০১:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

রণক্ষেত্রে (পর্ব-৭৯)

অষ্টম পরিচ্ছেদ

পাশের ঘর থেকে হঠাৎ থপ্ করে একটা নরম পায়ের আওয়াজ কানে এল।

পোড়ো বাড়িটার চারিদিকে ছড়ানো ক্ষয় আর ধ্বংসের স্তূপের মধ্যে ওই শব্দটা এত অপ্রত্যাশিত ছিল যে শুনে আমরা চমকে উঠলুম।

‘ওখেনে কে?’ চুবুকের জোরালো গলার চিৎকারে নৈঃশব্দ্য ছিড়ে গেল। উনি রাইফেলটা বাগিয়ে ধরলেন।

হালকা বালির রঙের প্রকান্ড একটা বেড়াল লম্বা-লম্বা পা ফেলে চুপিচুপি আমাদের দিকে এগিয়ে এল। আমাদের দু-হাতের মধ্যে এসে বেড়ালটা থেমে মিউ-মিউ করে ডেকে খিদে জানাল, তারপর ঠান্ডা, সবুজ বিদ্বেষভরা চোখে আমাদের দিকে তাকিয়ে রইল। আমি ওর গায়ে হাত বুলোতে গেলুম, কিন্তু ও পিছিয়ে গিয়ে, একলাফে জানলাটা ডিঙিয়ে বাইরের ফুলের কেয়ারির ওপর গিয়ে পড়ল। পরক্ষণে ঘাসের মধ্যে কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেল বেড়ালটা।

‘আশ্চর্য’ কিন্তু, বেড়ালটা এখনও না-খেয়ে মরে নি।’

‘মরতে যাবে কোন দুঃখে। বেড়াল তো ই’দুর খায়। তা গন্ধেই মালুম দিচ্ছে, জায়গাটা ই’দুরে ভরতি।’

দূরের একটা দরজা ক্যাঁচ করে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে বুকটার মধ্যেও ছ্যাঁত করে উঠল যেন। তারপর খুব মৃদু কিছু একটা ঘষ্টানোর আওয়াজ পাওয়া গেল। মনে হল যেন কেউ শুকনো একটা ন্যাকড়া দিয়ে মেঝেটা ঘষছে। পরস্পর চোখ-তাক্যতাকি করলুম আমরা। কারণ, আওয়াজটা ছিল মানুষের পায়ের।

আমাকে টেনে নিয়ে জানলার দিকে যেতে-যেতে, রাইফেলটা বাগিয়ে চুবুক ফিসফিস করে বললেন, ‘শয়তানটা কে হতি পারে?’

অল্প একটু কাশির শব্দ, তারপর দরজাটা খোলার জন্যে ধাক্কা লেগে মেঝেয়-পড়ে-থাকা কাগজের খড়মড় আওয়াজ। তারপর ঘরে ঢুকল একজন বুড়ো লোক। লোকটির দাড়ি গোঁফ ভালো করে কামানো হয় নি, পরনে জীর্ণ নীলরঙের পাজামা, খালি পায়ে স্লিপার গলানো। লোকটি আমাদের দিকে অবাক হয়ে কিন্তু নির্ভয়ে তাকাল। তারপর নিচু হয়ে ভদ্রতাসূচক অভিবাদন জানিয়ে অনুভূতিশূন্য গলায় বলল:

‘আমি তাই অবাক হচ্ছিলুম, নিচের তলায় কে আবার ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভাবলুম, চাষীরাই ফিরে এসেছে হয় তো। কিন্তু তাও মনে হল না, কারণ জানলা দিয়ে তাকিয়ে নিচে কোনো ঘোড়ার গাড়ি তো দেখতে পেলুম না।’

 

জনপ্রিয় সংবাদ

রণক্ষেত্রে (পর্ব-৭৯)

০৮:০০:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

অষ্টম পরিচ্ছেদ

পাশের ঘর থেকে হঠাৎ থপ্ করে একটা নরম পায়ের আওয়াজ কানে এল।

পোড়ো বাড়িটার চারিদিকে ছড়ানো ক্ষয় আর ধ্বংসের স্তূপের মধ্যে ওই শব্দটা এত অপ্রত্যাশিত ছিল যে শুনে আমরা চমকে উঠলুম।

‘ওখেনে কে?’ চুবুকের জোরালো গলার চিৎকারে নৈঃশব্দ্য ছিড়ে গেল। উনি রাইফেলটা বাগিয়ে ধরলেন।

হালকা বালির রঙের প্রকান্ড একটা বেড়াল লম্বা-লম্বা পা ফেলে চুপিচুপি আমাদের দিকে এগিয়ে এল। আমাদের দু-হাতের মধ্যে এসে বেড়ালটা থেমে মিউ-মিউ করে ডেকে খিদে জানাল, তারপর ঠান্ডা, সবুজ বিদ্বেষভরা চোখে আমাদের দিকে তাকিয়ে রইল। আমি ওর গায়ে হাত বুলোতে গেলুম, কিন্তু ও পিছিয়ে গিয়ে, একলাফে জানলাটা ডিঙিয়ে বাইরের ফুলের কেয়ারির ওপর গিয়ে পড়ল। পরক্ষণে ঘাসের মধ্যে কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেল বেড়ালটা।

‘আশ্চর্য’ কিন্তু, বেড়ালটা এখনও না-খেয়ে মরে নি।’

‘মরতে যাবে কোন দুঃখে। বেড়াল তো ই’দুর খায়। তা গন্ধেই মালুম দিচ্ছে, জায়গাটা ই’দুরে ভরতি।’

দূরের একটা দরজা ক্যাঁচ করে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে বুকটার মধ্যেও ছ্যাঁত করে উঠল যেন। তারপর খুব মৃদু কিছু একটা ঘষ্টানোর আওয়াজ পাওয়া গেল। মনে হল যেন কেউ শুকনো একটা ন্যাকড়া দিয়ে মেঝেটা ঘষছে। পরস্পর চোখ-তাক্যতাকি করলুম আমরা। কারণ, আওয়াজটা ছিল মানুষের পায়ের।

আমাকে টেনে নিয়ে জানলার দিকে যেতে-যেতে, রাইফেলটা বাগিয়ে চুবুক ফিসফিস করে বললেন, ‘শয়তানটা কে হতি পারে?’

অল্প একটু কাশির শব্দ, তারপর দরজাটা খোলার জন্যে ধাক্কা লেগে মেঝেয়-পড়ে-থাকা কাগজের খড়মড় আওয়াজ। তারপর ঘরে ঢুকল একজন বুড়ো লোক। লোকটির দাড়ি গোঁফ ভালো করে কামানো হয় নি, পরনে জীর্ণ নীলরঙের পাজামা, খালি পায়ে স্লিপার গলানো। লোকটি আমাদের দিকে অবাক হয়ে কিন্তু নির্ভয়ে তাকাল। তারপর নিচু হয়ে ভদ্রতাসূচক অভিবাদন জানিয়ে অনুভূতিশূন্য গলায় বলল:

‘আমি তাই অবাক হচ্ছিলুম, নিচের তলায় কে আবার ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভাবলুম, চাষীরাই ফিরে এসেছে হয় তো। কিন্তু তাও মনে হল না, কারণ জানলা দিয়ে তাকিয়ে নিচে কোনো ঘোড়ার গাড়ি তো দেখতে পেলুম না।’