১১:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

পর্ব ৫: ‘আজ রবিবার’ — হাস্যরসের মাঝে পারিবারিক সত্য

নাটকের নাম: আজ রবিবার
রচয়িতা ও পরিচালক: হানিফ সংকেত
প্রচারকাল: ঈদুল ফিতর, ১৯৮৪, বাংলাদেশ টেলিভিশন
অভিনয়: আফজাল হোসেন, জুঁই, তারিক আনাম খান, শমী কায়সার, রওশন জামিল, মাহমুদুল ইসলাম
প্রধান চরিত্র: ভাইয়া (আফজাল হোসেন)

নাটকের সারসংক্ষেপ ও বিশ্লেষণ:

‘আজ রবিবার’ ছিল এক আধুনিক বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবারের গল্প যেখানে হাস্যরস, সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং বাস্তবতার আলো-ছায়া একসঙ্গে জড়ানো। ঈদের ছুটিতে ভাইয়া হঠাৎ করে বাড়িতে ফিরে এলে পরিবারের প্রতিটি সদস্যের মধ্যে ঘটে যায় নানা রকম মজার ঘটনা। নাটকের শুরুতেই ছোট ভাইয়ের কবিতা আবৃত্তি, যেটি কেউ বুঝতে পারে না, সেটি থেকেই শুরু হয় হাস্যকর পরিস্থিতি। এরপর দেখা যায় বাবা তার কড়া শাসনের মধ্যে সন্তানের স্বাধীনতা দিতে পারছেন না, মা অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ, আর বোন প্রেম করছে গোপনে।

নাটকের প্রতিটি দৃশ্য হাসির খোরাক হলেও, তাতে লুকিয়ে থাকে গভীর মানবিক সম্পর্কের ছবি। উদাহরণস্বরূপ, একটি দৃশ্যে ভাইয়া বোনের প্রেমিককে অপ্রত্যাশিতভাবে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “আচ্ছা, তুমি ঠিক করেছো তো? আমাদের বোনকে সামলাতে পারবে?”—এই সংলাপটি ছিল দর্শকদের জন্য চমকপ্রদ এবং আবেগঘন এক মুহূর্ত।

নাটকটি কেবল পারিবারিক হাস্যরস নয়, বরং আধুনিক মূল্যবোধ ও প্রজন্মগত দ্বন্দ্বও সুন্দরভাবে তুলে ধরে।

অভিনয় ও চরিত্র বিশ্লেষণ:

আফজাল হোসেন ‘ভাইয়া’ চরিত্রে ছিলেন এই নাটকের প্রাণ। তার উপস্থিতি, সংলাপ বলার ভঙ্গি, এবং ব্যক্তিত্ব নাটকটিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। ভাইয়া একদিকে প্রগতিশীল, অন্যদিকে রসিক ও দায়িত্ববান। তিনি প্রতিটি পারিবারিক সমস্যা নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য করেন, কিন্তু সমস্যার সমাধানও করেন নিজের মতো করে।

শমী কায়সার নাটকের বোন চরিত্রে ছিলেন স্বতঃস্ফূর্ত। তার চোখের ভাষা ও হাসির তীক্ষ্ণতা পরিবারের নতুন প্রজন্মের স্বপ্ন ও সংকটকে তুলে ধরে।

পার্শ্বচরিত্র হিসেবে রওশন জামিল ছিলেন নাটকের মা, যিনি অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ। তার সংলাপ—“ঈদের দিনটায় একসঙ্গে খেতে বসতে পারা কি চাট্টিখানি কথা?”—পরিবারের আবেগিক কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়ায়।

তারিক আনাম খান এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক চরিত্রে ছিলেন, যিনি হঠাৎ ঘরে ঢুকে তত্ত্ব আলোচনা শুরু করেন এবং পরে বোনের প্রেমিক হিসেবে আবির্ভূত হন। তার চরিত্রটি নাটকে চমৎকার ছন্দ এনে দেয়।

নির্দেশনা ও নির্মাণ শৈলী:

হানিফ সংকেত এই নাটকের প্রতিটি সংলাপে বাস্তবতা ও ব্যঙ্গের সমন্বয় ঘটিয়েছেন। নাটকের কাহিনির সঙ্গে সংগীত, ক্যামেরার কাজ ও সংলাপ এতটাই ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিল যে, দর্শক নিজের পরিবারকেই যেন দেখতে পান পর্দায়। নাটকে ব্যবহৃত ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ড ছিল হালকা, যাতে সংলাপের গুরুত্ব কমে না যায়।

প্রতিটি দৃশ্যে ছিল টাইমিং-এর নিখুঁততা, বিশেষত ছোট ভাইয়ের কবিতা পাঠ বা মায়ের কান্না থামিয়ে আবার রান্নাঘরে ছুটে যাওয়ার দৃশ্যগুলো। নাটকটিতে রসবোধ ও আবেগের এমন সমন্বয় ছিল যা একাধারে দর্শককে হাসায়, আবার মনও ছুঁয়ে যায়।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব:

‘আজ রবিবার’ ছিল এমন এক ঈদ নাটক, যা শুধু হাসায়নি, বরং পরিবারের মূল্য, আবেগ ও ঘরোয়া সম্পর্কের সত্যিকারের রূপ দেখিয়েছে। আজও এটি বিটিভির সেরা ঈদ কমেডি নাটকের তালিকায় স্থান পায়।

