০৩:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫
রেস্টুরেন্ট বুকিং নিয়ে নতুন বিতর্ক: বিলাসিতা নাকি বাজারের বাস্তবতা? রাজা সীতারাম রায়: যশোরের স্বাধীন রাজ্যের সাহসী রাজা রহস্যময় রাতের যাত্রা: এক রোমাঞ্চকর রাত বান্দরবানে সোমেশ্বরী নদী: পাহাড়ি ঢল, পাথরের খনি ও পর্যটনের সম্ভাবনা কপিল দেবের মতো নন জাদেজা: সিধুর কঠোর সমালোচনা রণক্ষেত্রে (পর্ব-৮৮) নিউ ইয়র্ক টাইমস প্রতিবেদন: বাংলাদেশে হামলায় বিদেশিদের লক্ষ্য করেছিল আইএস কে-পপের স্টাইল আইকন: ছোট্ট এক চুলের স্টাইলেই ভাইরাল এস্পার উইন্টার মার্বেল বিড়াল — দুর্লভ রহস্যের ছায়া উপকূলে নিরাপদ পানির প্রাপ্যতা ও জলবায়ু সহনশীলতা বাড়াতে ডেনমার্কের সহায়তায় ব্র্যাকের ‘রেইন ফর লাইফ’

২০১৬ সালের গুলশান হোলি আর্টিজান হামলা: প্রেক্ষাপট, প্রাণহানি ও নিরাপত্তা বাস্তবতা

গুলশান হামলার প্রেক্ষাপট

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে ঢাকার গুলশান-২ এলাকায় অবস্থিত হোলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসীরা ভয়াবহ হামলা চালায়। এটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ জিম্মি সংকটযা প্রায় ১২ ঘণ্টা স্থায়ী হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে শুরু হওয়া এই হামলায় সন্ত্রাসীরা বিদেশি নাগরিকসহ অভ্যাগতদের জিম্মি করে। পরদিন সকালবেলা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

হামলাকারীরা এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের অভিযোগ

সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়হামলাকারীরা স্থানীয় উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর সদস্য এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন আইএস-এর সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত নয়। তবে এই দাবিকে চ্যালেঞ্জ করে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস এই হামলার দায় স্বীকার করে এবং হামলাকারীদের ছবি ও বার্তা প্রকাশ করে। এর ফলে সারা বিশ্বে এই হামলা ঘিরে উদ্বেগ ও প্রশ্নের জন্ম নেয়এই হামলার প্রকৃত নেপথ্য কারা এবং এটি কেবল স্থানীয় উগ্রবাদের ফসলনাকি বৈশ্বিক সন্ত্রাসের একটি অংশ?

প্রাণহানির বিবরণ

এই জিম্মি সংকটে অন্তত ২০ জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই বিদেশি নাগরিকবিশেষ করে জাপানইতালি ও ভারতের নাগরিক ছিলেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যায়। নিহতদের মধ্যে সাতজন ছিলেন জাপানিনয়জন ইতালীয়একজন ভারতীয়একজন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি এবং দুজন বাংলাদেশি। এ ছাড়া দুইজন পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান। হামলার সময় রেস্টুরেন্টের ভেতরে থাকা ১৩ জন জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়। অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে পাঁচজন হামলাকারী নিহত হন এবং একজনকে জীবিত আটক করা হয়।

উদ্ধার অভিযান ও অপারেশন “থান্ডারবোল্ট”

হামলার পরদিন ভোরে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোর‍্যাব এবং বিজিবির সদস্যরা যৌথভাবে অপারেশন থান্ডারবোল্ট” নামে একটি অভিযান শুরু করেন। সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে অভিযান শুরু হয় এবং প্রায় এক ঘণ্টার মধ্যেই তা শেষ করা সম্ভব হয়। কমান্ডো বাহিনীর অভিযান শেষে রেস্তোরাঁর ভেতরে আটকে পড়া ১৩ জন জিম্মিকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয় এবং সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা হয়।

গণমাধ্যমের দৃষ্টিভঙ্গি ও বিশ্লেষণ

এই হামলাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্লেষণ প্রকাশ করে। কেউ কেউ এটিকে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী জঙ্গি হামলা হিসেবে আখ্যায়িত করে। একদিকে সরকার স্থানীয় উগ্রবাদীদের দায়ী করলেওআন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো আইএস-এর দাবিকে হালকাভাবে নেয়নি। হামলার ধরনপরিকল্পনাএবং হত্যার পদ্ধতিতে আইএস-এর পূর্ববর্তী হামলার সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়ার কথা বলা হয়। সেই সূত্রেই প্রশ্ন উঠেআইএস সরাসরি না থাকলেও তাদের আদর্শ ও অনুপ্রেরণাই কি এই হামলার ভিত্তি ছিল?

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ উদ্বেগ

এই জঘন্য হামলার পর দেশের অভ্যন্তরে যেমন রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়তেমনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। দেশের প্রধানমন্ত্রী তখন জনগণের ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জানান এবং দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তবে বিভিন্ন বিশ্লেষক এবং গণমাধ্যম এই হামলাকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিবিদেশি বিনিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব হিসেবে চিহ্নিত করে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রকে উগ্রপন্থার বিস্তার রোধে আরও কার্যকর ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কৌশল গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়।

সংক্ষেপ

২০১৬ সালের হোলি আর্টিজান হামলা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় পরিবর্তনের ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। এটি একদিকে যেমন দেশি-বিদেশি নিরাপত্তা সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করেতেমনি বাংলাদেশের ভিতরে উগ্রপন্থার বিরুদ্ধেও বৃহত্তর প্রতিরোধ গঠনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। এই হামলার পর থেকে দেশের জঙ্গিবিরোধী নিরাপত্তা কাঠামো ও কৌশল আরও জোরদার করা হয়েছে এবং সমাজে ধর্মীয় উগ্রতা প্রতিরোধে নাগরিক সচেতনতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে হামলার প্রকৃত দায়ভার এবং এর পেছনের বৃহত্তর রাজনৈতিক ও আদর্শিক কাঠামো এখনও অনেকের কাছে প্রশ্নের জন্ম দেয়।

রেস্টুরেন্ট বুকিং নিয়ে নতুন বিতর্ক: বিলাসিতা নাকি বাজারের বাস্তবতা?

