০৭:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
চিতা-বাঘের শেষ আলোঝলক ঢাকা শহরের বাস সেবা: আধুনিকায়নের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা ইরান ইউরেনিয়াম সরিয়ে নিয়েছে এমন কোনো গোয়েন্দা তথ্য নেই: মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগন্নাথ মন্দির আর প্রসাদ বিতরণ নিয়ে কেন রাজনৈতিক বিতর্ক পশ্চিমবঙ্গে? মন্দির ভাঙচুরের ঘটনা ও গঙ্গা জলচুক্তি নবায়ন নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়া ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন: বাংলাদেশের বড় একটি ভুল, প্রতিশোধ বনাম সংস্কার সাকিব আল হাসান: বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের এক অমর কিংবদন্তি বাংলা নাটকের সুপারস্টার অপূর্বের জন্মদিন আজ শিবসা নদী: শতবর্ষী এক প্রাণপ্রবাহ ও তার সুন্দরবনের প্রভাব ইরান যুদ্ধ ও ‘ট্রাম্প নীতি’ চীনের বহুমুখী বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গিকে ঘোলাটে করে দিচ্ছে

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ৩৫ তম কিস্তি )

  • Sarakhon Report
  • ১২:০০:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ এপ্রিল ২০২৪
  • 26
রবীন্দ্রনাথ পরবর্তী সময়ে বাংলা সাহিত্যে আরেকটি নতুন যুগ সৃষ্টি হয়েছিলো। ভাষাকে মানুষের মুখের ভাষার কাছে নিয়ে আসা নয়, সাহিত্যে’র বিষয়ও হয়েছিলো অনেক বিস্তৃত। সাহিত্যে উঠে এসেছিলো পরিবর্তিত মন ও সমাজের নানান প্রাঙ্গন। সময়ের পথ ধরে সে যুগটি এখন নিকট অতীত। আর সে সাহিত্যও চিরায়ত সাহিত্য। দূর অতীত ও নিকট অতীতের সকল চিরায়ত সাহিত্য মানুষকে সব সময়ই পরিপূর্ণ মানুষ হতে সাহায্য করে। চিরায়ত সাহিত্যকে জানা ছাড়া বাস্তবে মানুষ তার নিজেকে সম্পূর্ণ জানতে পারে না।

সারাক্ষণের চিরায়ত সাহিত্য বিভাগে এবারে থাকছে মানিক বন্দোপধ্যায়ের দিবারাত্রির কাব্য।

দিবারাত্রির কাব্যে’র ভূমিকায় মানিক বন্দোপধ্যায় নিজেই যা লিখেছিলেন …..

দিবারাত্রির কাব্য আমার একুশ বছর বয়সের রচনা। শুধু প্রেমকে ভিত্তি করে বই লেখার সাহস ওই বয়সেই থাকে। কয়েক বছর তাকে তোলা ছিল। অনেক পরিবর্তন করে গত বছর বঙ্গশ্রীতে প্রকাশ করি।

দিবারাত্রির কাব্য পড়তে বসে যদি কখনো মনে হয় বইখানা খাপছাড়া, অস্বাভাবিক,- তখন মনে রাখতে হবে এটি গল্পও নয় উপন্যাসও নয়, রূপক কাহিনী। রূপকের এ একটা নূতন রূপ। একটু চিন্তা করলেই বোঝা যাবে বাস্তব জগতের সঙ্গে সম্পর্ক দিয়ে সীমাবদ্ধ করে নিলে মানুষের কতগুলি অনুভূতি যা দাঁড়ায়, সেইগুলিকেই মানুষের রূপ দেওয়া হয়েছে। চরিত্রগুলি কেউ মানুষ নয়, মানুষের Projection-মানুষের এক এক টুকরো মানসিক অংশ।

 

দিবা রাত্রির কাব্য

মানিক বন্দোপাধ্যায়

 

তাকে মধ্যস্থ মেনে হেরম্ব একরকম স্পষ্টই ইঙ্গিত করল যে, সে যখন বস্তুলে বড়, আনন্দের কাছে হার স্বীকার করে তারই উদারতা দেখানো উচিত। সুপ্রিয়া রাগ করে বলল, ‘আমি জানিনে।’

‘এখান থেকেই খেয়ে যাই, কি বলিস?’

‘তাও আমি জানিনে।’

হেরম্ব নির্বাক হয়ে গেল। আনন্দ একটু হেসে বলল, ‘আচ্ছা, আপনি যে এত জোর খাটাচ্ছেন, আপনার কি জোর আছে বলুন তো? ও আমাদের অতিখি, আপনার তো নয়।’

‘আমি ওর বন্ধু।’

আনন্দ আরও ব্যাপকভাবে হেসে বলল, ‘আমিও তো তাই!’

