দেবীসিংহের পর কলিকাতা হইতে এক দল লোক পূর্ণিয়ার ইজারা লইতে প্রস্তুত হয়। তাহারা আপনা-দিগের ভবিষ্যৎ লাভালাভের বিষয় স্থির করিবার জন্য পূর্ণিয়ায় উপস্থিত হইয়া যাহা দেখিল, তাহাতে তাহাদের প্রাণ শুদ্ধ হইয়া গেল। তাহারা স্বচক্ষে পূর্ণিয়ার চারিদিকে হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখিয়া তথা হইতে দ্রুতবেগে পলায়ন করিল, এবং আপনাদিগের নির্বুদ্ধিতার জন্য ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দণ্ড প্রদান করিয়া, ইজারা গ্রহণ হইতে নিষ্কৃতি লাভকরিল। এইরূপে দেবীসিংহের ভীষণ অত্যাচারে যখন সমগ্র পূর্ণিয়া জনশূন্য হইবার উপক্রম হয়, তখন কর্তৃপক্ষীয়গণ ইহার প্রতিবিধানের জন্য যত্ন করিতে লাগিলেন।
তাঁহারা সবিশেষ অনুসন্ধানে স্পষ্টই বুঝিতে পারিলেন যে, হৃদয়হীন দেবীসিংহের হস্তে আর পূর্ণিয়ার ভার রাখা কদাচ সঙ্গত নহে। এই সময়ে হেষ্টিংস সাহেব পর্যাটক-সমিতির সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৭৭২ খৃঃ অব্দের সেপ্টেম্বর মাসে দেবীসিংহকে পদচ্যুত করিলেন এবং সরকারী বিবরণীতে তাঁহার ভীষণ অত্যাচারের কথা উল্লেখ করিয়া সাধারণকে অবগত করাইলেন। কিন্তু হায়! এই হেষ্টিংস সাহেবও ক্রমে ক্রমে কিরূপে দেবীসিংহের বশীভূত হইয়া পড়িয়াছিলেন, তাঁহাও ‘পরে জানিতে পারা যাইবে।
– যদিও হেষ্টিংস সাহেব প্রকাশ্যভাবে দেবীসিংহকে পূর্ণিয়া হইতে বিতাড়িত করিতে বাধ্য হন, তথাপি তিনি মনে মনে দেবীসিংহের প্রতি তাদৃশ বিরক্ত ছিলেন না। দেবীও জানিতেন যে হেষ্টিংস, তাঁহার উপর সহজে অসন্তুষ্ট হইবার লোক নহেন। চতুরে চতুরে তলে তলে বিলক্ষণ প্রণয় ছিল। দেবীসিংহের নাম ও যশে কলঙ্ক পড়িয়াছিল বটে, কিন্তু তাঁহার সম্পত্তির এক কপদকও নষ্ট হয় নাই। সেই সম্পত্তিবলে তিনি বুঝিতে পারিয়াছিলেন যে, হেষ্টিংসকে অচিরকাল মধ্যেই করতল-গত করিতে পারিবেন। তাঁহার ইচ্ছাও অবিলম্বে পূর্ণ হইল।
হোষ্টিংসকে বশীভূত করিয়া তিনি পুনর্ব্বার পদপ্রার্থী হইলেন। ১৭৭৩ খৃষ্টাব্দে প্রাদেশিক-সমিতির গঠন আরম্ভ হইল। এই সময়ে মুর্শিদাবাদেও প্রাদেশিক-সমিতি স্থাপিত হয়। মুর্শিদাবাদ বাঙ্গলার শেষ রাজধানী বলিয়া, এই প্রদেশকে অনেকটা বিস্তৃতভাবে গ্রহণ করা হইত। এমন কি, মুর্শিদাবাদ বিভাগই তৎকালে বাঙ্গলার সর্ব্বপ্রধান বলিয়া কথিত ছিল। মুর্শিদাবাদ প্রাদেশিক-সমিতির প্রতি অন্যান্য অনেক বিস্তৃত ও বহুজনপূর্ণ প্রদেশের ভারও অর্পিত হয়। সেই সমস্ত প্রদেশের মধ্যে রঙ্গপুর ইদ্রাকপুর প্রভৃতিই প্রধান।
শ্রী নিখিলনাথ রায় 



