২০১৬ সালের গুলশান হোলি আর্টিজান হামলা: প্রেক্ষাপট, প্রাণহানি ও নিরাপত্তা বাস্তবতা

০৪:৩০:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫

গুলশান হামলার প্রেক্ষাপট

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে ঢাকার গুলশান-২ এলাকায় অবস্থিত হোলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসীরা ভয়াবহ হামলা চালায়। এটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ জিম্মি সংকটযা প্রায় ১২ ঘণ্টা স্থায়ী হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে শুরু হওয়া এই হামলায় সন্ত্রাসীরা বিদেশি নাগরিকসহ অভ্যাগতদের জিম্মি করে। পরদিন সকালবেলা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

হামলাকারীরা এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের অভিযোগ

সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়হামলাকারীরা স্থানীয় উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর সদস্য এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন আইএস-এর সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত নয়। তবে এই দাবিকে চ্যালেঞ্জ করে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস এই হামলার দায় স্বীকার করে এবং হামলাকারীদের ছবি ও বার্তা প্রকাশ করে। এর ফলে সারা বিশ্বে এই হামলা ঘিরে উদ্বেগ ও প্রশ্নের জন্ম নেয়এই হামলার প্রকৃত নেপথ্য কারা এবং এটি কেবল স্থানীয় উগ্রবাদের ফসলনাকি বৈশ্বিক সন্ত্রাসের একটি অংশ?

প্রাণহানির বিবরণ

এই জিম্মি সংকটে অন্তত ২০ জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই বিদেশি নাগরিকবিশেষ করে জাপানইতালি ও ভারতের নাগরিক ছিলেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যায়। নিহতদের মধ্যে সাতজন ছিলেন জাপানিনয়জন ইতালীয়একজন ভারতীয়একজন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি এবং দুজন বাংলাদেশি। এ ছাড়া দুইজন পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান। হামলার সময় রেস্টুরেন্টের ভেতরে থাকা ১৩ জন জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়। অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে পাঁচজন হামলাকারী নিহত হন এবং একজনকে জীবিত আটক করা হয়।

উদ্ধার অভিযান ও অপারেশন “থান্ডারবোল্ট”

হামলার পরদিন ভোরে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোর‍্যাব এবং বিজিবির সদস্যরা যৌথভাবে অপারেশন থান্ডারবোল্ট” নামে একটি অভিযান শুরু করেন। সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে অভিযান শুরু হয় এবং প্রায় এক ঘণ্টার মধ্যেই তা শেষ করা সম্ভব হয়। কমান্ডো বাহিনীর অভিযান শেষে রেস্তোরাঁর ভেতরে আটকে পড়া ১৩ জন জিম্মিকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয় এবং সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা হয়।

গণমাধ্যমের দৃষ্টিভঙ্গি ও বিশ্লেষণ

এই হামলাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্লেষণ প্রকাশ করে। কেউ কেউ এটিকে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী জঙ্গি হামলা হিসেবে আখ্যায়িত করে। একদিকে সরকার স্থানীয় উগ্রবাদীদের দায়ী করলেওআন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো আইএস-এর দাবিকে হালকাভাবে নেয়নি। হামলার ধরনপরিকল্পনাএবং হত্যার পদ্ধতিতে আইএস-এর পূর্ববর্তী হামলার সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়ার কথা বলা হয়। সেই সূত্রেই প্রশ্ন উঠেআইএস সরাসরি না থাকলেও তাদের আদর্শ ও অনুপ্রেরণাই কি এই হামলার ভিত্তি ছিল?

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ উদ্বেগ

এই জঘন্য হামলার পর দেশের অভ্যন্তরে যেমন রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়তেমনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। দেশের প্রধানমন্ত্রী তখন জনগণের ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জানান এবং দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তবে বিভিন্ন বিশ্লেষক এবং গণমাধ্যম এই হামলাকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিবিদেশি বিনিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব হিসেবে চিহ্নিত করে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রকে উগ্রপন্থার বিস্তার রোধে আরও কার্যকর ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কৌশল গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়।

সংক্ষেপ

২০১৬ সালের হোলি আর্টিজান হামলা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় পরিবর্তনের ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। এটি একদিকে যেমন দেশি-বিদেশি নিরাপত্তা সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করেতেমনি বাংলাদেশের ভিতরে উগ্রপন্থার বিরুদ্ধেও বৃহত্তর প্রতিরোধ গঠনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। এই হামলার পর থেকে দেশের জঙ্গিবিরোধী নিরাপত্তা কাঠামো ও কৌশল আরও জোরদার করা হয়েছে এবং সমাজে ধর্মীয় উগ্রতা প্রতিরোধে নাগরিক সচেতনতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে হামলার প্রকৃত দায়ভার এবং এর পেছনের বৃহত্তর রাজনৈতিক ও আদর্শিক কাঠামো এখনও অনেকের কাছে প্রশ্নের জন্ম দেয়।