০৩:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫
প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-২৪৭) চীনকে কেন্দ্র করে কোয়াডের আঞ্চলিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের উদ্যোগ কোয়াড সম্প্রসারণে বাংলাদেশের সম্ভাব্য যোগদানের অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতিতে প্রভাব যুদ্ধবিরতির আহ্বান সত্ত্বেও থাই-ক্যাম্বোডিয়ান সীমান্তে সংঘর্ষ অব্যাহত হিউএনচাঙ (পর্ব-১৫৭) রণক্ষেত্রে (পর্ব-৮৫) শিক্ষার বাতিঘর প্রয়াত প্রিন্সিপাল ইকবাল সিদ্দিকীর ৫৮তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন ‘জেন জি’ তরুণরা অধিকাংশ ডানপন্থী রাজনীতি করে: সমস্যা প্রেমে ও ডেটে যুক্তরাষ্ট্র-হামাস আলোচনায় অচলাবস্থা, গাজা ও ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে কূটনৈতিক ব্যস্ততা নদীতে ভাসমান হাট: বরিশাল ও ঝালকাঠির নৌপথে কৃষিপণ্যের জীবন্ত সংস্কৃতি

চিতা বাঘ — ছায়ায় লুকিয়ে থাকা বনবাসী

অচেনা অথচ চারপাশে ঘুরে বেড়ানো এক শিকারি

বাংলাদেশের বনভূমি ও জলাভূমিতে এমন এক বন্যপ্রাণী বাস করে, যাকে দেখে অনেকেই ভাবে এটি বুঝি গৃহপালিত কোনো বিড়াল। অথচ প্রকৃতপক্ষে এটি একটি নিখাদ বুনো বিড়াল, নাম চিতা বিড়াল (Leopard Cat, বৈজ্ঞানিক নাম: Prionailurus bengalensis)।
গায়ে ধবধবে বাদামি রঙ, তাতে গাঢ় বাদামি বা কালো দাগ, বড় চোখ—সবমিলিয়ে দেখতে এরা সত্যিই দারুণ আকর্ষণীয়। কিন্তু এই সৌন্দর্যের আড়ালে আছে নিঃশব্দ শিকার, ক্ষীপ্র গতি আর গহিন অরণ্যের এক অনন্য অভিযোজন।

ছায়াঘন বন আর বাঁশঝাড়ে এদের সংসার

বাংলাদেশে চিতা বিড়াল পাওয়া যায় বিভিন্ন বনাঞ্চলে, বিশেষ করে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট ও সুন্দরবনের প্রান্তবর্তী এলাকায়। এরা বাস করে বাঁশঝাড়, ঝোপঝাড়, ছোট খালপাড়, বনজলাশয় কিংবা ঝুলন্ত পত্রপল্লবের আড়ালে।

তবে সবচেয়ে মজার বিষয় হলো—চিতা বিড়াল অত্যন্ত অভিযোজিত প্রাণী। অনেক সময় এসব বিড়াল লোকালয়ের কাছাকাছিও ঘোরাফেরা করে, বিশেষ করে যেখানে নির্জনতা ও খাদ্য সহজলভ্য।

খাদ্যাভ্যাস ও আচরণ: নিঃশব্দ শিকারি

চিতা বিড়াল মূলত নিশাচর, অর্থাৎ রাতে সক্রিয়। দিনে গাছের কোটরে বা ঘন ঝোপের নিচে লুকিয়ে থাকে। খাবারের তালিকায় রয়েছে ইঁদুর, ব্যাঙ, পাখি, ছোট সাপ, টিকটিকি, পোকামাকড়, এমনকি মাছও।

এদের শ্রবণশক্তি খুব প্রখর এবং চোখ অন্ধকারে ঝলমল করে। নিঃশব্দে হেঁটে, চুপিচুপি শিকার ঘিরে এরা হঠাৎ করে আক্রমণ করে। এদের আকার গৃহপালিত বিড়ালের মতো হলেও শিকার কৌশল অনেক বেশি দক্ষ।

