এইরূপ মহাসমারোহে দেওয়ানজীর মাতৃশ্রাদ্ধ সম্পন্ন হয়। এজ জমিদার ও অন্ত্যান্ত ভূস্বামিগণ যে যথাসাধ্য অথবা সাধ্যাতিরিক্ত নজর প্রদান করিয়াছিলেন, তাহা বোধ হয়, নূতন করিয়া উল্লেখ করিতে হইবে না। বর্দ্ধমানের মহারাণী দেয়ানজীর মাতৃশ্রাদ্ধে মিষ্টান্ন প্রভৃতিতে ১০/১২ খানি নৌকা বোঝাই করিয়া প্রেরণ করিয়াছিলেন। কিন্তু তাহা’ যথাসময়ে পৌঁছিতে না পারায় নষ্ট হইয়া যায়।
-গঙ্গাগোবিন্দ এই সময়ে নিজ মহত্বের পরিচয় দিয়াছিলেন। সমস্ত রাজা ও মহারাজদিগের জন্য আসন নিদ্দিষ্ট হইলে, তাঁহার ভূস্বামীর জন্য কোথায় আসন স্থাপিত হইবে, তদ্বিষয়ে তর্ক বিতর্ক উপস্থিত হয়। গঙ্গা-গোবিন্দ তাঁহার জন্য স্বতন্ত্র আসনের বন্দোবস্ত না করিয়া, তাঁহাকে দানোৎসর্গের সময় থাকিতে অনুরোধ করেন।
যথাসময়ে ভূস্বামী উপস্থিত হইলে, গঙ্গাগোবিন্দ নিজ গাত্র হইতে দোশালা খুলিয়া ভূস্বামীকে বসিতে দেন। দেওয়ানজী এরূপ সম্মান করিতেছেন দেখিয়া, সভাস্থ সকলেই আসন হইতে উত্থিত হন; তখন দেওয়ানজী করযোড়ে তাঁহাকে নিজ-ভূস্বামী বলিয়া পরিচয় দেন; উক্ত ভূস্বামী বর্তমান জেমুয়ারাজগণের পূর্ব্বপুরুষ। এই আদ্যশ্রাদ্ধে ২০ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়, এবং তাহার বাৎসরিক ক্রিয়ায় প্রতিবৎসর এক লক্ষ টাকা ব্যয় হইত।
মাতৃশ্রাদ্ধ ব্যতীত গঙ্গাগোবিন্দ আরও দুইটি সমারোহময় কার্য্য সম্পন্ন করেন; একটি তাঁহার পৌত্র লালা বাবুর অন্নপ্রাশন, দ্বিতীয় পুরাণের কথা-প্রদান। পৌত্রের অন্নপ্রাশনে তিনি স্বর্ণপত্র ক্ষোদিত করিয়া ব্রাহ্মণদিগকে নিমন্ত্রণ করিয়াছিলেন। সোণামুখীর প্রসিদ্ধ পুরাণকথক গদাধর শিরোমণি গঙ্গাগোবিন্দের পুরাণ-কথায় ব্রতী ছিলেন। গঙ্গা-গোবিন্দ সন্তুষ্ট হইয়া, তাঁহাকে লক্ষ টাকা প্রদান করেন।