০৫:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫
দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি: শক্তির মাধ্যমে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে নির্বাচনের আগের পরিবেশ এখনো নাজুক: আইআরআই টাইফুন কালমায়গির তাণ্ডবে ফিলিপাইনে ১১৪ জনের মৃত্যু, ঝড়টি শক্তি সঞ্চয় করে ভিয়েতনামের দিকে অগ্রসর মৃত্যুর হিসাব এখনো চলছে: টাইফুন ‘টিনো’-র তাণ্ডব পেঁয়াজের দাম: দশ দিনেই দ্বিগুণ বাড়ার কারণ কী? আলাস্কায় টাইফুনে বিধ্বস্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রক্ষায় মরিয়া চেষ্টা এআই যুগে নতুন প্রেমের খোঁজ: ডেটিং অ্যাপের রূপান্তর খারাপ রাষ্ট্রে ভালো নাগরিক হওয়ার সাহস: নৈতিক দায়িত্ব ও বিবেকের লড়াই মধ্যবয়সী নারীর শরীর ও মনকে ঘিরে নতুন ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য: ‘বিগ ওয়েলনেস’-এর উত্থান নাৎসি দখলের বিরুদ্ধে সাহসী ডাচ ইহুদির প্রতিরোধ সংগ্রাম: মৃত্যুর ছায়া পেরিয়ে মানবতার জয়গান

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৪)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৪
  • 79

শ্রী নিখিলনাথ রায়

 

শেঠদিগের ক্ষমতা ও অর্থের তুলনা ছিল না। ভারতের ভিন্ন ভিন্ন স্থানে তাঁহাদের গদী সংস্থাপিত থাকায়, বাদশাহ নবাব, রাজা মহারাজ ও বণিক মহাজনগণ সেই সকল গদী হইতে প্রয়োজনানুসারে অর্থ গ্রহণ করিতেন। প্রতিনিয়ত কোটি কোটি অর্থে তাঁহাদের কোষাগার পরিপূর্ণ থাকিত। তৎকালে এইরূপ প্রবাদ ছিল যে, শেঠেরা ইচ্ছা করিলে, সুতীর নিকট ভাগীরথীর মোহনা অনায়াসে টাকা দ্বারা বাঁধাইয়া দিতে পারিতেন। মহারাষ্ট্রীয়গণ তাঁহাদের গদী লুণ্ঠন করিয়া কিছুই করিতে পারে নাই। হিন্দুস্থানে অথবা দাক্ষিণাত্যে তাঁহাদের ন্যায় অর্থশালী মহাজন তৎকালে দৃষ্ট হইত না।

ভারতবর্ষে এমন কোন মহাজন বা বণিক ছিল না, শেঠদিগের সহিত যাহাদের তুলনা হইতে পারে। বাঙ্গলার প্রায় সমস্ত গদীয়ান তাঁহাদের প্রতিনিধি অথবা স্ববংশীয় ছিলেন। অর্থ ও ক্ষমতায়’ কেহই তাঁহাদের ন্যায় শ্রেষ্ঠ পদ অধিকার করিতে পারে নাই। কিন্তু ভাগ্যলক্ষ্মীর অনুগ্রহ চিরদিন সমানভাবে থাকে না। যে জগৎ- শেঠগণ হীনাবস্থা হইতে গৌরব ও সমৃদ্ধির উচ্চতম শিখরে অধিরূঢ় হইয়া- ছিলেন, আবার এক্ষণে তাঁহাদের ঘোর দুর্দশা উপস্থিত হইয়াছে। তাঁহাদের পূর্ব্ব গৌরবের কিছুমাত্র নিদর্শন নাই। শেঠদিগের বিশাল ভবন এক্ষণে ভগ্নস্তূপে পরিণত।

তাঁহাদিগের বংশধর জীবিকা-নির্ব্বা- হের জন্য বৃত্তির আশায় ব্রিটিশ গবর্ণমেন্টের দ্বারস্থ হইয়া প্রত্যাখ্যাত! যাঁহারা অর্থ ও প্রাণ দিয়া ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যস্থাপনের পূর্ণ সহায়তা করিয়াছিলেন, আজ তাঁহাদের বংশধর ভিক্ষাভাও হস্তে লইয়া গবর্ণ- মেণ্টের দ্বারে উপস্থিত হইলেন; গবর্ণমেন্ট একবার ফিরিয়াও চাহিলেন না। এদৃশ্য দেখিতে বড়ই কষ্টকর বোধ হয়।

যাঁহাদিগের অর্থে কত লোক বিপুল সম্পত্তির অধীশ্বর হইয়াছিল, আজ তাঁহাদের বংশধর পথের ভিখারী! ইহা অপেক্ষা দুঃখের বিষয় আর কি আছে? এক্ষণে শেঠবংশীয়দের যেরূপ দুর্দশা ঘটয়াছে, তাহাতে অধিক দিন যে জগৎ- শেঠদিগের নাম ধরণীবক্ষে বিরাজ করিবে, সেরূপ আশা করা যায় না। সমস্তই সেই পরিবর্তনশীল কালের খেলা বলিতে হইবে।

শেঠবংশীয়দের আদিনিবাস যোধপুরের অন্তর্গত নাগর প্রদেশ। তাঁহারা পূর্ব্বে শ্বেতাম্বর জৈন সম্প্রদায় ছিলেন; পরে বৈষ্ণব-ধৰ্ম্ম অবলম্বন করেন। যতদূর অবগত হওয়া যায়, তাহাতে এই রূপ সিদ্ধান্ত হয় যে, হীরানন্দ নামে তাঁহাদের জনৈক পূর্ব্বপুরুষ নাগর হইতে ভাগা- পরীক্ষার্থে পাটনায় উপস্থিত হন। হীরানন্দের সম্বল তাদৃশ অধিক ছিল না; কাজেই বাণিজ্যব্যাপারে তিনি ভালরূপ সুবিধা করিতে পারেন  নাই। এইরূপ প্রবাদ প্রচলিত আছে যে, ভাগ্যলক্ষ্মীর অনুগ্রহভাজন হইতে না পারিয়া, হীরানন্দ সর্ব্বদাই বিষণ্ণ থাকিতেন। এক দিন তিনি ব্যথিতচিত্তে নগরের বহির্ভাগে একটি ক্ষুদ্র বনমধ্যে প্রবেশ করেন।

