রায়ের তাৎপর্য ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
১ আগস্ট ইউরোপীয় বিচার আদালত (ইসিজে) এমন এক রায় দিয়েছে, যা নিয়ে ইতালির রাজনীতিবিদরা একমত যে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে ভালো না খারাপ—সে বিষয়ে তাদের মতভেদ রয়েছে। বিরোধী দল এটিকে “একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত” বলে আখ্যা দিয়েছে। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির কার্যালয় দাবি করেছে, এটি অবৈধ অভিবাসন রোধ ও সীমান্ত সুরক্ষায় সরকারের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করবে। রায়টির প্রভাব শুধু ইতালিতেই নয়, ইউরোপের অন্যান্য দেশেও পড়তে পারে।
ইতালির বিতর্কিত আলবেনিয়া পরিকল্পনা
গত বছর ইতালি সমুদ্রে উদ্ধার হওয়া এবং যাদের আশ্রয়ের আবেদন দুর্বল মনে হয়েছে, তাদের সরাসরি আলবেনিয়ার ক্যাম্পে পাঠানো শুরু করে। এসব অভিবাসীকে দ্রুত প্রক্রিয়ায় আশ্রয় আবেদন যাচাইয়ের ব্যবস্থা করা হয়, যাতে অধিকাংশের আবেদন বাতিল হয়ে দ্রুত ফেরত পাঠানো যায়। সরকারের তথাকথিত নিরাপদ দেশ তালিকায় বাংলাদেশ ও মিশরের মতো দেশও অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা নিয়ে তীব্র বিতর্ক হয়। ইতালির আদালত এই পরিকল্পনা ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইনের বিরোধী হতে পারে বলে রায় দিয়ে আলবেনিয়ায় পাঠানো অভিবাসীদের ফেরত আনতে নির্দেশ দেয়।

ক্যাম্পের বাস্তব চিত্র ও ব্যর্থতা
আলবেনিয়ায় দুটি ক্যাম্পের মধ্যে একটিতে অভিবাসীদের গ্রহণ এবং অন্যটিতে আটক রাখার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু আটক ক্যাম্পে বর্তমানে মাত্র ২৭ জন রয়েছে এবং ৪ আগস্ট পর্যন্ত মাত্র ৩৭ জনকে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়েছে। এ কারণে পরিকল্পনাটি সরকারের জন্য বিব্রতকর হয়ে উঠেছে এবং বিরোধীরা এটিকে করদাতাদের অর্থের অপচয় বলে সমালোচনা করছে। অনুমান করা হচ্ছে, ২০২৮ সালের শেষ পর্যন্ত এই পরিকল্পনার খরচ হবে প্রায় ৬৮০ মিলিয়ন ইউরো (৭৯০ মিলিয়ন ডলার)।
আদালতের যুক্তি ও প্রভাব
ইসিজে রায়ে জানায়, কোনো দেশকে নিরাপদ তালিকায় রাখতে হলে তার পুরো জনগোষ্ঠীর জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এই শর্ত পূরণ না হওয়ায় বাংলাদেশি দুই আশ্রয়প্রার্থীর ক্ষেত্রে ইতালির সিদ্ধান্ত অবৈধ বলে আদালত রায় দেয়। এর ফলে এড্রিয়াটিক সাগর পেরিয়ে অভিবাসী পাঠানোর পরিকল্পনা স্থগিত হয়ে যায় এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশও এমন পরিকল্পনা নেওয়ার আগে সতর্ক হবে।
নতুন ইইউ চুক্তি ও সম্ভাব্য পরিবর্তন
আগামী জুনে কার্যকর হতে যাওয়া ইইউ-এর নতুন অভিবাসন ও আশ্রয় চুক্তি সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে কিছুটা নমনীয়তা দেবে। তারা কোনো দেশকে আংশিক নিরাপদ হিসেবে ঘোষণা করে নির্দিষ্ট অঞ্চল বা জনগোষ্ঠীকে ব্যতিক্রম হিসেবে রাখতে পারবে। এছাড়া, যেসব দেশের আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যানের হার বেশি, সেসব দেশের নাগরিকদের আবেদন দ্রুত প্রক্রিয়াকরণ সম্ভব হবে। ডেনমার্ক চায় এই শিথিল নিয়মগুলো চুক্তি কার্যকর হওয়ার আগেই চালু করতে। তবে নতুন নিয়ম কার্যকর হলেও আদালতের রায় পুরোপুরি উপেক্ষা করা যাবে না, কারণ নিরাপদ দেশ তালিকা অবশ্যই আদালতের পর্যালোচনার আওতায় থাকতে হবে এবং এর পক্ষে তথ্য প্রকাশ করতে হবে।

রায়ের সীমাবদ্ধতা ও অনিষ্পন্ন প্রশ্ন
রায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—এতে ইতালির বহির্দেশে আটক রাখার পরিকল্পনার বৈধতা নিয়ে কিছু বলা হয়নি। ইতালি কেন অভিবাসীদের আলবেনিয়ায় পাঠাতে এত দৃঢ়, তা পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। যেহেতু আলবেনিয়ার ক্যাম্পগুলো ইতালির ভূখণ্ড হিসেবে বিবেচিত, সেখানকার আইনি ক্ষমতা ইতালির অভ্যন্তরীণ ক্যাম্পের মতোই। তবে স্থানীয় আপত্তির কারণে ইতালিতে নতুন ক্যাম্প তৈরি কঠিন হওয়ায় সরকার এই পদ্ধতি নিয়েছে। পাশাপাশি, ইইউ-এর বাইরে পাঠানো হলে অভিবাসীরা ইউরোপে অনুপ্রবেশের সুযোগ কম পাবে—এমন মানসিক প্রভাবও সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
সামনে আইনি লড়াই অব্যাহত
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের অ্যাড্রিয়ানা তিডোনা উল্লেখ করেছেন, ইসিজের রায়ে বহির্দেশে আটক রাখার বৈধতা নিয়ে কিছু বলা হয়নি। তাই নতুন চুক্তি কার্যকর হলেও এ বিষয়ে আইনি লড়াই চলবে। ফলে ইউরোপে আশ্রয়প্রার্থীদের বহিষ্কার নিয়ে বিতর্ক এখানেই শেষ নয়।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