মানুষ-প্রাণীর বিভ্রান্তি: এক মারাত্মক ভুল

চিতা বিড়ালের সঙ্গে গৃহপালিত বিড়ালের চেহারায় মিল থাকায় অনেকেই ভুল করে এগুলোকে পোষা প্রাণী ভেবে ফেলে। অনেক ক্ষেত্রে এগুলো লোকালয়ে ঢুকে পড়লে মানুষ মেরে ফেলে, বা পোষার চেষ্টা করে।

এই ভুল সিদ্ধান্ত পরিবেশে মারাত্মক ক্ষতি করে, কারণ চিতা বিড়াল আমাদের বাস্তুতন্ত্রের এক গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। বিশেষ করে ইঁদুর ও ক্ষতিকর প্রাণীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে এদের ভূমিকা অসাধারণ।

বিপন্ন না হলেও হুমকির মুখে

আন্তর্জাতিকভাবে IUCN এই প্রজাতিকে এখনো Least Concern শ্রেণিতে রেখেছে। তবে বাংলাদেশে এদের সংখ্যা নিয়ে নির্ভরযোগ্য জরিপ নেই। আশঙ্কা করা হচ্ছে, বনভূমি হারানো, রাস্তা-কাঠামো নির্মাণ ও চোরাশিকার এদের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, “এই প্রজাতিকে এখনই নজরদারিতে না আনলে ভবিষ্যতে বিলুপ্তির তালিকায় ঢুকে পড়তে পারে।”

সংরক্ষণে জরুরি উদ্যোগ

  • বনাঞ্চলে ক্যামেরা ট্র্যাপ গবেষণা শুরু করা প্রয়োজন, যাতে এদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণ করা যায়।
  • গ্রামাঞ্চলে সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন, যাতে মানুষ চিতা বিড়াল ও পোষা বিড়ালের পার্থক্য বুঝতে পারে।

  • বন আইন কার্যকর প্রয়োগ এবং বন ধ্বংস রোধ ছাড়া এদের অস্তিত্ব রক্ষা অসম্ভব।
  • চাইল্ড-ফ্রেন্ডলি নেচার এডুকেশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে শিশুদের কাছেও তুলে ধরা দরকার—এই রহস্যময় বিড়ালের সৌন্দর্য ও পরিবেশগত গুরুত্ব।

চিতা বিড়াল আমাদের নীরব প্রতিবেশী, যারা বন ছাড়াও প্রান্তিক এলাকায় বসবাস করে। এদের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো না গেলে একদিন হয়তো আমরা শুধু ছবিতে বা জাদুঘরে দেখব এই সৌন্দর্যবাহী শিকারিকে।
তাই এখনই সময়, এই নিঃশব্দ বনবাসীর জন্য আওয়াজ তোলার।

প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-২৪৭)

চিতা বাঘ — ছায়ায় লুকিয়ে থাকা বনবাসী

০৪:৩০:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫

অচেনা অথচ চারপাশে ঘুরে বেড়ানো এক শিকারি

বাংলাদেশের বনভূমি ও জলাভূমিতে এমন এক বন্যপ্রাণী বাস করে, যাকে দেখে অনেকেই ভাবে এটি বুঝি গৃহপালিত কোনো বিড়াল। অথচ প্রকৃতপক্ষে এটি একটি নিখাদ বুনো বিড়াল, নাম চিতা বিড়াল (Leopard Cat, বৈজ্ঞানিক নাম: Prionailurus bengalensis)।
গায়ে ধবধবে বাদামি রঙ, তাতে গাঢ় বাদামি বা কালো দাগ, বড় চোখ—সবমিলিয়ে দেখতে এরা সত্যিই দারুণ আকর্ষণীয়। কিন্তু এই সৌন্দর্যের আড়ালে আছে নিঃশব্দ শিকার, ক্ষীপ্র গতি আর গহিন অরণ্যের এক অনন্য অভিযোজন।

ছায়াঘন বন আর বাঁশঝাড়ে এদের সংসার

বাংলাদেশে চিতা বিড়াল পাওয়া যায় বিভিন্ন বনাঞ্চলে, বিশেষ করে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট ও সুন্দরবনের প্রান্তবর্তী এলাকায়। এরা বাস করে বাঁশঝাড়, ঝোপঝাড়, ছোট খালপাড়, বনজলাশয় কিংবা ঝুলন্ত পত্রপল্লবের আড়ালে।

