অষ্টম পরিচ্ছেদ
রোদে-পোড়া বালির পাড় নেমে এসে মিশে গেছে জলে। নদীর অগভীর জায়গাগুলোয় ঢেউ খেলছে অল্প-অল্প আর ঝলমল করছে রোদ্দুরে। নদীটার ওপারে আমাদের বাহিনীর কিন্তু কোনো চিহ্ন ছিল না।
ভেবেচিন্তে চুবুক বললেন, ‘ওরা লিচ্চয় আরও এগিয়ে গ্যাচে। যাক, তাইতে কিছু আসে-যায় না। এখেন থেকে অল্প দূরেই আমাদের একটা ফৌজী-বেড়াজাল থাকার কথা। আর আমাদের বাহিনীরে ওইখেনে গিয়ে থামতে হবেই।’
‘আচ্ছা, চুবুক, একটা ডুব দিয়ে নিলে কেমন হয়?’ আমি প্রস্তাব করলুম। ‘চট করে চান করে নিই? জলটা দেখুন কী চমৎকার আর কেমন গরম।’
‘চানের পক্ষে জায়গাটা কিন্তু ভালো না। বড্ড খোলামেলা চারিদিক।’
‘তাতে কী হয়েছে?’
‘তাইতে কী হয়েচে, মানে? খালি গায়ে ন্যাংটো নোক কি আর সেপাই থাকে? একটা লাঠি দিয়েই ন্যাংটো একজনেরে ঘায়েল করা চলে। কিংবা ধর, মাত্তর একজনা
কসাক ঘোড়ায় চেপে এসি তোমার রাইফেলটা লিয়ে লিতে পারে। তখন কোথা থাকবে তুমি শুনি? জান তো, খোপিওরে একবার এই কাণ্ড হইছিল। আমাদের মতো দুটা নোক নয়, চল্লিশ-জনার গোটা একটা বাহিনী নদীতে চান করতি নেবেছিল। আর মাত্তর পাঁচজনা কসাক এসি ঝাঁপ খেয়ে পড়ল। নদীর মধ্যি গুলি ছুড়তে লাগল তারা। আতঙ্ক কারে কয় সে যদি দেখতে একবার!
কিছু নোক সেইখেনেই গুলি খেয়ে মারা পড়ল, আর কিছু সাঁতরে নদী পার হয়ে পালাল। তারপর ন্যাংটো হয়ে বনে বনে ঘুরি বেড়াতে নাগল তারা। চারিদিকের গেরামগুলো ছিল সম্পন্ন, বেশির ভাগ গাঁয়ে ছিল কুলাকদের বাস। কাজেই কোনো গেরামে ঢং-মারার উপায় ছিল না। ন্যাংটো নোক দেখলিই ধরা যেত সে বলশেভিক।’