কেবল ‘সুপার বুদ্ধিমান’ এজিআই দৌড় নয়, বরং দৈনন্দিন অর্থনীতি ও কাজের ভেতরে এআই দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়ার প্রতিযোগিতাই এখন বাস্তব সুফলের বড় উৎস। যে দেশ আগে ব্যাপক ব্যবহার ঘটাবে, সেই দেশই উৎপাদনশীলতা ও প্রবৃদ্ধিতে বাড়তি সুবিধা পাবে।
এআই কেন বিশেষ
এআই বাষ্পশক্তি বা বিদ্যুতের মতো একটি সাধারণ উদ্দেশ্যের প্রযুক্তি। ইতিহাস বলে—প্রথম উদ্ভাবক নয়, বরং দ্রুত ও ব্যাপক গ্রহণকারীই বেশি লাভ তোলে। তাই শুধু গবেষণাগার নয়; মাঠস্তরে বাস্তব প্রয়োগ জরুরি।
নেতৃত্বের করণীয়
অতিরিক্ত “বড় আবিষ্কার” নিয়ে মুগ্ধ না থেকে গ্রহণের অবকাঠামো (কম্পিউটিং সামর্থ্য, ডেটা, প্রক্রিয়া বদল) গড়তে হবে। সফটওয়্যার-প্রধান হওয়ায় একবার গতি পেলে এআই খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে—প্রস্তুতি দরকার এখনই।
রূপান্তরের প্রথম ধাপ: কাজের ধরন বদল
প্রতিষ্ঠানগুলোকে শুধু আলাদা আইটি বিভাগে নয়, প্রতিটি টিমের কাজের ধাপ পুনর্বিন্যাসে এআই আনতে হবে। যেমন বিদ্যুৎ এলে কারখানার বিন্যাস পাল্টে বাড়তি সুফল এসেছিল, তেমনি প্রক্রিয়া না বদলালে এআই সম্ভাবনার অল্প অংশই মিলবে।
দ্বিতীয় ধাপ: বর্তমান কর্মীদের তাৎক্ষণিক দক্ষতা
আগামী দশকের শ্রমবাজারে যারা থাকবে তাদের বেশিরভাগ এখনই কর্মরত। তাই পাঠ্যক্রম সংস্কারের অপেক্ষা না করে কর্মস্থলভিত্তিক স্বল্পমেয়াদি, ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ জরুরি।
মানচিহ্ন ও আস্থা
এআই কোর্স বহু রকম। বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে স্বীকৃতি/মানচিহ্ন ব্যবস্থা দরকার—নিয়োগদাতা দ্রুত বুঝবে কোন দক্ষতা গ্রহণযোগ্য। এতে বিনিয়োগ ও অংশগ্রহণ বাড়ে।
জনমনোভাব গঠন
মানুষ ভয় পেলে প্রযুক্তি গ্রহণ বাধাগ্রস্ত হয়। নেতৃত্বকে স্পষ্ট জানাতে হবে কী পরিবর্তন আসছে ও এর বাস্তব সুফল কী—স্বচ্ছতা আস্থা বাড়ায়।
অভিজ্ঞ উদাহরণ
ভারতের ইন্ডিয়া স্ট্যাক দেখিয়েছে—ডিজিটাল পরিচয় ও তাৎক্ষণিক পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম সাধারণ মানুষের দৈনন্দিনে সুবিধা দিলে প্রযুক্তি নিয়ে আশাবাদ তৈরি হয়।
সরকারি খাতে প্রয়োগ
রাষ্ট্রীয় সেবা বড় অর্থনৈতিক অংশ। সরকারি বিভাগে এআই না এলে সামগ্রিক গ্রহণ অসম্পূর্ণ থাকবে—বিশেষ করে উৎপাদনশীলতা ও বয়স্ক জনসংখ্যা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এটি সুযোগ।
নিয়ন্ত্রণের ভারসাম্য
অতিরিক্ত আগাম কঠোর নিয়ম সাধারণ ব্যবহারে বাধা দেয় (যেমন জীবনবৃত্তান্ত স্ক্রিনিং)। নিয়ন্ত্রণের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত উচ্চ-ঝুঁকির অগ্রবর্তী মডেলের নিরাপত্তা (সাইবার, জীববিজ্ঞান, নিউক্লিয়ার ঝুঁকি) মূল্যায়ন—সাধারণ উদ্ভাবনী ব্যবহারকে অতিরিক্ত বোঝা না দেওয়া।
উন্মুক্ত শেখার প্ল্যাটফর্ম
‘ওপেন ইউনিভার্সিটি’ মডেলের মতো কর্মরত প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সহজপ্রাপ্য জাতীয় এআই শেখার প্ল্যাটফর্ম দ্রুত দক্ষতা বিস্তারে সহায়ক হবে—এটাই বাস্তব “ওপেন এআই” কৌশল: মালিকানার দৌড় নয়, ব্যাপকভাবে মানুষকে সক্ষম করা।
অর্থনৈতিক প্রভাব
এআই আগামী বহু বছরের প্রবৃদ্ধির মুখ্য চালক হতে পারে। এজিআই কে আগে পাবে তা অনিশ্চিত; কিন্তু দৈনন্দিন প্রক্রিয়ায় এআই কার্যকরভাবে বসাতে যে কোনো দেশই এগিয়ে যেতে পারে।
চার স্তম্ভ
সমন্বিত কৌশল = (১) অবকাঠামো, (২) কর্মী দক্ষতা, (৩) আস্থা ও ন্যায়সঙ্গত নিয়ন্ত্রণ, (৪) সরকারি প্রয়োগ। যে দেশ দ্রুত এই চার স্তম্ভ দাঁড় করাবে, তারাই উৎপাদনশীলতা ও সামাজিক অগ্রগতিতে এগিয়ে থাকবে।