০৩:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫
খামার থেকে উৎসবের টেবিল, টার্কির নীরব দীর্ঘ পথ নতুন জলবায়ু নিয়মে বৈশ্বিক শিপিং শিল্পের জ্বালানি রূপান্তর তারকাখ্যাতির নতুন সংজ্ঞা, সিনেমার শেষ ভরসা বর্ষসেরা পডকাস্টে যুদ্ধের ছায়া থেকে কৃত্রিম প্রেম, অপরাধ থেকে সংগীতের বিপ্লব আমাজনে তেলের জোয়ার, উন্নয়নের স্বপ্নে পরিবেশের দুশ্চিন্তা এআই ডেটা সেন্টারের বিস্তারে বিদ্যুৎ চাহিদা নিয়ে নতুন চাপ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার স্থপতিরা: যে বছর চিন্তাশীল যন্ত্র মানব সভ্যতার গতিপথ বদলে দিল চিকিৎসার অগ্রগতি থামিয়ে দিচ্ছে রাজনীতি, জনস্বাস্থ্যে দীর্ঘ ছায়া ভাঙা ঐকমত্যে জলবায়ু লড়াই, অর্থনীতির পথে এগোচ্ছে বিশ্ব দ্রুত ইউক্রেন শান্তিচুক্তির চাপের বিরুদ্ধে ইউরোপ

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ৩৪ তম কিস্তি )

  • Sarakhon Report
  • ১২:০০:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল ২০২৪
  • 89
রবীন্দ্রনাথ পরবর্তী সময়ে বাংলা সাহিত্যে আরেকটি নতুন যুগ সৃষ্টি হয়েছিলো। ভাষাকে মানুষের মুখের ভাষার কাছে নিয়ে আসা নয়, সাহিত্যে’র বিষয়ও হয়েছিলো অনেক বিস্তৃত। সাহিত্যে উঠে এসেছিলো পরিবর্তিত মন ও সমাজের নানান প্রাঙ্গন। সময়ের পথ ধরে সে যুগটি এখন নিকট অতীত। আর সে সাহিত্যও চিরায়ত সাহিত্য। দূর অতীত ও নিকট অতীতের সকল চিরায়ত সাহিত্য মানুষকে সব সময়ই পরিপূর্ণ মানুষ হতে সাহায্য করে। চিরায়ত সাহিত্যকে জানা ছাড়া বাস্তবে মানুষ তার নিজেকে সম্পূর্ণ জানতে পারে না।

সারাক্ষণের চিরায়ত সাহিত্য বিভাগে এবারে থাকছে মানিক বন্দোপধ্যায়ের দিবারাত্রির কাব্য।

দিবারাত্রির কাব্যে’র ভূমিকায় মানিক বন্দোপধ্যায় নিজেই যা লিখেছিলেন …..

দিবারাত্রির কাব্য আমার একুশ বছর বয়সের রচনা। শুধু প্রেমকে ভিত্তি করে বই লেখার সাহস ওই বয়সেই থাকে। কয়েক বছর তাকে তোলা ছিল। অনেক পরিবর্তন করে গত বছর বঙ্গশ্রীতে প্রকাশ করি।

দিবারাত্রির কাব্য পড়তে বসে যদি কখনো মনে হয় বইখানা খাপছাড়া, অস্বাভাবিক,- তখন মনে রাখতে হবে এটি গল্পও নয় উপন্যাসও নয়, রূপক কাহিনী। রূপকের এ একটা নূতন রূপ। একটু চিন্তা করলেই বোঝা যাবে বাস্তব জগতের সঙ্গে সম্পর্ক দিয়ে সীমাবদ্ধ করে নিলে মানুষের কতগুলি অনুভূতি যা দাঁড়ায়, সেইগুলিকেই মানুষের রূপ দেওয়া হয়েছে। চরিত্রগুলি কেউ মানুষ নয়, মানুষের Projection-মানুষের এক এক টুকরো মানসিক অংশ।

দিবা রাত্রির কাব্য

মানিক বন্দোপাধ্যায়

 

আর বসে কি হবে? চলুন পৌঁছে দেবেন।”

‘তুই কি একা এসেছিস নাকি, সুপ্রিয়া? একা এসে থাকলে একা যাওয়াই তো ভাল।’

‘একা কেন আসব? চাকরকে সঙ্গে এনেছিলাম, আপনি আছেন শুনে তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। চলুন, যাই।’

ছলনা নয়, হেরম্ব সত্য সত্যই আলস্য বোধ করে বলল, ‘আর একটু বোস না সুপ্রিয়া?’ সুপ্রিয়া মাথা নেড়ে বলল, ‘না, আর একদণ্ড বসব না। কি করে বসতে বলছেন?’