পর্ব ৫: ‘আজ রবিবার’ — হাস্যরসের মাঝে পারিবারিক সত্য

১০:০৫:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ জুন ২০২৫

নাটকের নাম: আজ রবিবার
রচয়িতা ও পরিচালক: হানিফ সংকেত
প্রচারকাল: ঈদুল ফিতর, ১৯৮৪, বাংলাদেশ টেলিভিশন
অভিনয়: আফজাল হোসেন, জুঁই, তারিক আনাম খান, শমী কায়সার, রওশন জামিল, মাহমুদুল ইসলাম
প্রধান চরিত্র: ভাইয়া (আফজাল হোসেন)

নাটকের সারসংক্ষেপ ও বিশ্লেষণ:

‘আজ রবিবার’ ছিল এক আধুনিক বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবারের গল্প যেখানে হাস্যরস, সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং বাস্তবতার আলো-ছায়া একসঙ্গে জড়ানো। ঈদের ছুটিতে ভাইয়া হঠাৎ করে বাড়িতে ফিরে এলে পরিবারের প্রতিটি সদস্যের মধ্যে ঘটে যায় নানা রকম মজার ঘটনা। নাটকের শুরুতেই ছোট ভাইয়ের কবিতা আবৃত্তি, যেটি কেউ বুঝতে পারে না, সেটি থেকেই শুরু হয় হাস্যকর পরিস্থিতি। এরপর দেখা যায় বাবা তার কড়া শাসনের মধ্যে সন্তানের স্বাধীনতা দিতে পারছেন না, মা অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ, আর বোন প্রেম করছে গোপনে।

নাটকের প্রতিটি দৃশ্য হাসির খোরাক হলেও, তাতে লুকিয়ে থাকে গভীর মানবিক সম্পর্কের ছবি। উদাহরণস্বরূপ, একটি দৃশ্যে ভাইয়া বোনের প্রেমিককে অপ্রত্যাশিতভাবে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “আচ্ছা, তুমি ঠিক করেছো তো? আমাদের বোনকে সামলাতে পারবে?”—এই সংলাপটি ছিল দর্শকদের জন্য চমকপ্রদ এবং আবেগঘন এক মুহূর্ত।

নাটকটি কেবল পারিবারিক হাস্যরস নয়, বরং আধুনিক মূল্যবোধ ও প্রজন্মগত দ্বন্দ্বও সুন্দরভাবে তুলে ধরে।

অভিনয় ও চরিত্র বিশ্লেষণ:

আফজাল হোসেন ‘ভাইয়া’ চরিত্রে ছিলেন এই নাটকের প্রাণ। তার উপস্থিতি, সংলাপ বলার ভঙ্গি, এবং ব্যক্তিত্ব নাটকটিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। ভাইয়া একদিকে প্রগতিশীল, অন্যদিকে রসিক ও দায়িত্ববান। তিনি প্রতিটি পারিবারিক সমস্যা নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য করেন, কিন্তু সমস্যার সমাধানও করেন নিজের মতো করে।

শমী কায়সার নাটকের বোন চরিত্রে ছিলেন স্বতঃস্ফূর্ত। তার চোখের ভাষা ও হাসির তীক্ষ্ণতা পরিবারের নতুন প্রজন্মের স্বপ্ন ও সংকটকে তুলে ধরে।

পার্শ্বচরিত্র হিসেবে রওশন জামিল ছিলেন নাটকের মা, যিনি অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ। তার সংলাপ—“ঈদের দিনটায় একসঙ্গে খেতে বসতে পারা কি চাট্টিখানি কথা?”—পরিবারের আবেগিক কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়ায়।

তারিক আনাম খান এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক চরিত্রে ছিলেন, যিনি হঠাৎ ঘরে ঢুকে তত্ত্ব আলোচনা শুরু করেন এবং পরে বোনের প্রেমিক হিসেবে আবির্ভূত হন। তার চরিত্রটি নাটকে চমৎকার ছন্দ এনে দেয়।

নির্দেশনা ও নির্মাণ শৈলী:

হানিফ সংকেত এই নাটকের প্রতিটি সংলাপে বাস্তবতা ও ব্যঙ্গের সমন্বয় ঘটিয়েছেন। নাটকের কাহিনির সঙ্গে সংগীত, ক্যামেরার কাজ ও সংলাপ এতটাই ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিল যে, দর্শক নিজের পরিবারকেই যেন দেখতে পান পর্দায়। নাটকে ব্যবহৃত ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ড ছিল হালকা, যাতে সংলাপের গুরুত্ব কমে না যায়।

প্রতিটি দৃশ্যে ছিল টাইমিং-এর নিখুঁততা, বিশেষত ছোট ভাইয়ের কবিতা পাঠ বা মায়ের কান্না থামিয়ে আবার রান্নাঘরে ছুটে যাওয়ার দৃশ্যগুলো। নাটকটিতে রসবোধ ও আবেগের এমন সমন্বয় ছিল যা একাধারে দর্শককে হাসায়, আবার মনও ছুঁয়ে যায়।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব:

‘আজ রবিবার’ ছিল এমন এক ঈদ নাটক, যা শুধু হাসায়নি, বরং পরিবারের মূল্য, আবেগ ও ঘরোয়া সম্পর্কের সত্যিকারের রূপ দেখিয়েছে। আজও এটি বিটিভির সেরা ঈদ কমেডি নাটকের তালিকায় স্থান পায়।