সপ্তম পরিচ্ছেদ
আমি বললুম, ‘বাচ্চা বেদে, তুমি আমাদের সঙ্গে আসতে গেলে কেন? তোমার জাতভাইদের তো ফৌজে যোগ দিতে ডাকা হয় নি?’
কথাটা শুনে ওর চোখের শাদা অংশ দুটো যেন ঝলসে উঠল। কনুইয়ের ওপর ভর দিয়ে উ’চু হয়ে উঠে ছেলেটা জবাব দিলে:
‘ফৌজে ডাকবে তবে আসব কেনে? আমি নিজের থেকে এয়েচি। বেদের তাঁবুতে-তাঁবুতে ঘোরা আর ভালো লাগল নি। আমার বাপ ঘোড়া চুরি করতে জানে, মা মানুষির কপাল গনে বলে। আমার ঠাকুন্দাও ঘোড়া চুরি করত, আর ঠাকুমা মানুষির কপাল গনত। কিন্তুক ওদের কেউ তো সুখ চুরি করতে পারলেক না, লিজেদের কপাল গনতেও পারলেক না। ও সব ভুল, সব ভুল।’
উত্তেজনায় উঠে বসেছিল বাচ্চা বেদে। কিন্তু ওর জখম-হওয়া জায়গাটায় যন্ত্রণা হতে থাকায় কুকড়ে গিয়ে অস্পষ্ট একটা কারানির আওয়াজ তুলে জড়ো-করা পাতার স্তূপের ওপর আবার শুয়ে পড়ল।
দুধটা ফুটে উঠল আর থালিটা আগুনের ওপর থেকে নামাতে না-নামাতে খানিকটা দুধ উপচে পড়ে আগুন দিল নিবিয়ে। হঠাৎ বাচ্চা বেদে হেসে উঠল।
‘কী হল? হাসছ যে বড়?’
খুশির একটা ভঙ্গি করে মাথা ঝাঁকাল ছেলেটা। বলল, ‘আমি ভাবছিলম কাঁ, সকল মানুষিও অমনি করে। রুশী বল, ইহুদি বল, জর্জিয়ান বল কি তাতার বল, সব্বাই পুরনো জীবন মেনে লিয়ে চলে। কিন্তু যেই তাদের সহ্যি করার ক্ষ্যামতা টগবগ করে ফুটতে থাকে, অমনি তারা ঝাঁপ দিয়ে পড়ে আগুনে। থালি থেকে জল যেমন পড়লেক না, অমনি। আমার হালও অমনিধারা.. যতদিন পারলম সহ্যি করে নিলম, তারপর রাইফেল উঠিয়ে লিয়ে কী করে ভালোভাবে বাঁচা যায় তাই ঢাড়তে বেরিয়ে পড়লম।’
‘তুমি কী মনে কর, ভালো জীবনের সন্ধান তুমি পাবে?’
‘একা তো পাব না, কুছুতে না তবে সবাই যখন এত করে চাইছে, সবাই মিলমিশ করে চূড়লে মিলতে পারে বটেক।’