাই কমরেডরা, তোমাদের জয় হোক!’ ওর গলার আওয়াজ শুনে দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে পড়ে ফিরে তাকালুম আমরা। ‘দুনিয়ার সব শ্বেতরক্ষীদের হারিয়ে তোমাদের জয় হোক,’ পরিষ্কার গলায় স্পষ্ট করে শেষের কথাগুলো জুড়ে দিয়ে কালো চুলে-ভরা মাথাটা নরম ভেড়ার চামড়ার ওপর ধপ করে নামিয়ে নিল বাচ্চা বেদে।