৭৭ সংখ্যাটিতে একক স্থানে ৭’এর যে মান, দশকস্থানের ৭’এর মান তার দশগুণ। দশকে একক ধরে গণনা ভারতবর্ষেই প্রচলিত ছিল।
শূন্য ও অসীম
গত কয়েক দশক ধরে শূন্য এবং স্থানীয়মান সহকারে সংখ্যাপাতন কে প্রথম আবিষ্কার করেছিল সে নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চলেছে। কেউ মেসোপটেমিয়াকে এ ব্যাপারে পথিকৃৎ বলে স্বীকার করেন। আবার বহু পণ্ডিত আরবকেও এ সম্মানে ভূষিত করবার চেষ্টা করেন। কিন্তু আরবরা নিজেরাই বলেছে “শূক্ত” ভারতীয়রা আবিষ্কার করেছেন। বিশ্ব আজ জানতে পেরেছে “শূন্য” ভারতীয়রাই আবিষ্কার করেছেন।
ভারতীয়রা কবে থেকে “শূন্য” ব্যবহার করছেন বা কবে আবিষ্কার করেছেন তা নিয়ে মতদ্বৈততা আছে। জি. আর. ক্যে বলেন ভারতীয়রা নবম, দশম শতাব্দীতে স্থানীয়মান সহকারে অঙ্কপাতন পদ্ধতি জানতেন। অপরপক্ষে, বুলার, ডি. এ. স্মীথ, ভাণ্ডারকার প্রমুখ পণ্ডিতেরা বলেন অন্ততপক্ষে ৫৯৫ খ্রীষ্টাব্দে স্থানীয়মান সহকারে সংখ্যাপাতন ভারতীয়রা জানতেন। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বলেছেন শ্রীষ্টাব্দের সূচনা থেকেই ভারতীয়রা সংখ্যাপাতন পদ্ধতি জানতেন।
জি. খিবো এ ব্যাপারে ৫০০ শ্রীষ্টাব্দকেই চিহ্নিত করেছেন। আমরা অনেকেই জানি, স্থানীয়মান সহকারে অঙ্কপাতন করতে গেলে শূক্তের প্রয়োজনীয়তা অবশ্বই থাকবে। স্থানীয়মান পদ্ধতিতে মানগুলি দক্ষিণ দিক থেকে উত্তরোত্তর দশগুণ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। যেমন ৭৭ সংখ্যাটিতে একক স্থানে ৭’এর যে মান, দশকস্থানের ৭’এর মান তার দশগুণ। দশকে একক ধরে গণনা ভারতবর্ষেই প্রচলিত ছিল।
অবশ্য বৈদিক ভারত ও অন্যান্য প্রাচীন দেশে এ পদ্ধতি অল্প বিস্তর প্রচলিত ছিল। পূর্বে সংখ্যাপাত করতে গিয়ে যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হত তাতে ছোট ছোট সংখ্যা লেখা গেলেও বৃহৎ সংখ্যাগুলি লিখতে গেলে বেশ অসুবিধা হত। এক থেকে নয় পর্যন্ত সংখ্যাগুলির প্রত্যেকটির একটি এবং এই মোট দশটি প্রতীকের সাহায্যে সংখ্যা প্রকাশের পদ্ধতি ভারতীয়রা আবিষ্কার করায় গণিতশাস্ত্রে তাদের ভূমিকা এক উল্লেখযোগ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ বলে পৃথিবী স্বীকৃতি দিয়েছে।
(চলবে)
প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-২৫৬)
প্রদীপ কুমার মজুমদার 



















