০৬:১৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫

উপকূলে নিরাপদ পানির প্রাপ্যতা ও জলবায়ু সহনশীলতা বাড়াতে ডেনমার্কের সহায়তায় ব্র্যাকের ‘রেইন ফর লাইফ’

ডেনমার্কের মাননীয় রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিকস মোলার বলেছেন, ডেনমার্কের সহায়তায় ব্র্যাক পরিচালিত ‘রেইন ফর লাইফ’ প্রকল্পটি সকলকে অন্তর্ভুক্ত করে প্রকৃতি নির্ভর সামগ্রিক পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। এটি কেবল মানুষের জন্যই নয়, ফসল, গবাদিপশু এবং সামগ্রিক পরিবেশের জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে কাজ করছে। এই উদ্যোগটি টেকসই উন্নয়নের প্রতি ডেনিশ সরকারের দীর্ঘদিনের অঙ্গীকারের প্রতিফলন। জলবায়ু সংক্রান্ত বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের নেতৃত্বের স্বীকৃতি এর মূল ভিত্তি।

ডেনমার্কের মাননীয় রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর পাশে থাকার এবং বনায়ন বাড়াতে সার্বিক সহযোগিতায় ডেনমার্কের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

ড্যানিশ মিনিস্ট্রি অফ ফরেন অ্যাফেয়ার্স – এর সহায়তায় ব্র্যাকের উদ্যোগে পরিচালিত ‘ফর লাইফ’ প্রকল্পের যাত্রা শুরু উপলক্ষ্যে আয়োজিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিকস মোলার এ মন্তব্য করেন। মঙ্গলবার, ২৯শে জুলাই ২০২৫ তারিখে ঢাকার ব্র্যাক সেন্টারে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। প্রকল্পটি আগামী তিন বছর সাতক্ষীরার আশাশুনি, বাগেরহাটের মংলা এবং বরগুনার পাথরঘাটা উপকূলীয় উপজেলায় ৯০ হাজারেরও বেশি মানুষের জন্য নিরপাদ পানির প্রাপ্যতা এবং জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করবে।

কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্। এতে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ; এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বার্ক) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. নাজমুন নাহার করিম। ‘রেইন ফর লাইফ’ প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন ব্র্যাকের জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচির পরিচালক ড. মো. লিয়াকত আলী এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচির প্রধান আবু সাদাত মনিরুজ্জান খান। কর্মশালায় নীতিনির্ধারক, উন্নয়ন সহযোগী, বাস্তবায়নকারী সংস্থা এবং উপকূলীয় এলাকার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

আসিফ সালেহ্ বলেন, ‘রেইন ফর লাইফ’ প্রকল্পটি নিরাপদ পানি এবং খাদ্য নিরাপত্তা – এই দুটি বিষয়কে একসাথে মোকাবিলা করছে, কারণ জলবায়ু সংকটের প্রেক্ষাপটে এই দুইয়ের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে।

তিনি বলেন, “যদিও নিরাপদ পানির প্রাপ্যতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তবে এটি সমস্যা সমাধানের একটি অংশমাত্র। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় প্রয়োজন সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি। আমাদের সমাধানগুলো হতে হবে ব্যয় সাশ্রয়ী, টেকসই, স্থানীয় জনগোষ্ঠী পরিচালিত এবং বাস্তবসম্মত। এসব কর্মকাণ্ডে প্রকল্প-নির্ভর মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।”

আসিফ সালেহ্ বলেন, “জলবায়ুর হুমকির মুখে মানুষ বসে থাকে না, তারা নিজেদের মতো করে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে এবং বাঁচার পথ খুঁজে বের করছে। একটু সহায়তা পেলে আমাদের কৃষক ও সাধারণ মানুষ নিজেরাই নিজেদের জীবনে পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে।”

‘আমার বন’, অ্যাডাপটেশন ক্লিনিক, কমিউনিটি-ভিত্তিক মডেল এবং নিরাপদ পানি উদ্যোক্তা কার্যক্রমের মতো উদ্যোগের মাধ্যমে ব্র্যাক ইতোমধ্যেই সহনশীলতা বৃদ্ধিতে কাজ শুরু করেছে বলে উল্লেখ করে আসিফ সালেহ্ বলেন, পরীক্ষিত সমাধানগুলো আরো বড় পরিসরে প্রয়োগের জন্য সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্ব জোরদার করা প্রয়োজন।

ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন বলেন, জলবায়ু সংকট সমাধানের তাৎক্ষণিক কোনো উপায় নেই বলে আমাদের অভিযোজনকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। তিনি বলেন, সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও অন্যান্য অংশীদারদের মধ্যে সমন্বয়ের বিষয়টি শুধু আনুষ্ঠানিক সম্পর্কের মধ্যে আবদ্ধ না রেখে একে কার্যকর করে তুলতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর সহায়তায় ‘রেইন ফর লাইফ’-এর মতো উদ্যোগগুলো আরো বড় পরিসরে প্রয়োগের বিষয়টিকে সরকার ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করছে বলে জানান তিনি।

ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, নিরাপদ পানির প্রাপ্যতা একটি মৌলিক অধিকার। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে এই অধিকার থেকে বঞ্চিত। ব্র্যাকের পাইলট প্রকল্পের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সাফল্যগুলো আরো বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করা প্রয়োজন। তিনি ব্র্যাক এবং এর মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের ‘চ্যাম্পিয়ন’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করতে এবং ভবিষ্যতের ক্ষয়ক্ষতি রোধে সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অংশীদারিত্ব অপরিহার্য।

ড. নাজমুন নাহার করিম বলেন, এই প্রকল্পে ক্লাইমেট অ্যাকশন গ্রুপ, অ্যাডাপটেশন ক্লিনিকসহ সকল ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ও নেতৃত্বকে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রাখা হয়েছে। শুধু উপকারভোগী হিসেবে নয়, বরং নারীরা সক্রিয় সিদ্ধান্তগ্রহণকারী ও নেতৃত্বদানকারী হিসেবে কাজ করলেই সমাজে সহনশীলতা গড়ে ওঠে। ‘রেইন ফর লাইফ’ প্রকল্পটি তেমন একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলছে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।

ড. মো. লিয়াকত আলী বলেন, ২০২২ থেকে ২০২৪ সালে এই প্রকল্পের প্রথম ধাপে পানি সরবরাহ ব্যবস্থার মাধ্যমে ৭২ হাজারেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ পানীয় জলের আওতায় আনা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি বাড়তে থাকায় দীর্ঘমেয়াদি পানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে পানিসম্পদ, কৃষি ও প্রকৃতি-ভিত্তিক পদ্ধতির সমন্বয়ে একটি সমন্বিত সমাধানের প্রয়োজন, যা ‘রেইন ফর লাইফ’ প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে।

 মোংলার জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার কৃষক জাহিদুল ইসলাম বুলবুল, মিঠাখালী ইউনিয়নের শিপ্রা ভক্ত, তরুণ প্রতিনিধি ঐতি রায় এবং নারী সমবায় সমিতির পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শিপ্রা হালদার কর্মশালায় তাদের দৈনন্দিন সমস্যা ও চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন। লবণাক্ততা বৃদ্ধি, সুপেয় পানির ঘাটতি এবং বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা এই মানুষগুলো বলেন, তাদের জীবন ও জীবিকা রক্ষায় ‘রেইন ফর লাইফ’-এর মতো অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বাস্তবসম্মত সমাধান এখন সময়ের দাবি।

২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এই প্রকল্পে পরিবার ও কমিউনিটি পর্যায়ে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ, জলাশয়ের পানি পরিশোধন এবং জলবায়ু সহনশীল কৃষিকে উৎসাহিত করতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রকল্পের আওতায় কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্র্যাকের ‘অ্যাডাপটেশন ক্লিনিক’ মডেলের মাধ্যমে বিশেষ করে নারীদের নেতৃত্বে প্রান্তিক কৃষকদের জলবায়ু সহনশীল প্রযুক্তি ও পরামর্শ দেওয়া হবে এবং তাদের জন্য অর্থায়নের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।

 কর্মশালায় জানানো হয়, ব্র্যাকের ‘আমার বন’ মডেলের আওতায় ম্যানগ্রোভ ও স্থানীয় প্রজাতির বৃক্ষরোপণের মতো প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানগুলো দুষণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিবেশকে রক্ষা ও পুনরুদ্ধারে ভূমিকা রাখছে। এমন উদ্যোগগুলো জলবায়ু সংকটের প্রভাব কাটিয়ে উঠতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ক্লাইমেট অ্যাকশন গ্রুপ এবং তরুণদের যুক্ত করার মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে এসব কাজে সম্পৃক্ত করা হবে যেখানে নারীদের নেতৃত্ব বিশেষভাবে গুরুত্ব পাবে।

