নতুন শুল্কের ধাক্কা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত নতুন ট্যারিফে আফ্রিকার বহু দেশ এখন সর্বোচ্চ রপ্তানি শুল্কের মুখে। এই আর্থিক চাপকে সুযোগে বদলে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী চীন, যাদের সঙ্গে আফ্রিকার বাণিজ্যিক সম্পর্ক ইতিমধ্যেই গভীর। নাইজেরিয়ার অর্থনীতিবিদ বিসমার্ক রেওয়ানে সতর্ক করে বলেছেন, “আমরা সরাসরি চীনের হাতে চলে যাচ্ছি।”
কারা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত
ট্রাম্প প্রশাসনের তালিকায় লিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, আলজেরিয়া ও তিউনিসিয়ার ওপর ২৫–৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হয়েছে। আরও ১৮টি আফ্রিকান দেশকে ১৫ শতাংশ শুল্কের মুখোমুখি হতে হবে। এসব হার নির্ধারিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশগুলোর বাণিজ্য ঘাটতির ভিত্তিতে, পূর্বঘোষিত ‘পারস্পরিক’ নীতির বিপরীতে।
দক্ষিণ আফ্রিকার আপত্তি ও বিকল্প বাজার
৩০ শতাংশ শুল্ককে “সঠিক তথ্যভিত্তিক নয়” বলে চ্যালেঞ্জ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশটির খনিজমন্ত্রী গৱেদে মানতাশে জানিয়েছেন, উচ্চ শুল্ক আরোপ হলে তারা বিকল্প বাজার খুঁজবে—যেখানে প্রধান ভরসা চীন। তা সত্ত্বেও সাইট্রাস ফসলের রপ্তানিকারকরা শঙ্কিত; শুল্ক কার্যকর হলে শত হাজার কার্টন ফল গুদামেই আটকে থাকার আশঙ্কা।
লেসোথোর টেক্সটাইল সংকট
দক্ষিণ আফ্রিকায় বেষ্টিত দরিদ্র দেশ লেসোথো ১৫ শতাংশ শুল্কের কবলে পড়েছে—আগে হার ছিল ৫০ শতাংশ। নতুন শুল্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধ হওয়ায় হাজারো চাকরি হারিয়েছে; সরকার দু’বছরের জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করেছে।
চীনের প্রস্তাবিত ছাড় ও সম্ভাব্য ঝুঁকি
চীন জুনে জানায়, প্রায় সব আফ্রিকান অংশীদারের জন্য আমদানি শুল্ক স্থগিত করবে। গবেষক নিয়ো লেটস্ওয়ালো মনে করেন, এটা দক্ষিণ–দক্ষিণ বাণিজ্য জোরদারের সেরা সময়। তবে তিনি সতর্কও করেছেন—চীনা পণ্য সস্তা হওয়ায় দুর্বল শিল্পগুলো প্রতিযোগিতায় টিকতে নাও পারে, আর বাণিজ্য ঘাটতি চীনের পক্ষেই ভারী হতে পারে।
আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তির গতি
আফ্রিকান কনটিনেন্টাল ফ্রি ট্রেড এরিয়া (AfCFTA) ২০২০ সালেই কার্যকর হলেও মাত্র কুড়িটির মতো দেশ এর আওতায় কেনাবেচা করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের ট্যারিফ আফ্রিকাকে নিজেদের ভেতরে বাণিজ্য বাড়াতে ও বৈশ্বিক নির্ভরতা কমাতে উত্সাহিত করতে পারে।
সামনে পথ
রেওয়ানে মনে করেন, ট্যারিফ–সৃষ্ট চাপে আফ্রিকার উচিত স্থিতিস্থাপক অর্থনীতি গড়ে তোলা ও একমুখী বাণিজ্য–নির্ভরতা কমানো। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে গিয়ে ঘরোয়া উৎপাদন ও আঞ্চলিক বাণিজ্যের ওপর সমান গুরুত্ব না দিলে দীর্ঘমেয়াদে লাভের বদলে ক্ষতির ঝুঁকিই বড় হবে।