হেরম্ব কখনও কোন কারণে সুপ্রিয়ার মুখে হিংস্র ব্যঙ্গ শোনেনি, আজ শুনল, হঠাৎ মুচকে হেসে স্বপ্রিয়া বলল, ‘তুমি?’-বলে, এই একটিমাত্র শব্দে আনন্দকে একেবারে উড়িয়ে দিয়ে ক্ষণিকের বিরাম নিয়ে সে যোগ দিল, ‘ওর সঙ্গে, আমার যেদিন থেকে বন্ধুত্ব, তোমার তখন জন্মও হয়নি।’

আনন্দ আশ্চর্য হয়ে বলল, ‘যান! আমার জন্মের সময় আপনার আর কত বয়স ছিল? -কত আর বড় হবেন আপনি আমার চেয়ে? আপনার বয়স উনিশ-কুড়ির বেশী কখনো নয়।’ সুপ্রিয়া বুঝতে পারল না, হেরম্বই শুধু টের পেল আনন্দের এ প্রশ্ন কৃত্রিম

নয়, সে পরিহাস করেনি। সুপ্রিয়ার মুখ অন্ধকার হয়ে গেল। সে যেন হঠাৎ

ধমক দিয়ে বলল, ‘তুমি ছেলেমানুষ, তাই তোমকে কিছু বললাম না। বয়সে

যারা বড় আর কখনো তাদের সঙ্গে এ রকম ঠাট্টা ক’রো না।’

সুপ্রিয়ার ধমকে মুখ স্নান করে আনন্দ যা বলেছিল তার কোন মানে নেই,-শুধু একটি ‘আচ্ছা’। হেরম্ব ভাল করেই জানে সুপ্রিয়ার কাছে সে যে অপমান পেয়েছে তার জন্য আনন্দ তাকেই দায়ী করবে। দায়ী করে সে হয়ে থাকবে বিষণ্ণ। আনন্দের বর্তমান মানসিক অবস্থায় সহজে এর প্রতিকারও করা যাবে না।

গাড়িতে সুপ্রিয়ার সামনের আসনে বসে আনন্দের কথা ভাবা চলছিল। সে উঠে পাশে এসে বসায় হেরম্বের আর সে ক্ষমতা রইল না।

‘পাশে বসাই নিয়ম, না?’

হেরম্ব একটু ভেবে বলল, ‘অন্তত অনিয়ম নয়।’

সুপ্রিয়া হেসে বলল, ‘আসল কথা, কথা বলব। কে একটা লোক পিছনে উঠে বসেছে, শুনতে পাবে বলে সামনে এগিয়ে এলাম।’

‘তোর প্রগতির অর্থ খুব গভীর, সুপ্রিয়া।’

সুপ্রিয়া একটু অসন্তুষ্ট হয়ে বলল, ‘আপনার এই যে কথা বলার ঢঙ মন্ত্রদাতা গুরুর মতো, চিরকাল এই সুর শুনে আসছি।

হাঝা কথা বলেন, তাও মতো ভারী আওয়াজে।’

 

চিতা-বাঘের শেষ আলোঝলক

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ৩৫ তম কিস্তি )

১২:০০:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ এপ্রিল ২০২৪
রবীন্দ্রনাথ পরবর্তী সময়ে বাংলা সাহিত্যে আরেকটি নতুন যুগ সৃষ্টি হয়েছিলো। ভাষাকে মানুষের মুখের ভাষার কাছে নিয়ে আসা নয়, সাহিত্যে’র বিষয়ও হয়েছিলো অনেক বিস্তৃত। সাহিত্যে উঠে এসেছিলো পরিবর্তিত মন ও সমাজের নানান প্রাঙ্গন। সময়ের পথ ধরে সে যুগটি এখন নিকট অতীত। আর সে সাহিত্যও চিরায়ত সাহিত্য। দূর অতীত ও নিকট অতীতের সকল চিরায়ত সাহিত্য মানুষকে সব সময়ই পরিপূর্ণ মানুষ হতে সাহায্য করে। চিরায়ত সাহিত্যকে জানা ছাড়া বাস্তবে মানুষ তার নিজেকে সম্পূর্ণ জানতে পারে না।

সারাক্ষণের চিরায়ত সাহিত্য বিভাগে এবারে থাকছে মানিক বন্দোপধ্যায়ের দিবারাত্রির কাব্য।

দিবারাত্রির কাব্যে’র ভূমিকায় মানিক বন্দোপধ্যায় নিজেই যা লিখেছিলেন …..

