০১:০৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অ্যাপলের ভারতের সাফল্য

চীনের বাইরে নতুন কৌশল

চীনে আইফোন বিক্রি কমে যাওয়ার পর অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক ভারতের বাজারে নজর দেন। ২০১৬ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের এক বছর পর অ্যাপল সীমিত পরিসরে ভারতে আইফোন সংযোজন শুরু করে। পরে যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক হুমকি এবং চীনে মহামারির কারণে উৎপাদন ব্যাহত হলে কুক সরবরাহকারীদের ভারতে বিকল্প উৎপাদন কেন্দ্র গড়তে উৎসাহিত করেন।

উৎপাদন সক্ষমতার বৃদ্ধি

ভারত এখন চীনের বাইরে একমাত্র দেশ যেখানে বৃহৎ পরিসরে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে আইফোন তৈরি হচ্ছে। আগামী দুই বছরে দুটি নতুন উৎপাদন কেন্দ্র চালু হলে ভারতের উৎপাদন ক্ষমতা দ্বিগুণ হবে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া বেশিরভাগ আইফোনই ভারতের কারখানায় তৈরি। টেক ইনসাইটসের হিসাবে ২০২৫ সালের মধ্যে বৈশ্বিক উৎপাদনে ভারতের অংশ ১৪ শতাংশ থেকে দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

Apple's pricey iPhones out of China's new subsidy scheme as ceiling capped at US$818 | South China Morning Post

চীনের প্রভাব ও চ্যালেঞ্জ

দুই দশকের বিনিয়োগ ও পরিকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে চীন যে উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করেছে, ভারত এখনো সেই পর্যায়ে পৌঁছায়নি। অ্যাপলের সরবরাহ চেইনের ১৫০টির বেশি প্রধান প্রতিষ্ঠান চীনে রয়েছে, কিন্তু ভারতে মাত্র ১৪টি। চীনের চাপের কারণে ভারতীয় কারখানায় যন্ত্রপাতি পাঠানো ও প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়ায় বিলম্ব ঘটছে।

ভারতের প্রস্তুতি ও বিনিয়োগ

ভারত শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে দক্ষ কর্মী তৈরি করেছে এবং স্মার্টফোন উৎপাদনে ভর্তুকি ঘোষণা করেছে। তামিলনাড়ুর ফক্সকন কারখানায় প্রায় ৪০,০০০ কর্মী (যার ৮০ শতাংশ নারী) তিন শিফটে কাজ করেন। নতুন দুই উৎপাদন কেন্দ্র চালু হলে ১,৫০,০০০ কর্মসংস্থান হবে। রাজ্য সরকার কর্মীদের জন্য আবাসন, কারখানার কাছে বিমানবন্দর নির্মাণ এবং বিদেশি বিনিয়োগের জন্য জমি অধিগ্রহণ করছে। টাটা গ্রুপও আইফোন সংযোজন শুরু করতে যাচ্ছে।

iPhone 17 tipped to receive big design overhaul, but it could miss out on this feature

উৎপাদনের নতুন ধাপ

বর্তমানে ভারত মূলত শেষ পর্যায়ের সংযোজন করছে, যা কম মূল্য সংযোজনের ধাপ। উচ্চপ্রযুক্তি উপাদান যেমন ক্যামেরা ও চিপ উৎপাদন এখনো চীনের দখলে। তবে আইফোন প্রো মডেল তৈরি শুরু হওয়া ভারতের প্রতি অ্যাপলের আস্থার ইঙ্গিত। ভবিষ্যতে আইফোন ১৭-এর বেস মডেলের নকশা প্রস্তুতির কিছু অংশ ভারতে করার পরিকল্পনা রয়েছে।

সামাজিক প্রভাব ও কর্মপরিবেশ

ফক্সকন ভারতে মূলত নারী কর্মী নিয়োগ করছে, যা দেশের অনেক অংশে বিরল। কর্মীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় হোস্টেলের মতো ডরমেটরি, বিনোদন ও বাজারের ব্যবস্থা রয়েছে। শ্রমিক অসন্তোষ কমাতে খাদ্য ও থাকার মান উন্নত করা হয়েছে।

সরকারের ভর্তুকি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ভারত ২.৭ বিলিয়ন ডলারের উৎপাদন ভর্তুকি ঘোষণা করেছে, তামিলনাড়ুও সমপরিমাণ অনুদান দিচ্ছে। ফক্সকন তামিলনাড়ুতে ১.৫ বিলিয়ন ডলারের নতুন কারখানা করছে, যেখানে ১৪,০০০ কর্মী কাজ করবেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে অ্যাপল ভারতে সরবরাহ চেইনের বড় অংশ গড়ে তুলতে পারবে।

ভারত চীনের বিকল্প হতে না পারলেও, এটি অ্যাপল ও অন্যান্য প্রযুক্তি নির্মাতাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন কেন্দ্র হয়ে উঠছে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, সরকারি সহায়তা এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ভারত বৈশ্বিক স্মার্টফোন উৎপাদনে বড় ভূমিকা নিতে প্রস্তুত হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অ্যাপলের ভারতের সাফল্য