 

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৩)

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৩)

জনপ্রিয় সংবাদ

দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি: শক্তির মাধ্যমে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৪)

১১:০০:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৪

শ্রী নিখিলনাথ রায়

 

শেঠদিগের ক্ষমতা ও অর্থের তুলনা ছিল না। ভারতের ভিন্ন ভিন্ন স্থানে তাঁহাদের গদী সংস্থাপিত থাকায়, বাদশাহ নবাব, রাজা মহারাজ ও বণিক মহাজনগণ সেই সকল গদী হইতে প্রয়োজনানুসারে অর্থ গ্রহণ করিতেন। প্রতিনিয়ত কোটি কোটি অর্থে তাঁহাদের কোষাগার পরিপূর্ণ থাকিত। তৎকালে এইরূপ প্রবাদ ছিল যে, শেঠেরা ইচ্ছা করিলে, সুতীর নিকট ভাগীরথীর মোহনা অনায়াসে টাকা দ্বারা বাঁধাইয়া দিতে পারিতেন। মহারাষ্ট্রীয়গণ তাঁহাদের গদী লুণ্ঠন করিয়া কিছুই করিতে পারে নাই। হিন্দুস্থানে অথবা দাক্ষিণাত্যে তাঁহাদের ন্যায় অর্থশালী মহাজন তৎকালে দৃষ্ট হইত না।

ভারতবর্ষে এমন কোন মহাজন বা বণিক ছিল না, শেঠদিগের সহিত যাহাদের তুলনা হইতে পারে। বাঙ্গলার প্রায় সমস্ত গদীয়ান তাঁহাদের প্রতিনিধি অথবা স্ববংশীয় ছিলেন। অর্থ ও ক্ষমতায়’ কেহই তাঁহাদের ন্যায় শ্রেষ্ঠ পদ অধিকার করিতে পারে নাই। কিন্তু ভাগ্যলক্ষ্মীর অনুগ্রহ চিরদিন সমানভাবে থাকে না। যে জগৎ- শেঠগণ হীনাবস্থা হইতে গৌরব ও সমৃদ্ধির উচ্চতম শিখরে অধিরূঢ় হইয়া- ছিলেন, আবার এক্ষণে তাঁহাদের ঘোর দুর্দশা উপস্থিত হইয়াছে। তাঁহাদের পূর্ব্ব গৌরবের কিছুমাত্র নিদর্শন নাই। শেঠদিগের বিশাল ভবন এক্ষণে ভগ্নস্তূপে পরিণত।

তাঁহাদিগের বংশধর জীবিকা-নির্ব্বা- হের জন্য বৃত্তির আশায় ব্রিটিশ গবর্ণমেন্টের দ্বারস্থ হইয়া প্রত্যাখ্যাত! যাঁহারা অর্থ ও প্রাণ দিয়া ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যস্থাপনের পূর্ণ সহায়তা করিয়াছিলেন, আজ তাঁহাদের বংশধর ভিক্ষাভাও হস্তে লইয়া গবর্ণ- মেণ্টের দ্বারে উপস্থিত হইলেন; গবর্ণমেন্ট একবার ফিরিয়াও চাহিলেন না। এদৃশ্য দেখিতে বড়ই কষ্টকর বোধ হয়।

যাঁহাদিগের অর্থে কত লোক বিপুল সম্পত্তির অধীশ্বর হইয়াছিল, আজ তাঁহাদের বংশধর পথের ভিখারী! ইহা অপেক্ষা দুঃখের বিষয় আর কি আছে? এক্ষণে শেঠবংশীয়দের যেরূপ দুর্দশা ঘটয়াছে, তাহাতে অধিক দিন যে জগৎ- শেঠদিগের নাম ধরণীবক্ষে বিরাজ করিবে, সেরূপ আশা করা যায় না। সমস্তই সেই পরিবর্তনশীল কালের খেলা বলিতে হইবে।

শেঠবংশীয়দের আদিনিবাস যোধপুরের অন্তর্গত নাগর প্রদেশ। তাঁহারা পূর্ব্বে শ্বেতাম্বর জৈন সম্প্রদায় ছিলেন; পরে বৈষ্ণব-ধৰ্ম্ম অবলম্বন করেন। যতদূর অবগত হওয়া যায়, তাহাতে এই রূপ সিদ্ধান্ত হয় যে, হীরানন্দ নামে তাঁহাদের জনৈক পূর্ব্বপুরুষ নাগর হইতে ভাগা- পরীক্ষার্থে পাটনায় উপস্থিত হন। হীরানন্দের সম্বল তাদৃশ অধিক ছিল না; কাজেই বাণিজ্যব্যাপারে তিনি ভালরূপ সুবিধা করিতে পারেন  নাই। এইরূপ প্রবাদ প্রচলিত আছে যে, ভাগ্যলক্ষ্মীর অনুগ্রহভাজন হইতে না পারিয়া, হীরানন্দ সর্ব্বদাই বিষণ্ণ থাকিতেন। এক দিন তিনি ব্যথিতচিত্তে নগরের বহির্ভাগে একটি ক্ষুদ্র বনমধ্যে প্রবেশ করেন।

 

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৩)

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৩)