হেরম্ব আশ্চর্য হয়ে বলল, ‘তুই আসতে পারিস, আমি তোকে বসতে বলতে পারি না? আমার ভদ্রতা জ্ঞান নেই?’

সুপ্রিয়া গম্ভীর হয়ে বলল, ‘ভদ্রতা-জ্ঞানটা কোন কাজের জ্ঞান নয়। আমি এখানে কেন এসেছি জানা দূরে থাক, পুরীতে কেন এসেছি ও-জ্ঞান দিয়ে আপনি তাও অনুমান করতে পারবেন না। না যদি যান তো বলুন মুখ ফুটে, এখানে আমার গা কেমন করছে, আমি ছুটে পালিয়ে যাই। পুরী, শহরে আপনি আমাকে আজ-কালের মধ্যে খুঁজে বার করতে পারবেন সে ভরসা আছে।’

হেরম্ব আর কথা না বলে জামা গায়ে দিল। বারান্দা পার হয়ে তারা বাড়ির বাইরে যাবার সরু প্যাসেজটিতে ঢুকবে, ওঘর থেকে বেরিয়ে এসে আনন্দ একরকম তাদের পথরোধ করে দাঁড়াল।

‘কোথায় যাচ্ছ?’

হেরম্ব বলল, ‘একে বাড়ি পৌঁছে দিতে যাচ্ছি।’

‘খেয়ে যাও।’

সুপ্রিয়া এর জবাব দিল। বলল, ‘আমার ওখানে খাবে।’

আনন্দ বলল, ‘পেটে খিদে নিয়ে অব্দুর যাবে? সকালে উঠে খেতে না

পেলে ওর মাথা ঘোরে তা জানেন?’

সুপ্রিয়া বলল, ‘মাথা না হয় একদিন ঘুরলই।’

হেরম্ব অভিভূত হয়ে লক্ষ্য করল, পরস্পরের চোখের দিকে চেয়ে তারা আর চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছে না। সুপ্রিয়ার চোখে গভীর বিদ্বেষ, তাই দেখে আনন্দ অবাক্ হয়ে গেছে। দু’জনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে হেরম্ব সসঙ্কোচে বলল, ‘আমার খিদে পায়নি আনন্দ, একটুও পায়নি।’

আনন্দ অভিমান করে বলল, ‘পায়নি? তা পাবে কেন? আমি কিছু বুঝি নে কিনা!’

হেরম্ব তখন নিরুপায় হয়ে জিজ্ঞাসা করল, ‘এবার কি কর্তব্য, সুপ্রিয়া?’

জনপ্রিয় সংবাদ

খামার থেকে উৎসবের টেবিল, টার্কির নীরব দীর্ঘ পথ

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ৩৪ তম কিস্তি )

১২:০০:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল ২০২৪
রবীন্দ্রনাথ পরবর্তী সময়ে বাংলা সাহিত্যে আরেকটি নতুন যুগ সৃষ্টি হয়েছিলো। ভাষাকে মানুষের মুখের ভাষার কাছে নিয়ে আসা নয়, সাহিত্যে’র বিষয়ও হয়েছিলো অনেক বিস্তৃত। সাহিত্যে উঠে এসেছিলো পরিবর্তিত মন ও সমাজের নানান প্রাঙ্গন। সময়ের পথ ধরে সে যুগটি এখন নিকট অতীত। আর সে সাহিত্যও চিরায়ত সাহিত্য। দূর অতীত ও নিকট অতীতের সকল চিরায়ত সাহিত্য মানুষকে সব সময়ই পরিপূর্ণ মানুষ হতে সাহায্য করে। চিরায়ত সাহিত্যকে জানা ছাড়া বাস্তবে মানুষ তার নিজেকে সম্পূর্ণ জানতে পারে না।

সারাক্ষণের চিরায়ত সাহিত্য বিভাগে এবারে থাকছে মানিক বন্দোপধ্যায়ের দিবারাত্রির কাব্য।

দিবারাত্রির কাব্যে’র ভূমিকায় মানিক বন্দোপধ্যায় নিজেই যা লিখেছিলেন …..

