অষ্টম পরিচ্ছেদ
বিশ্বকোষ হচ্ছে এমন একখানা বই যা যতবার ইচ্ছে ততবার পড়া চলে। অথচ, তা সত্ত্বেও, কিছুতেই এ বই মুখস্থ করা যায় না। এই কারণে বইখানা আমি সঙ্গে নিয়ে ঘুরতুম, আর প্রায়ই বিশ্রামের সময় কিংবা কোনো খাদে বা গভীর জঙ্গলের মধ্যে অপেক্ষা করার সময় বইটা ব্যাগ থেকে বের করে দলা-মোচড়ান পাতাগুলো ফিরে ফিরে বারবার পড়তুম। বইটাতে পর পর সাজানো নানা বিচিত্র বিষয়ের ওপর একধার থেকে চোখ বুলিয়ে যেতুম।
পড়তুম নানা সন্ন্যাসী, রাজা আর জেনারেলদের জীবনী, নানা রকমের বার্নিশ তৈরির ব্যবস্থাপত্র, দার্শনিক পরিভাষা, প্রাচীনকালের নানা যুদ্ধের উল্লেখ, কোস্টা রিকার ইতিহাস (আগে এ রাজ্যটার নামই শুনি নি), আর সবশেষে জম্বুর হাড় থেকে জমির সার-ময়দা উৎপাদনের বর্ণনা। যাই হোক বইটা থেকে ‘এফ’ ও ‘আর’ অক্ষরের মধ্যে যাদের উল্লেখ ছিল এমন দরকারী অদরকারী নানা ধরনের পাঁচমিশেলি খবরাখবর বেশ খানিকটা সংগ্রহ করেছিলুম। তবে ওই ‘এফ’ ও ‘আর’অক্ষরের আগুপিছ অভিধানখানা ছিল ছেড়া।
যখনকার কথা বলছি তার কয়েকদিন আগে আমার নির্দিষ্ট জায়গায় পাহারা দিতে যাবার পূর্ব মুহূর্তে তাড়াতাড়িতে আমি এক টুকরো কালো রুটি ব্যাগটার মধ্যে ভরে রেখেছিলুম। এখন দেখলুম, ভুলে-যাওয়া সেই রুটির টুকরোটা সে’তিয়ে ভেঙে ভেঙে গেছে আর বইটার কয়েকখানা পাতা ওই সে’তানো রুটিতে মাখামাখি হয়ে আটকে গেছে। তাই ব্যাগের যাবতীয় জিনিসপত্র ঘাসের ওপর ঢেলে ফেলে রুটিতে মাখামাখি-হয়ে-থাকা ব্যাগের ভেতরটা হাত ঢুকিয়ে পরিষ্কার করতে লাগলুম। আর এই সময়ে আমার আঙুলের ঘসা লেগে ব্যাগের চামড়ার আন্তরের একটা কোণ হঠাৎ দেখলুম আলগা হয়ে গেল।
ব্যাগটাকে সূর্যের দিকে তুলে ধরে ওর ভেতরটা পরীক্ষা করতে লাগলুম। হঠাৎ চোখে পড়ল, আস্তরের নিচে এক টুকরো শাদা কাগজ লুকনো।
আমার কৌতূহল অদম্য হয়ে উঠল। টেনে আন্তরটা আরও খানিকটা খুলে ফেলে ভেতর থেকে একতাড়া পাতলা কাগজ টেনে বের করলুম। তারপর তার মধ্যে থেকে একখানা খুলে দেখলুম। কাগজখানার মধ্যিখানে দেখলুম দু-মুখো ঈগলের একটা গিলটি-করা প্রতীকচিহ্ন, আর তার নিচে সোনালী বুটিদার অক্ষরে স্পষ্ট করে লেখা ‘সার্টিফিকেট’ শব্দটা।