০৬:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
সাধারণ মানুষের সচেতনতাই ডিজিটাল ভূমিসেবার সাফল্য: সিনিয়র সচিব মানবাধিকার সংগঠনের সতর্কবার্তা: বাংলাদেশে সংকুচিত হচ্ছে গণতান্ত্রিক পরিসর শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাস হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি, দাবি না মানলে লং মার্চের ঘোষণা গাজীপুরে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই অন্তত ১০টি বসতঘর দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে উত্তপ্ত বিক্ষোভ, ব্যারিকেড ভেঙে ঢোকার চেষ্টা আইসিসিআরের দিগন্ত সিরিজে সংগীতের সন্ধ্যা কলকাতায় বাংলাদেশের সঙ্গে শুল্ক কমাতে বিস্তৃত বাণিজ্য চুক্তি নিশ্চিত করল জাপান চব্বিশ সেকেন্ডে উনত্রিশ গুলি, আত্মরক্ষার দাবি ঘিরে পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে মার্কোস জুনিয়র ২০২৫ সালে কোনোমতে টিকে ছিলেন। ২০২৬ সালে কি তিনি পুনরুদ্ধারের পথ খুঁজে পাবেন? ছুটির মৌসুমে ছাঁটাইয়ের শঙ্কা বাড়ছে, প্রস্তুত থাকাই এখন সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা

পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি- ৫৯)

রান্নার ওপর লেখা এক বইয়ে ঢাকার এই পোলাওর প্রশংসা করে লিখেছেন- “ঢাকার মোরগ পোলাওর স্বাদ তুলে। ধরা যায় না।

হাশেম সুফী লিখেছেন, হাকিম হাবিব সোয়া আর শাবাত গুলিয়ে ফেলেছেন। শাবাত মানে সবজি পোলাও। আমার মনে হয় তাঁর যুক্তি সঠিক। শাক দিয়ে পোলাও কখনও দেখেনি। শাবাত পোলাও ঘিয়ে ভাজার পর সেদ্ধ ডিমের সাদা অংশ জাফরান দিয়ে রাঙিয়ে টুকরো টুকরো করে মেশানো হতো। শাবাত পোলাও মানে সবজি পোলাও। আর এর সঙ্গে মাংস মেশানো হলে তা হতো মালগুবা।

এক ডেকচি থেকে তিন চার স্বাদের ও রঙের পোলাও করা হতো যা প্রিয় ছিল পুরনো আর্মেনী বা মুঘল পরিবারে। পোলাওতে চর্বিহীন খাসির মাংস, ফুলকপি, গাজর, শালগম ও টমেটো ঘি দিয়ে ভেজে দম দেয়া হতো। এর সঙ্গে পালং শাক, ডিম সেদ্ধ করে ঘি দিয়ে ভেজে লালচে করে টুকরো করে মিশিয়ে দিলে হয়ে যেত নার্গিসি পোলাও।

ঢাকাই বোরহানি 

ঢাকার পোলাওর একটি বৈশিষ্ট্য ছিল। লং, এলাচি, আর ঘি দিয়ে ইয়াখনি বা যে সিরা হতো, পানির বদলে তা দিয়ে চাল গলানো হতো। খাসির মাংস বা মোরগ পরিষ্কার করার পর বাতাসে রাখা হতো। তারপর ঘিয়ে তা ভুনা করে পোলাও আর মাংস দম দেয়া হতো। ফলে চালের সুগন্ধ নষ্ট হতো না বা ভাংতো না। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাগেশ্বরী অধ্যাপক হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর বড় ভাই শাহেদ সোহরাওয়াদী রান্নার ওপর লেখা এক বইয়ে ঢাকার এই পোলাওর প্রশংসা করে লিখেছেন- “ঢাকার মোরগ পোলাওর স্বাদ তুলে। ধরা যায় না। সেটি একটি অভিজ্ঞতা, সে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়।”

পোলাওর সঙ্গে তুর্কি কোরমার প্রসঙ্গ আসবেই। তুর্কি ও ঢাকাই কোর্মার মধ্যে পার্থক্য এনেছিল মরিচের ব্যবহার। তুর্কিরা মরিচ ব্যবহার করেন না। ঢাকাই কোরমার জন্য ব্যবহারেরও পার্থক্য আছে। এখানে গোলমরিচের গুঁড়া ব্যবহৃত হয়। তবে পার্থক্যটা এনেছে কাঁচা মরিচ।এই কোরমা আবার রেজালায় পরিণত হয় যখন তাতে মালাই দিয়ে দম দেয়া হতো। এই কোরমায় বিভিন্ন উপাদানও মেশানো হতো। হাকিম হাবিব লিখেছেন, বাদাম দেয়া হলে তা হতো বাদামের কোরমা। মালাই এর কোরমায় মাংসের রং অবিকৃত থাকত।

