সপ্তম পরিচ্ছেদ
আমি কী ভাবছিলুম চুবুককে খুলে বললুম। আশা করছিলুম, বলশেভিকদের সঙ্গে আমার ভাগ্যকে জড়িয়ে ফেলার জন্যে চুবুক আমার বুদ্ধিমত্তা আর বিচক্ষণতার প্রশংসা করবেন। কিন্তু চুবুক মোটেই প্রশংসা করার জন্যে ব্যস্ত হলেন না। অন্ততপক্ষে আধখানা পাইপের তামাক ফাকে শেষ করার পর ধীরেসুস্থে গম্ভীরভাবে মন্তব্য করলেন:
‘ওরকম হয়েই থাকে। কখনও কখনও কাউরে নিজেরেই মাথা খাটিয়ে সর্বকিছু ভেবে বার করতি হয়। যেমন, লেনিনরে করতি হয়েছিল। তোমার বা অবিশ্যি আমি জানি নে।’
‘কী বলছেন আপনি?’ অত্যন্ত ক্ষুন্ন হয়ে নিচু গলায় বললুম। ‘নিজে থেকেই এই সিদ্ধান্তে এসেছি আমি।’
‘নিজে থেকেই তা এয়েচ বই কি। তোমার তাই মনে লিতেছে বটে। তবে কি জান, জীবনটাই তোমারে এই পথের হদিস দেচে। এই আর কি। ধর না কেন, পেরথম, তোমার বাবারে ওরা মেরে ফেলল। দ্বিতীয়, বলশেভিকদের সঙ্গে তোমার যোগাযোগ ঘটল। তিন লম্বর, ইশকুলের বন্ধুদের সঙ্গে তোমার ঝামেলা হল। চার লম্বর কথা, ইশকুল থেকে তোমারে খেদিয়ে দিল। এই ঘটনাগুলো সব বাদ দিলে পর, বাকিটা তোমার নিজের হাত বলতি পার বটে। তবে, মনে কিছু কোরো না,’ আমার মনে উনি আঘাত দিয়ে ফেলেছেন বুঝতে পেরে এবার যোগ করে দিলেন, ‘তোমার কাছে এয়ার বেশি তো কেউ আশা করে নাই, লয় কি?’
‘তাহলে দেখা যাচ্ছে, আমি নিজেকেই ঠকাচ্ছিলুম এতদিন তাহলে আমি লাল নই?’ আগের চেয়ে আরও একটু চাপা গলায় বললুম। ‘আমার ধারণা তাহলে সত্যি নয়। কিন্তু আপনার সঙ্গে কী আমি সব সময়ে পর্যবেক্ষণের কাজে বেরোই নি? নিজের ইচ্ছেয় লড়াই করবার জন্যে আমি কি ফ্রন্টে যাচ্ছিলুম না?… অথচ এখন…’
‘গাধা কোথাকার! এখন কিছুই না! হ্যাঁ, আমি যা কচ্চিলাম সবটাই ঘটনাচক্র, বইলে? যেমন, ধর, তোমারে যদি মিলিটারি ইশকুলে পড়ানো হত তাইলে তোমারে ওরা কাদেত বানিয়ে ছাড়ত আর এতক্ষণ তুমি জেনারেল কালেদিনের অধীনে থেকে নড়াই করতে।’
‘আর আপনি?’
‘আমি?’ চুবুক হাসলেন। ‘আমার পেছনে বিশ বছর খনি-মজুরের কাজের ইতিহাস আছে, বুইলে খোকা। আর তোমার কোনো কাদেত ইশকুলই আমার মন থেকে সেই বিশ বছররে মুছে দিতে পারত না।’