ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ শুরুর পর মধ্যপ্রাচ্যে তৈরি হওয়া উত্তেজনাকে ‘উদ্বেগজনক’ ও ‘বিপজ্জনক’ বলে বর্ণনা করেছিলেন রাশিয়ার কর্মকর্তারা। তা সত্ত্বেও, বর্তমান আবহে মস্কোর জন্য যে সমস্ত ইতিবাচক দিক থাকতে পারে, তার ওপর জোর দিয়েছে রুশ গণমাধ্যম।
যেসব দিক থেকে ইতিবাচক ফল আসতে পারে সেই তালিকায় রয়েছে-
- বিশ্ববাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি যা রাশিয়ার কোষাগারকে সমৃদ্ধ করতে পারে।
- ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ থেকে বিশ্বের নজর অন্যদিকে সরে যেতে পারে। যেমন রুশ সংবাদপত্র মস্কোভস্কি কমসোমোলেটস-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল “কিয়েভকে ভুলে যাওয়া হয়েছে”।
- চলমান সংঘাত নিরসনে মধ্যস্ততার জন্য ক্রেমলিন যে প্রস্তাব দিয়েছে সেটি গৃহীত হলে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ সত্ত্বেও তারা (রাশিয়া) নিজেদের মধ্যপ্রাচ্যের ‘কি প্লেয়ার’ বা প্রধান খেলোয়াড় এবং একইসঙ্গে শান্তি স্থাপনকারী হিসেবে তুলে ধরতে পারবে।
তবে ইসরাইলের সামরিক অভিযান যত দীর্ঘায়িত হবে, ততই তারা উপলব্ধি করবে যে বর্তমান পরিস্থিতিতে রাশিয়ার হারানোর মতো অনেক কিছুই আছে।
রুশ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আন্দ্রেই কোরতুনভ লিখেছেন, “সংঘাতের তীব্রতা বৃদ্ধি যেমন মস্কোর জন্য গুরুতর ঝুঁকি বাড়াবে, তেমনই তার জন্য সম্ভাব্য মূল্যও বয়ে আনবে।”
“বাস্তব চিত্র হচ্ছে, রাশিয়া এমন এক দেশের ওপর ইসরাইলের তরফে চালানো ব্যাপক হামলাকে ঠেকাতে পারেনি, যে দেশের সঙ্গে পাঁচ মাস আগে তারা কৌশলগত অংশীদারিত্ব বিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।”
“স্পষ্টতই মস্কো তাদের পক্ষ থেকে জারি করা রাজনৈতিক বিবৃতিতে ইসরাইলের নিন্দা জানানোর বাইরে কিছু করতে প্রস্তুত নয়। আবার তারা ইরানকে সামরিক সহায়তা দিতেও রাজি নয়,” বলেন তিনি।

চলতি বছরের শুরুতে রুশ-ইরান কৌশলগত অংশীদারিত্ব নিয়ে যে চুক্তিতে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান স্বাক্ষর করেছিলেন, তা কিন্তু কোনো সামরিক জোট নয়।
ওই চুক্তি তেহরানের প্রতিরক্ষার জন্য মস্কোকে এগিয়ে আসতে বাধ্য করে না।
তবে চুক্তি স্বাক্ষরের সময় অবশ্য মস্কো এ বিষয়ে মন্তব্য করেছিল।
রিয়া নভোস্তি নিউজ এজেন্সিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছিলেন, “এই চুক্তিতে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে শান্তি এবং নিরাপত্তার স্বার্থে সমন্বয় জোরদার করা, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিষয়ে মস্কো ও তেহরানের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার আকাঙ্ক্ষার বিষয়ে বিশেষভাবে মনোযোগ দেওয়া হয়েছে।”
গত ছয় মাসে মস্কো কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে তাদের অন্যতম প্রধান মিত্র বাশার আল আসাদকে হারিয়ে ফেলেছে।
গত ডিসেম্বরে সিরিয়ার নেতাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর তাকে রাশিয়ায় আশ্রয় দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
ইরানে বর্তমান সরকারে পরিবর্তন আনার যে সম্ভাবনা, সেটা ওই অঞ্চলে রাশিয়ার আরও এক কৌশলগত অংশীদারকে হারানোর চিন্তা বাড়াচ্ছে।

মঙ্গলবার মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনাবলী সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে মস্কোভস্কি কমসোমোলেটস এর প্রতিবেদনে উপসংহারে বলা হয়েছে, “এই মুহূর্তে বিশ্ব রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে যা আমাদের দেশের জীবনকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করবে।”
ভ্লাদিমির পুতিন চলতি সপ্তাহের বেশিরভাগ সময় সেন্ট পিটার্সবার্গে কাটাবেন। সেখানে বার্ষিক আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
এই অনুষ্ঠানকে একসময় “রাশিয়ার দাভোস” নামে অভিহিত করা হতো। তবে সেই নাম এখন আর প্রযোজ্য নয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বড় বড় পশ্চিমা কোম্পানির প্রধান নির্বাহীরা দূরে সরে গেছেন – বিশেষ করে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসনের পর থেকেই তারা সুরে সরেছে।
তবে আয়োজকদের দাবি, চলতি বছরে ১৪০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চল থেকে প্রতিনিধিরা ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
এই অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে রুশ কর্তৃপক্ষ প্রায় নিশ্চিতভাবেই এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করবে যে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে তাদের দেশকে একঘরে করার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
এটা অর্থনৈতিক ফোরাম হলেও তা ভূ-রাজনীতি থেকে কখনোই দূরে নয়।
এই আবহে মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউক্রেন সম্পর্কে ভ্লাদিমির পুতিন কোনো মন্তব্য করেন কি না সেটাই দেখার।
বিবিসি নিউজ বাংলা