তাঁহারা সর্ব্বদা নর্তকীপরি-বেষ্টিত হইয়া আমোদপ্রমোদে বিভোর থাকিতেন, কখনও রাজকার্য্যে মনোনিবেশ করিতেন না। কিন্তু ইংরেজ ঐতিহাসিকগণ তাঁহাদের স্বদেশবাসী ও কোম্পানীর রাজত্বের প্রারম্ভকালের শাসনকর্তাদিগের চিত্র একবার স্মরণ করিবেন কি?
যদি ইংরেজ রাজত্বের আরম্ভে তাহার সহিত মুসল্যানরাজত্বের কোনই পার্থক্য দেখিতে না পাই, যে অত্যাচার সত্যই হউক, মিথ্যাই হউক, মুসলমানরাজত্বে প্রবল ছিল বলিয়া আমরা তথাকথিত ইতিহাসসমূহে দেখিতে পাই, যে বিলাসিতার জন্য মুসলমান-রাজত্বের পতন বলিয়া এক প্রকার স্বীকার করা যাইতে পারে, সেই সমস্ত পূর্ণমাত্রায় যদি ইংরেজশাসনের প্রথমে দেখিতে পাই, তবে মুসল: মানরাজত্বের অবসানের পর ইংরেজবণিক্রাজত্বে প্রজারা সুখী হইয়াছিল, এ কথা কেমন করিয়া স্বীকার করিব? সকলের স্মরণ রাখা আবশ্যক, আমরা বর্তমান রাজত্বের কথা বলিতেছি না।
যে সময়ে কোম্পানীর প্রথম রাজত্বের আরম্ভ হয়, সেই সময়েরই কথা বলিতেছি। আমরা শুনিয়া থাকি যে, মুসল্মান রাজত্বের হস্ত হইতে নিভৃতি গাইয়া, তৎকালীন ইংরেজ বণিকূরাজত্বে প্রজাগণ নাকি সুখী হইয়াছিল। সেই জন্য আমরা দেখাইলাম যে, তদুভয়ের মধ্যে বিশেষ কোন পার্থক্য অনুভব করিতে পারা যায় না। বরং বাদশাহ নবাবগণ কেবল প্রাচ্য আমোদ প্রমোদে বিভোর থাকিতেন।
কিন্তু দেখিতে পাওয়া যায়, কোম্পানীর প্রথম সময়ের শাসনকর্তৃগণ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য উভয়বিধ বিলাসিতার চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত দেখাইয়া গিয়াছেন এবং তাঁহাদের কোন কোন অত্যাচার সুসভ্য ইউরোপীয় প্রথানুযায়ীও ছিল। অনেকে মনে করিতে পারেন যে, দেবীসিংহের জন্য তাঁহারা এরূপ বিলাসতরঙ্গে গা ঢালিয়া দেন; অবশ্য এ কথা স্বীকাৰ্য্য।
কিন্তু যাঁহারা প্রলোভনের হস্ত হইতে আপনাদিগকে রক্ষা করিতে সমর্থ না হন, তাঁহারা কোন বিস্তৃত প্রদেশের শাসনের কিরূপ উপযোগী, তাহাও একবার চিন্তা করিয়া দেখা উচিত। বাস্তবিকই দেবীসিংহ সেই সকল তরুণবয়স্কদিগকে সর্ব্বদা বিলাসেই ভাসাইয়া রাখিতেন। যখন তাঁহাদের যে সমস্ত বিলাস-সামগ্রীর প্রয়োজন হইত, দেবীসিংহ অমনি তৎক্ষণাৎ তাঁহাদের নিকট সেই সকল উপস্থিত করিতেন।
শ্রী নিখিলনাথ রায় 



















