অষ্টম পরিচ্ছেদ
সার্টিফিকেটখানা পড়লুম। কাউন্ট আরাকচেইয়েভ কাদেত কোরের দু-নম্বর কোম্পানির ছাত্র ইউরি ভাল্দকে এই মর্মে সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছিল যে সে তার ক্লাসের বাৎসরিক পাঠসূচি সাফল্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ করেছে আর চমৎকার পরিশ্রম ক্ষমতার ও আচরণের পরিচয় দিয়েছে সে, তাই তাকে উচ্চতর শ্রেণীতে উঠিয়ে দেয়া হল।
এই ব্যাগের মালিক সেই ছেলেটার কথা মনে পড়ল আমার। জঙ্গলে হঠাৎ সেই অচেনা ছেলেটার সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়া, তারপর তাকে গুলি করে মারা, সব কথাই মনে পড়ল। আর হঠাৎ সব কিছু পরিষ্কার হয়ে গেল আমার কাছে: ‘ওঃ, তাহলে এই হল ব্যাপার!’ এখন বুঝলুম, কেন ওর কালো টিউনিকের সব কটা বোতাম ও ইচ্ছে করে ছি’ড়ে ফেলেছিল, আর ওর জামার কলারের আন্তরে ছাপমারা সেই অক্ষর কটারই বা মানে কী ছিল।
আরেকখানা কাগজে দেখলুম ফরাসী ভাষায় কাছাকাছি সময়ের তারিখ দেয়া একখানা চিঠি লেখা। যদিও ইশকুলে ফরাসী ভাষাটা শেখা সত্ত্বেও ওটার সম্পর্কেক’ একটা অস্পষ্ট স্মৃতিমাত্র আমার মনে অবশিষ্ট ছিল, তবু আধ ঘণ্টা ধরে চিঠিটা পড়বার প্রাণপণ চেষ্টা করে আর আমার জ্ঞানের ফাঁকগুলো স্রেফ আন্দাজ দিয়ে ভরিয়ে নিতে-নিতে এটুকু বুঝলুম যে চিঠিটা কর্নেল কোরেন্কভের কাছে কাদেত ইউরি ভালুদের একখানা পরিচয়পত্র।
ওই অদ্ভুত কাগজ দুখানা চুবুককে দেখাতে ইচ্ছে হল। কিন্তু উনি তখনও ঘুমিয়ে আছেন, আর ও’কে এ জন্যে জাগিয়ে তুলতে ইচ্ছে হল না মোটে। এর আগের দিন সকাল থেকেই উনি খাড়া পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে ছিলেন। যাই হোক, কাগজগুলো ফের ভাঁজ করে আমি ব্যাগটার মধ্যে রেখে দিলুম আর অভিধানখানা খুলে পড়তে শুরু করলুম।
আরও প্রায় এক ঘণ্টা কেটে গেল। বাতাসের গুনগুন্নুনি আর পাখির ডাক ভেদ করে হঠাৎ দূর থেকে একটা অন্য রকমের শব্দ আমার কানে এল। উঠে দাঁড়িয়ে কানের পেছনে একটা হাত রেখে ভালো করে শব্দটা শোনার চেষ্টা করলুম। অনেক লোকের একসঙ্গে পা ফেলে আসার শব্দ আর গলার আওয়াজ ক্রমশ বেশি বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠতে লাগল।