অষ্টম পরিচ্ছেদ
তা সত্ত্বেও শেষপর্যন্ত রাজী করালুম চুবুককে। নদীর পাড় ঘে’ষে যেখানে ঝোপঝাড় ছিল, সেখানটায় গিয়ে চট করে স্নান সেরে নিলুম। তারপর আমাদের ট্রাউজার্স আর বুটজুতো কোমরের বেল্ট দিয়ে বান্ডিল করে বে’ধে বেয়োনেটে ঝুলিয়ে নিয়ে নদী পার হলুম দুজন। স্নান করার ফলে রাইফেলগুলো বেশ হালকা লাগছিল আর কার্তুজের থলি দুটো যেন আর পাঁজরে লাগছিল না।
নদী থেকে ওপারে উঠে একটা বনের ধার ঘে’ষে হালকা পায়ে আমরা শার্সি খড়খড়ি ভাঙা পোড়োমতো একটা কাঁড়ের দিকে চললুম। কাড়েটার রান্নাঘর থেকে এমনকি তামার পাত পর্যন্ত উনুন থেকে উপড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে দেখলুম। আপাতদৃষ্টিতে মনে হল, কু’ড়ের মালিকরা বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার আগে যেখানে যা পেয়েছে সবকিছু, উঠিয়ে নিয়ে গেছে।
চোখ দুটো কুচকে খুব সতর্কভাবে চুবুক একবার বাড়িটার চারপাশে ঘুরে দেখলেন। তারপর দুটো আঙুল মুখের মধ্যে পুরে সজোরে কান-ফাটানো একটা শিস দিলেন। জঙ্গলের মধ্যে অনেকক্ষণ ধরে তার প্রতিধ্বনি প্রতিহত হতে-হতে গমগম করে ফিরতে লাগল, তারপর আন্তে আন্তে ক্রমশ পাতায়-ছাওয়া ঝোপেঝাড়ে গেল মিলিয়ে। কিন্তু শিসের কোনো পালটা সাড়া পাওয়া গেল না।
‘আচ্ছা, কী মনে কর? ওদের আসার আগেই আমরা এসে পড়লাম নাকি? হং, দেখচি, আমাদের অপিক্ষে করতে হয়।’
রাস্তা থেকে অল্প একটু ভেতরে ছায়াঢাকা একটা জায়গা খুঁজে নিয়ে শুয়ে পড়লুম আমরা। বেশ গরম লাগছিল। গায়ের কোটটা খুলে তালগোল পাকিয়ে আমি মাথার নিচে রাখলুম, তারপর স্বস্তি পাওয়ার জন্যে চামড়ার ব্যাগটাও কাঁধ থেকে খুলে রাখলুম। অনবরত এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলা, রাত্রে থামা আর স্যাঁতসে’তে মাটিতে শুয়ে ঘুমনো-এই সব কারণে রঙ চটে গিয়ে আর ক্ষয়ে ফেটে আমার ব্যাগটা একাকার হয়ে গিয়েছিল।
ব্যাগটার মধ্যে ছিল একটা ছোট ছুরি, এক টুকরো সাবান, একটা ছাঁচ আর এক বাণ্ডিল সুতো আর পাভলেনকভের রুশ বিশ্বকোষের মাঝের একটা ছে’ড়া অংশ।