উপকূলে নিরাপদ পানির প্রাপ্যতা ও জলবায়ু সহনশীলতা বাড়াতে ডেনমার্কের সহায়তায় ব্র্যাকের ‘রেইন ফর লাইফ’

০৬:২১:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫

ডেনমার্কের মাননীয় রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিকস মোলার বলেছেন, ডেনমার্কের সহায়তায় ব্র্যাক পরিচালিত ‘রেইন ফর লাইফ’ প্রকল্পটি সকলকে অন্তর্ভুক্ত করে প্রকৃতি নির্ভর সামগ্রিক পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। এটি কেবল মানুষের জন্যই নয়, ফসল, গবাদিপশু এবং সামগ্রিক পরিবেশের জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে কাজ করছে। এই উদ্যোগটি টেকসই উন্নয়নের প্রতি ডেনিশ সরকারের দীর্ঘদিনের অঙ্গীকারের প্রতিফলন। জলবায়ু সংক্রান্ত বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের নেতৃত্বের স্বীকৃতি এর মূল ভিত্তি।

ডেনমার্কের মাননীয় রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর পাশে থাকার এবং বনায়ন বাড়াতে সার্বিক সহযোগিতায় ডেনমার্কের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

ড্যানিশ মিনিস্ট্রি অফ ফরেন অ্যাফেয়ার্স – এর সহায়তায় ব্র্যাকের উদ্যোগে পরিচালিত ‘ফর লাইফ’ প্রকল্পের যাত্রা শুরু উপলক্ষ্যে আয়োজিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিকস মোলার এ মন্তব্য করেন। মঙ্গলবার, ২৯শে জুলাই ২০২৫ তারিখে ঢাকার ব্র্যাক সেন্টারে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। প্রকল্পটি আগামী তিন বছর সাতক্ষীরার আশাশুনি, বাগেরহাটের মংলা এবং বরগুনার পাথরঘাটা উপকূলীয় উপজেলায় ৯০ হাজারেরও বেশি মানুষের জন্য নিরপাদ পানির প্রাপ্যতা এবং জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করবে।

কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্। এতে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ; এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বার্ক) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. নাজমুন নাহার করিম। ‘রেইন ফর লাইফ’ প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন ব্র্যাকের জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচির পরিচালক ড. মো. লিয়াকত আলী এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচির প্রধান আবু সাদাত মনিরুজ্জান খান। কর্মশালায় নীতিনির্ধারক, উন্নয়ন সহযোগী, বাস্তবায়নকারী সংস্থা এবং উপকূলীয় এলাকার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

আসিফ সালেহ্ বলেন, ‘রেইন ফর লাইফ’ প্রকল্পটি নিরাপদ পানি এবং খাদ্য নিরাপত্তা – এই দুটি বিষয়কে একসাথে মোকাবিলা করছে, কারণ জলবায়ু সংকটের প্রেক্ষাপটে এই দুইয়ের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে।

তিনি বলেন, “যদিও নিরাপদ পানির প্রাপ্যতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তবে এটি সমস্যা সমাধানের একটি অংশমাত্র। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় প্রয়োজন সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি। আমাদের সমাধানগুলো হতে হবে ব্যয় সাশ্রয়ী, টেকসই, স্থানীয় জনগোষ্ঠী পরিচালিত এবং বাস্তবসম্মত। এসব কর্মকাণ্ডে প্রকল্প-নির্ভর মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।”

আসিফ সালেহ্ বলেন, “জলবায়ুর হুমকির মুখে মানুষ বসে থাকে না, তারা নিজেদের মতো করে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে এবং বাঁচার পথ খুঁজে বের করছে। একটু সহায়তা পেলে আমাদের কৃষক ও সাধারণ মানুষ নিজেরাই নিজেদের জীবনে পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে।”

‘আমার বন’, অ্যাডাপটেশন ক্লিনিক, কমিউনিটি-ভিত্তিক মডেল এবং নিরাপদ পানি উদ্যোক্তা কার্যক্রমের মতো উদ্যোগের মাধ্যমে ব্র্যাক ইতোমধ্যেই সহনশীলতা বৃদ্ধিতে কাজ শুরু করেছে বলে উল্লেখ করে আসিফ সালেহ্ বলেন, পরীক্ষিত সমাধানগুলো আরো বড় পরিসরে প্রয়োগের জন্য সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্ব জোরদার করা প্রয়োজন।

ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন বলেন, জলবায়ু সংকট সমাধানের তাৎক্ষণিক কোনো উপায় নেই বলে আমাদের অভিযোজনকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। তিনি বলেন, সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও অন্যান্য অংশীদারদের মধ্যে সমন্বয়ের বিষয়টি শুধু আনুষ্ঠানিক সম্পর্কের মধ্যে আবদ্ধ না রেখে একে কার্যকর করে তুলতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর সহায়তায় ‘রেইন ফর লাইফ’-এর মতো উদ্যোগগুলো আরো বড় পরিসরে প্রয়োগের বিষয়টিকে সরকার ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করছে বলে জানান তিনি।

ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, নিরাপদ পানির প্রাপ্যতা একটি মৌলিক অধিকার। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে এই অধিকার থেকে বঞ্চিত। ব্র্যাকের পাইলট প্রকল্পের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সাফল্যগুলো আরো বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করা প্রয়োজন। তিনি ব্র্যাক এবং এর মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের ‘চ্যাম্পিয়ন’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করতে এবং ভবিষ্যতের ক্ষয়ক্ষতি রোধে সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অংশীদারিত্ব অপরিহার্য।

ড. নাজমুন নাহার করিম বলেন, এই প্রকল্পে ক্লাইমেট অ্যাকশন গ্রুপ, অ্যাডাপটেশন ক্লিনিকসহ সকল ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ও নেতৃত্বকে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রাখা হয়েছে। শুধু উপকারভোগী হিসেবে নয়, বরং নারীরা সক্রিয় সিদ্ধান্তগ্রহণকারী ও নেতৃত্বদানকারী হিসেবে কাজ করলেই সমাজে সহনশীলতা গড়ে ওঠে। ‘রেইন ফর লাইফ’ প্রকল্পটি তেমন একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলছে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।

ড. মো. লিয়াকত আলী বলেন, ২০২২ থেকে ২০২৪ সালে এই প্রকল্পের প্রথম ধাপে পানি সরবরাহ ব্যবস্থার মাধ্যমে ৭২ হাজারেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ পানীয় জলের আওতায় আনা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি বাড়তে থাকায় দীর্ঘমেয়াদি পানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে পানিসম্পদ, কৃষি ও প্রকৃতি-ভিত্তিক পদ্ধতির সমন্বয়ে একটি সমন্বিত সমাধানের প্রয়োজন, যা ‘রেইন ফর লাইফ’ প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে।

 মোংলার জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার কৃষক জাহিদুল ইসলাম বুলবুল, মিঠাখালী ইউনিয়নের শিপ্রা ভক্ত, তরুণ প্রতিনিধি ঐতি রায় এবং নারী সমবায় সমিতির পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শিপ্রা হালদার কর্মশালায় তাদের দৈনন্দিন সমস্যা ও চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন। লবণাক্ততা বৃদ্ধি, সুপেয় পানির ঘাটতি এবং বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা এই মানুষগুলো বলেন, তাদের জীবন ও জীবিকা রক্ষায় ‘রেইন ফর লাইফ’-এর মতো অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বাস্তবসম্মত সমাধান এখন সময়ের দাবি।

২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এই প্রকল্পে পরিবার ও কমিউনিটি পর্যায়ে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ, জলাশয়ের পানি পরিশোধন এবং জলবায়ু সহনশীল কৃষিকে উৎসাহিত করতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রকল্পের আওতায় কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্র্যাকের ‘অ্যাডাপটেশন ক্লিনিক’ মডেলের মাধ্যমে বিশেষ করে নারীদের নেতৃত্বে প্রান্তিক কৃষকদের জলবায়ু সহনশীল প্রযুক্তি ও পরামর্শ দেওয়া হবে এবং তাদের জন্য অর্থায়নের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।

 কর্মশালায় জানানো হয়, ব্র্যাকের ‘আমার বন’ মডেলের আওতায় ম্যানগ্রোভ ও স্থানীয় প্রজাতির বৃক্ষরোপণের মতো প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানগুলো দুষণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিবেশকে রক্ষা ও পুনরুদ্ধারে ভূমিকা রাখছে। এমন উদ্যোগগুলো জলবায়ু সংকটের প্রভাব কাটিয়ে উঠতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ক্লাইমেট অ্যাকশন গ্রুপ এবং তরুণদের যুক্ত করার মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে এসব কাজে সম্পৃক্ত করা হবে যেখানে নারীদের নেতৃত্ব বিশেষভাবে গুরুত্ব পাবে।