তবে সবচেয়ে মজার বিষয় হলো—চিতা বিড়াল অত্যন্ত অভিযোজিত প্রাণী। অনেক সময় এসব বিড়াল লোকালয়ের কাছাকাছিও ঘোরাফেরা করে, বিশেষ করে যেখানে নির্জনতা ও খাদ্য সহজলভ্য।

খাদ্যাভ্যাস ও আচরণ: নিঃশব্দ শিকারি

চিতা বিড়াল মূলত নিশাচর, অর্থাৎ রাতে সক্রিয়। দিনে গাছের কোটরে বা ঘন ঝোপের নিচে লুকিয়ে থাকে। খাবারের তালিকায় রয়েছে ইঁদুর, ব্যাঙ, পাখি, ছোট সাপ, টিকটিকি, পোকামাকড়, এমনকি মাছও।

এদের শ্রবণশক্তি খুব প্রখর এবং চোখ অন্ধকারে ঝলমল করে। নিঃশব্দে হেঁটে, চুপিচুপি শিকার ঘিরে এরা হঠাৎ করে আক্রমণ করে। এদের আকার গৃহপালিত বিড়ালের মতো হলেও শিকার কৌশল অনেক বেশি দক্ষ।

মানুষ-প্রাণীর বিভ্রান্তি: এক মারাত্মক ভুল

চিতা বিড়ালের সঙ্গে গৃহপালিত বিড়ালের চেহারায় মিল থাকায় অনেকেই ভুল করে এগুলোকে পোষা প্রাণী ভেবে ফেলে। অনেক ক্ষেত্রে এগুলো লোকালয়ে ঢুকে পড়লে মানুষ মেরে ফেলে, বা পোষার চেষ্টা করে।

এই ভুল সিদ্ধান্ত পরিবেশে মারাত্মক ক্ষতি করে, কারণ চিতা বিড়াল আমাদের বাস্তুতন্ত্রের এক গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। বিশেষ করে ইঁদুর ও ক্ষতিকর প্রাণীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে এদের ভূমিকা অসাধারণ।

বিপন্ন না হলেও হুমকির মুখে

আন্তর্জাতিকভাবে IUCN এই প্রজাতিকে এখনো Least Concern শ্রেণিতে রেখেছে। তবে বাংলাদেশে এদের সংখ্যা নিয়ে নির্ভরযোগ্য জরিপ নেই। আশঙ্কা করা হচ্ছে, বনভূমি হারানো, রাস্তা-কাঠামো নির্মাণ ও চোরাশিকার এদের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, “এই প্রজাতিকে এখনই নজরদারিতে না আনলে ভবিষ্যতে বিলুপ্তির তালিকায় ঢুকে পড়তে পারে।”

সংরক্ষণে জরুরি উদ্যোগ

  • বনাঞ্চলে ক্যামেরা ট্র্যাপ গবেষণা শুরু করা প্রয়োজন, যাতে এদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণ করা যায়।
  • গ্রামাঞ্চলে সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন, যাতে মানুষ চিতা বিড়াল ও পোষা বিড়ালের পার্থক্য বুঝতে পারে।

  • বন আইন কার্যকর প্রয়োগ এবং বন ধ্বংস রোধ ছাড়া এদের অস্তিত্ব রক্ষা অসম্ভব।
  • চাইল্ড-ফ্রেন্ডলি নেচার এডুকেশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে শিশুদের কাছেও তুলে ধরা দরকার—এই রহস্যময় বিড়ালের সৌন্দর্য ও পরিবেশগত গুরুত্ব।

চিতা বিড়াল আমাদের নীরব প্রতিবেশী, যারা বন ছাড়াও প্রান্তিক এলাকায় বসবাস করে। এদের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো না গেলে একদিন হয়তো আমরা শুধু ছবিতে বা জাদুঘরে দেখব এই সৌন্দর্যবাহী শিকারিকে।
তাই এখনই সময়, এই নিঃশব্দ বনবাসীর জন্য আওয়াজ তোলার।