চীন রোববার যুক্তরাষ্ট্রের ইরানে হামলা ও তাতে পারমাণবিক স্থাপনায় বোমাবর্ষণের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA)-র নিরাপত্তা ব্যবস্থার আওতায় থাকা স্থাপনাগুলিতে হামলা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের উদ্দেশ্য ও নীতিমালার চরম লঙ্ঘন করেছে।
জাতিসংঘ সনদের বিপরীতে মার্কিন হামলা
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, “এই ধরনের আক্রমণ মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলেছে এবং আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। মার্কিন এই কর্মকাণ্ড একতরফাভাবে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করেছে।”
চীনা মুখপাত্র আরও বলেন, “চীন সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে। আমরা সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর প্রতি—বিশেষ করে ইসরায়েলের প্রতি—অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা এবং বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি। চীন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে একত্রে কাজ করতে প্রস্তুত, যাতে মধ্যপ্রাচ্যে ন্যায়বিচার, শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা যায়।”

ফোর্ডো, নতাঞ্জ ও ইসফাহানে হামলা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ইরানের ফোর্ডো, নতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনাগুলিতে লক্ষ্য করে “সুনির্দিষ্ট হামলা” চালানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, এই হামলার লক্ষ্য ছিল ইরানের পরমাণু কার্যক্রমে ধীরগতি আনা।
তবে চীন বলছে, এই হামলার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।
চীনা গবেষকের মন্তব্য: “আটলান্টিকের ওপার থেকে হঠাৎ ঝাঁপ”
চীন ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের সহকারী গবেষক লি জিক্সিন গ্লোবাল টাইমস-এ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় এই অভিযানের প্রকৃত ফল কতটা কার্যকর হবে, তা এখনও অস্পষ্ট। বিশেষ করে ইরানের আন্ডারগ্রাউন্ড পারমাণবিক সুবিধাগুলি সম্ভবত এই হামলায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ শুধু মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়াবে না, বরং পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে।”

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: ‘গ্লোবাল ভয়েসেস’ মঞ্চে চীনের অবস্থান
বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়ার মধ্যে চীন তার অবস্থান স্পষ্ট করেছে। তারা জোর দিয়ে বলেছে, যুদ্ধ নয়, বরং কূটনীতি ও সংলাপই হতে হবে সমস্যার সমাধান।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বারবার বলেছে, আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণ করে এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির নিরপেক্ষতা বজায় রেখে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। তারা একটি বহুপাক্ষিক আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে, যেখানে আঞ্চলিক শক্তিগুলোর পাশাপাশি জাতিসংঘকেও ভূমিকা রাখতে হবে।
শান্তির পক্ষে দৃঢ় অবস্থান
চীন এ ধরনের একতরফা হামলার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। দেশটির বার্তা স্পষ্ট—‘বোমা নয়, বার্তা চাই’।
চীনের শান্তির আহ্বান এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা, বিশেষ করে এমন সময়, যখন মধ্যপ্রাচ্য আবারও সহিংসতা ও অনিশ্চয়তার মুখোমুখি।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