মুঘলরা মরিচ ব্যবহার করতেন না। কিন্তু স্থানীয়রা মরিচ পছন্দ করতেন। কোরমা ঢাকাই কোরমা হলো এই মরিচ ব্যবহারের জন্য। কাঁচা মরিচের সব বিচি ফেলে দুধে ভিজিয়ে রাখা হতো। তারপর দুধ সহ মরিচ কোরমায় দিয়ে রেজালা বানানো হতো। কানিজ-ই বাতুল উল্লেখ করেছেন, রেজালা শব্দটির উৎপত্তি রেজাল থেকে যার বাংলা অর্থ নিম্নবিত্ত। অর্থাৎ, উচ্চবিত্ত বা মধ্যবিত্তের খাবার ছিল না রেজালা বা রজিলা। এর রান্নার প্রণালীও তিনি উল্লেখ করেছেন।

(চলবে)

পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি- ৫৮)

পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি- ৫৮)

 

জনপ্রিয় সংবাদ

সাধারণ মানুষের সচেতনতাই ডিজিটাল ভূমিসেবার সাফল্য: সিনিয়র সচিব

পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি- ৫৯)

০৭:০০:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ অগাস্ট ২০২৫

রান্নার ওপর লেখা এক বইয়ে ঢাকার এই পোলাওর প্রশংসা করে লিখেছেন- “ঢাকার মোরগ পোলাওর স্বাদ তুলে। ধরা যায় না।

হাশেম সুফী লিখেছেন, হাকিম হাবিব সোয়া আর শাবাত গুলিয়ে ফেলেছেন। শাবাত মানে সবজি পোলাও। আমার মনে হয় তাঁর যুক্তি সঠিক। শাক দিয়ে পোলাও কখনও দেখেনি। শাবাত পোলাও ঘিয়ে ভাজার পর সেদ্ধ ডিমের সাদা অংশ জাফরান দিয়ে রাঙিয়ে টুকরো টুকরো করে মেশানো হতো। শাবাত পোলাও মানে সবজি পোলাও। আর এর সঙ্গে মাংস মেশানো হলে তা হতো মালগুবা।

এক ডেকচি থেকে তিন চার স্বাদের ও রঙের পোলাও করা হতো যা প্রিয় ছিল পুরনো আর্মেনী বা মুঘল পরিবারে। পোলাওতে চর্বিহীন খাসির মাংস, ফুলকপি, গাজর, শালগম ও টমেটো ঘি দিয়ে ভেজে দম দেয়া হতো। এর সঙ্গে পালং শাক, ডিম সেদ্ধ করে ঘি দিয়ে ভেজে লালচে করে টুকরো করে মিশিয়ে দিলে হয়ে যেত নার্গিসি পোলাও।

ঢাকাই বোরহানি 

ঢাকার পোলাওর একটি বৈশিষ্ট্য ছিল। লং, এলাচি, আর ঘি দিয়ে ইয়াখনি বা যে সিরা হতো, পানির বদলে তা দিয়ে চাল গলানো হতো। খাসির মাংস বা মোরগ পরিষ্কার করার পর বাতাসে রাখা হতো। তারপর ঘিয়ে তা ভুনা করে পোলাও আর মাংস দম দেয়া হতো। ফলে চালের সুগন্ধ নষ্ট হতো না বা ভাংতো না। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাগেশ্বরী অধ্যাপক হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর বড় ভাই শাহেদ সোহরাওয়াদী রান্নার ওপর লেখা এক বইয়ে ঢাকার এই পোলাওর প্রশংসা করে লিখেছেন- “ঢাকার মোরগ পোলাওর স্বাদ তুলে। ধরা যায় না। সেটি একটি অভিজ্ঞতা, সে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়।”

পোলাওর সঙ্গে তুর্কি কোরমার প্রসঙ্গ আসবেই। তুর্কি ও ঢাকাই কোর্মার মধ্যে পার্থক্য এনেছিল মরিচের ব্যবহার। তুর্কিরা মরিচ ব্যবহার করেন না। ঢাকাই কোরমার জন্য ব্যবহারেরও পার্থক্য আছে। এখানে গোলমরিচের গুঁড়া ব্যবহৃত হয়। তবে পার্থক্যটা এনেছে কাঁচা মরিচ।এই কোরমা আবার রেজালায় পরিণত হয় যখন তাতে মালাই দিয়ে দম দেয়া হতো। এই কোরমায় বিভিন্ন উপাদানও মেশানো হতো। হাকিম হাবিব লিখেছেন, বাদাম দেয়া হলে তা হতো বাদামের কোরমা। মালাই এর কোরমায় মাংসের রং অবিকৃত থাকত।

মুঘলরা মরিচ ব্যবহার করতেন না। কিন্তু স্থানীয়রা মরিচ পছন্দ করতেন। কোরমা ঢাকাই কোরমা হলো এই মরিচ ব্যবহারের জন্য। কাঁচা মরিচের সব বিচি ফেলে দুধে ভিজিয়ে রাখা হতো। তারপর দুধ সহ মরিচ কোরমায় দিয়ে রেজালা বানানো হতো। কানিজ-ই বাতুল উল্লেখ করেছেন, রেজালা শব্দটির উৎপত্তি রেজাল থেকে যার বাংলা অর্থ নিম্নবিত্ত। অর্থাৎ, উচ্চবিত্ত বা মধ্যবিত্তের খাবার ছিল না রেজালা বা রজিলা। এর রান্নার প্রণালীও তিনি উল্লেখ করেছেন।

(চলবে)

পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি- ৫৮)

পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি- ৫৮)