দিবারাত্রির কাব্য আমার একুশ বছর বয়সের রচনা। শুধু প্রেমকে ভিত্তি করে বই লেখার সাহস ওই বয়সেই থাকে। কয়েক বছর তাকে তোলা ছিল। অনেক পরিবর্তন করে গত বছর বঙ্গশ্রীতে প্রকাশ করি।

দিবারাত্রির কাব্য পড়তে বসে যদি কখনো মনে হয় বইখানা খাপছাড়া, অস্বাভাবিক,- তখন মনে রাখতে হবে এটি গল্পও নয় উপন্যাসও নয়, রূপক কাহিনী। রূপকের এ একটা নূতন রূপ। একটু চিন্তা করলেই বোঝা যাবে বাস্তব জগতের সঙ্গে সম্পর্ক দিয়ে সীমাবদ্ধ করে নিলে মানুষের কতগুলি অনুভূতি যা দাঁড়ায়, সেইগুলিকেই মানুষের রূপ দেওয়া হয়েছে। চরিত্রগুলি কেউ মানুষ নয়, মানুষের Projection-মানুষের এক এক টুকরো মানসিক অংশ।

 

দিবা রাত্রির কাব্য

মানিক বন্দোপাধ্যায়

 

তাকে মধ্যস্থ মেনে হেরম্ব একরকম স্পষ্টই ইঙ্গিত করল যে, সে যখন বস্তুলে বড়, আনন্দের কাছে হার স্বীকার করে তারই উদারতা দেখানো উচিত। সুপ্রিয়া রাগ করে বলল, ‘আমি জানিনে।’

‘এখান থেকেই খেয়ে যাই, কি বলিস?’

‘তাও আমি জানিনে।’

হেরম্ব নির্বাক হয়ে গেল। আনন্দ একটু হেসে বলল, ‘আচ্ছা, আপনি যে এত জোর খাটাচ্ছেন, আপনার কি জোর আছে বলুন তো? ও আমাদের অতিখি, আপনার তো নয়।’

‘আমি ওর বন্ধু।’

আনন্দ আরও ব্যাপকভাবে হেসে বলল, ‘আমিও তো তাই!’

হেরম্ব কখনও কোন কারণে সুপ্রিয়ার মুখে হিংস্র ব্যঙ্গ শোনেনি, আজ শুনল, হঠাৎ মুচকে হেসে স্বপ্রিয়া বলল, ‘তুমি?’-বলে, এই একটিমাত্র শব্দে আনন্দকে একেবারে উড়িয়ে দিয়ে ক্ষণিকের বিরাম নিয়ে সে যোগ দিল, ‘ওর সঙ্গে, আমার যেদিন থেকে বন্ধুত্ব, তোমার তখন জন্মও হয়নি।’

আনন্দ আশ্চর্য হয়ে বলল, ‘যান! আমার জন্মের সময় আপনার আর কত বয়স ছিল? -কত আর বড় হবেন আপনি আমার চেয়ে? আপনার বয়স উনিশ-কুড়ির বেশী কখনো নয়।’ সুপ্রিয়া বুঝতে পারল না, হেরম্বই শুধু টের পেল আনন্দের এ প্রশ্ন কৃত্রিম

নয়, সে পরিহাস করেনি। সুপ্রিয়ার মুখ অন্ধকার হয়ে গেল। সে যেন হঠাৎ

ধমক দিয়ে বলল, ‘তুমি ছেলেমানুষ, তাই তোমকে কিছু বললাম না। বয়সে

যারা বড় আর কখনো তাদের সঙ্গে এ রকম ঠাট্টা ক’রো না।’

সুপ্রিয়ার ধমকে মুখ স্নান করে আনন্দ যা বলেছিল তার কোন মানে নেই,-শুধু একটি ‘আচ্ছা’। হেরম্ব ভাল করেই জানে সুপ্রিয়ার কাছে সে যে অপমান পেয়েছে তার জন্য আনন্দ তাকেই দায়ী করবে। দায়ী করে সে হয়ে থাকবে বিষণ্ণ। আনন্দের বর্তমান মানসিক অবস্থায় সহজে এর প্রতিকারও করা যাবে না।

গাড়িতে সুপ্রিয়ার সামনের আসনে বসে আনন্দের কথা ভাবা চলছিল। সে উঠে পাশে এসে বসায় হেরম্বের আর সে ক্ষমতা রইল না।

‘পাশে বসাই নিয়ম, না?’

হেরম্ব একটু ভেবে বলল, ‘অন্তত অনিয়ম নয়।’

সুপ্রিয়া হেসে বলল, ‘আসল কথা, কথা বলব। কে একটা লোক পিছনে উঠে বসেছে, শুনতে পাবে বলে সামনে এগিয়ে এলাম।’

‘তোর প্রগতির অর্থ খুব গভীর, সুপ্রিয়া।’

সুপ্রিয়া একটু অসন্তুষ্ট হয়ে বলল, ‘আপনার এই যে কথা বলার ঢঙ মন্ত্রদাতা গুরুর মতো, চিরকাল এই সুর শুনে আসছি।

হাঝা কথা বলেন, তাও মতো ভারী আওয়াজে।’