অষ্টম পরিচ্ছেদ
চুবুকের কাঁধ ধরে এবার নাড়া দিতে লাগলুম। ‘চুবুক, উঠুন, চুবুক! আমাদের লোকেরা আসছে!’
‘আমাদের নোকেরা আসচে! যন্ত্রের মতো আমার কথার পুনরুক্তি করে চুবুক উঠে বসে চোখ রগড়াতে লাগলেন।
‘হ্যাঁ, হ্যাঁ। ওরা খুব কাছে এসে পড়েছে। তাড়াতাড়ি উঠুন।’
‘কী কান্ড, ঘুম ধরে গিইছিল একবারে!’ অবাক হয়ে চুবুক বললেন। ‘আমি কোথায় মিনিট খানেকের জন্যি এটু গড়িয়ে লিতে গেলাম। কী কাণ্ড দ্যাখো দিকি!’
কাঁধে রাইফেল ঝুলিয়ে যখন চুবুক আমার পিছু পিছু হাঁটতে শুরু করলেন তখনও ও’র চোখে ঘুম জড়িয়ে আছে আর কড়া রোদ্দুরের জন্যে চোখ দুটো পিটপিট করছে।
ওদের গলার আওয়াজ একেবারে যেন পাশেই শুনতে পেলুম। সঙ্গে সঙ্গে আমি কাড়েটার পেছন থেকে লাফিয়ে সামনে পড়ে মাথার টুপিটা ওপর দিকে ছুড়ে দিয়ে গলা ফাটিয়ে চিৎকার জুড়ে দিলুম কাছে-এসে-পড়া কমরেডদের স্বাগত জানাতে।
ওপর দিকে ছোড়া টুপিটা যে কোথায় গিয়ে পড়ল তা দেখার আর ফুরসত হল না। কারণ সেই মুহূর্তে যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল, বুঝতে পারলুম একটা মারাত্মক ভুল ঘটে গেছে।
আমার ঠিক পেছন থেকে ফ্যাসফেসে ক্রুদ্ধ গলায় চুবুক চিৎকার করে উঠলেন, ‘ফেরো শিগিরি!’
গুড়ুম… গুড়ুম… গুড়ুম…
বাহিনীটার সামনের সারি থেকে প্রায় একসঙ্গে তিনটে গুলি ছুটে এল। আর কী একটা অদৃশ্য শক্তি যেন আমার হাত থেকে রাইফেলটা ছিনিয়ে নিয়ে তার কু’দোটা এমন আক্রোশে ভেঙে টুকরো-টুকরো করে দিলে যে আমি কোনোক্রমে টাল সামলে দাঁড়িয়ে রইলুম। কিন্তু ওই গুলির আওয়াজ আর জোর ধাক্কা আমার হতবুদ্ধি ভাব আর অসাড় অবস্থাটা কাটিয়ে তুলল। হঠাৎ মনে হল, ‘এরা তো শ্বেতরক্ষী,’ সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে চুবুকের কাছে ঝাঁপিয়ে পড়লুম। এই সময়ে চুবুক পালটা গুলি চালালেন।