দিবারাত্রির কাব্য আমার একুশ বছর বয়সের রচনা। শুধু প্রেমকে ভিত্তি করে বই লেখার সাহস ওই বয়সেই থাকে। কয়েক বছর তাকে তোলা ছিল। অনেক পরিবর্তন করে গত বছর বঙ্গশ্রীতে প্রকাশ করি।

দিবারাত্রির কাব্য পড়তে বসে যদি কখনো মনে হয় বইখানা খাপছাড়া, অস্বাভাবিক,- তখন মনে রাখতে হবে এটি গল্পও নয় উপন্যাসও নয়, রূপক কাহিনী। রূপকের এ একটা নূতন রূপ। একটু চিন্তা করলেই বোঝা যাবে বাস্তব জগতের সঙ্গে সম্পর্ক দিয়ে সীমাবদ্ধ করে নিলে মানুষের কতগুলি অনুভূতি যা দাঁড়ায়, সেইগুলিকেই মানুষের রূপ দেওয়া হয়েছে। চরিত্রগুলি কেউ মানুষ নয়, মানুষের Projection-মানুষের এক এক টুকরো মানসিক অংশ।

দিবা রাত্রির কাব্য

মানিক বন্দোপাধ্যায়

 

আর বসে কি হবে? চলুন পৌঁছে দেবেন।”

‘তুই কি একা এসেছিস নাকি, সুপ্রিয়া? একা এসে থাকলে একা যাওয়াই তো ভাল।’

‘একা কেন আসব? চাকরকে সঙ্গে এনেছিলাম, আপনি আছেন শুনে তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। চলুন, যাই।’

ছলনা নয়, হেরম্ব সত্য সত্যই আলস্য বোধ করে বলল, ‘আর একটু বোস না সুপ্রিয়া?’ সুপ্রিয়া মাথা নেড়ে বলল, ‘না, আর একদণ্ড বসব না। কি করে বসতে বলছেন?’

হেরম্ব আশ্চর্য হয়ে বলল, ‘তুই আসতে পারিস, আমি তোকে বসতে বলতে পারি না? আমার ভদ্রতা জ্ঞান নেই?’

সুপ্রিয়া গম্ভীর হয়ে বলল, ‘ভদ্রতা-জ্ঞানটা কোন কাজের জ্ঞান নয়। আমি এখানে কেন এসেছি জানা দূরে থাক, পুরীতে কেন এসেছি ও-জ্ঞান দিয়ে আপনি তাও অনুমান করতে পারবেন না। না যদি যান তো বলুন মুখ ফুটে, এখানে আমার গা কেমন করছে, আমি ছুটে পালিয়ে যাই। পুরী, শহরে আপনি আমাকে আজ-কালের মধ্যে খুঁজে বার করতে পারবেন সে ভরসা আছে।’

হেরম্ব আর কথা না বলে জামা গায়ে দিল। বারান্দা পার হয়ে তারা বাড়ির বাইরে যাবার সরু প্যাসেজটিতে ঢুকবে, ওঘর থেকে বেরিয়ে এসে আনন্দ একরকম তাদের পথরোধ করে দাঁড়াল।

‘কোথায় যাচ্ছ?’

হেরম্ব বলল, ‘একে বাড়ি পৌঁছে দিতে যাচ্ছি।’

‘খেয়ে যাও।’

সুপ্রিয়া এর জবাব দিল। বলল, ‘আমার ওখানে খাবে।’

আনন্দ বলল, ‘পেটে খিদে নিয়ে অব্দুর যাবে? সকালে উঠে খেতে না

পেলে ওর মাথা ঘোরে তা জানেন?’

সুপ্রিয়া বলল, ‘মাথা না হয় একদিন ঘুরলই।’

হেরম্ব অভিভূত হয়ে লক্ষ্য করল, পরস্পরের চোখের দিকে চেয়ে তারা আর চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছে না। সুপ্রিয়ার চোখে গভীর বিদ্বেষ, তাই দেখে আনন্দ অবাক্ হয়ে গেছে। দু’জনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে হেরম্ব সসঙ্কোচে বলল, ‘আমার খিদে পায়নি আনন্দ, একটুও পায়নি।’

আনন্দ অভিমান করে বলল, ‘পায়নি? তা পাবে কেন? আমি কিছু বুঝি নে কিনা!’

হেরম্ব তখন নিরুপায় হয়ে জিজ্ঞাসা করল, ‘এবার কি কর্তব্য, সুপ্রিয়া?’