০৪:৫৮:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫

চীনের বাইরে নতুন কৌশল

চীনে আইফোন বিক্রি কমে যাওয়ার পর অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক ভারতের বাজারে নজর দেন। ২০১৬ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের এক বছর পর অ্যাপল সীমিত পরিসরে ভারতে আইফোন সংযোজন শুরু করে। পরে যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক হুমকি এবং চীনে মহামারির কারণে উৎপাদন ব্যাহত হলে কুক সরবরাহকারীদের ভারতে বিকল্প উৎপাদন কেন্দ্র গড়তে উৎসাহিত করেন।

উৎপাদন সক্ষমতার বৃদ্ধি

ভারত এখন চীনের বাইরে একমাত্র দেশ যেখানে বৃহৎ পরিসরে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে আইফোন তৈরি হচ্ছে। আগামী দুই বছরে দুটি নতুন উৎপাদন কেন্দ্র চালু হলে ভারতের উৎপাদন ক্ষমতা দ্বিগুণ হবে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া বেশিরভাগ আইফোনই ভারতের কারখানায় তৈরি। টেক ইনসাইটসের হিসাবে ২০২৫ সালের মধ্যে বৈশ্বিক উৎপাদনে ভারতের অংশ ১৪ শতাংশ থেকে দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

Apple's pricey iPhones out of China's new subsidy scheme as ceiling capped at US$818 | South China Morning Post

চীনের প্রভাব ও চ্যালেঞ্জ

দুই দশকের বিনিয়োগ ও পরিকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে চীন যে উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করেছে, ভারত এখনো সেই পর্যায়ে পৌঁছায়নি। অ্যাপলের সরবরাহ চেইনের ১৫০টির বেশি প্রধান প্রতিষ্ঠান চীনে রয়েছে, কিন্তু ভারতে মাত্র ১৪টি। চীনের চাপের কারণে ভারতীয় কারখানায় যন্ত্রপাতি পাঠানো ও প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়ায় বিলম্ব ঘটছে।

ভারতের প্রস্তুতি ও বিনিয়োগ

ভারত শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে দক্ষ কর্মী তৈরি করেছে এবং স্মার্টফোন উৎপাদনে ভর্তুকি ঘোষণা করেছে। তামিলনাড়ুর ফক্সকন কারখানায় প্রায় ৪০,০০০ কর্মী (যার ৮০ শতাংশ নারী) তিন শিফটে কাজ করেন। নতুন দুই উৎপাদন কেন্দ্র চালু হলে ১,৫০,০০০ কর্মসংস্থান হবে। রাজ্য সরকার কর্মীদের জন্য আবাসন, কারখানার কাছে বিমানবন্দর নির্মাণ এবং বিদেশি বিনিয়োগের জন্য জমি অধিগ্রহণ করছে। টাটা গ্রুপও আইফোন সংযোজন শুরু করতে যাচ্ছে।

iPhone 17 tipped to receive big design overhaul, but it could miss out on this feature

উৎপাদনের নতুন ধাপ

বর্তমানে ভারত মূলত শেষ পর্যায়ের সংযোজন করছে, যা কম মূল্য সংযোজনের ধাপ। উচ্চপ্রযুক্তি উপাদান যেমন ক্যামেরা ও চিপ উৎপাদন এখনো চীনের দখলে। তবে আইফোন প্রো মডেল তৈরি শুরু হওয়া ভারতের প্রতি অ্যাপলের আস্থার ইঙ্গিত। ভবিষ্যতে আইফোন ১৭-এর বেস মডেলের নকশা প্রস্তুতির কিছু অংশ ভারতে করার পরিকল্পনা রয়েছে।

সামাজিক প্রভাব ও কর্মপরিবেশ

ফক্সকন ভারতে মূলত নারী কর্মী নিয়োগ করছে, যা দেশের অনেক অংশে বিরল। কর্মীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় হোস্টেলের মতো ডরমেটরি, বিনোদন ও বাজারের ব্যবস্থা রয়েছে। শ্রমিক অসন্তোষ কমাতে খাদ্য ও থাকার মান উন্নত করা হয়েছে।

সরকারের ভর্তুকি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ভারত ২.৭ বিলিয়ন ডলারের উৎপাদন ভর্তুকি ঘোষণা করেছে, তামিলনাড়ুও সমপরিমাণ অনুদান দিচ্ছে। ফক্সকন তামিলনাড়ুতে ১.৫ বিলিয়ন ডলারের নতুন কারখানা করছে, যেখানে ১৪,০০০ কর্মী কাজ করবেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে অ্যাপল ভারতে সরবরাহ চেইনের বড় অংশ গড়ে তুলতে পারবে।

ভারত চীনের বিকল্প হতে না পারলেও, এটি অ্যাপল ও অন্যান্য প্রযুক্তি নির্মাতাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন কেন্দ্র হয়ে উঠছে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, সরকারি সহায়তা এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ভারত বৈশ্বিক স্মার্টফোন উৎপাদনে বড় ভূমিকা নিতে প্রস্তুত হচ্ছে।